শিরোনাম: |
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি
|
এম. উমর ফারুক : নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবি থেকে সরে এসেছে বিএনপি। এখন সামনে আনছে নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক সরকার’ ব্যবস্থা। এই প্রক্রিয়ায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেই বিএনপি। বিএনপির নীতি নির্ধারকরা বলছেন, আগামী নির্বাচনে ফলাফল যাই হোক না কেন, দলটি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে বলে ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় নির্বাচনে অংশ নিতে এখন থেকেই সবকুল রক্ষা করে চলার নীতির পথে হাঁটছে দলটি। আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়টি যখন চূড়ান্ত, তখন নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া এবং পরবর্তীতে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির দাবির প্রশ্নে দলটি বেশ কৌশলে এগুচ্ছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট ওই সিনিয়র নেতা বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরপর দু’বার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির নিবন্ধন বাতিল হওয়ার বিষয়টিও তাদের আলোচনা রয়েছে। তাই নবগঠিত কমিশন নিয়ে পুরোপুরি বিরোধিতা করবে না দলটি। এ প্রসঙ্গে দলটির কেন্দ্রীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ড দেখভাল করেন এমন একজন প্রভাবশালী সিনিয়র নেতা জানান, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন হয়েছে। এখন কিছুদিনের মধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক সরকার’ ব্যবস্থার রূপরেখা তুলে ধরা হবে। দলটির সিনিয়র এ নেতা নিশ্চিত করেন, এ মাসের শেষের দিকে দেশবাসীর সামনে খোদ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ‘সহায়ক সরকার’ ব্যবস্থার রূপরেখা দেবেন। এ ক্ষেত্রে ‘নতুন নির্বাচন কমিশন’ গঠনের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা দেয়ার মতোই সংবাদ সম্মেলন করে ‘সহায়ক সরকার’-এর রূপরেখা সম্পর্কিত নানা প্রস্তাবনা তুলে ধরবেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিতে বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, শুধু নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিরপেক্ষ হলেই চলবে না। এর পাশাপাশি একটি নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক সরকার’ দরকার। যে সরকার জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় কমিশনকে (ইসি) সব ধরনের সহযোগিতা দেবে। এছাড়া বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ‘সার্চ কমিটি’ ঘোষণার পর বিএনপি এই কমিটি নিয়ে মৃদু সমালোচনা করলেও যেমন কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। তেমনি ‘সার্চ কমিটির’ চলমান কার্যক্রম শেষে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ‘নতুন নির্বাচন কমিশন’ গঠন নিয়েও কৌশলী অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। এ দিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে দলটির অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী একটি রাজনৈতিক দল। আগামীকাল জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও, সেই নির্বাচনে অংশ নিতে আপত্তি নেই বিএনপির। তবে সেটি নির্বাচন হতে হবে, নির্বাচনের নামে তামাশা হলে চলবে না। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন ছাড়া দেশের বর্তমান সঙ্কট নিরসন সম্ভব নয় মন্তব্য করে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বিএনপি সংঘাত হানাহানি চায় না, শান্তিপূর্ণ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায়। যে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের চলমান গণতন্ত্রের সঙ্কট কেটে যাবে। তিনি আরও বলেন, বিএনপি যেহেতু একটি গণতান্ত্রিক দল। এক্ষেত্রে আগামী জাতীয় নির্বাচন যখনই হোক না কেন, সেই নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি অবশ্যই বিএনপি নেবে। তবে সেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে দেশে নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। আর তা হলো একটি কার্যকর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন। বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, কার্যত দেশে একটি রাজনৈতিক সঙ্কট চলছে, সেই সঙ্কট সমাধানের জন্যে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে সঙ্কট সমাধানের প্রথম ধাপ হতে পারে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন। জনতার মঞ্চের লোক দিয়ে নতুন ইসি সাজানো হয়েছে। তাই ইসি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেলে। গত ১৮ ডিসেম্বর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আলোচনার জন্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে বঙ্গভবনে সাক্ষাত্ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ সময় দেশের রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক সরকার’-এর স্থায়ী ব্যবস্থা প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার কথা রাষ্ট্রপতিকে জানান তিনি। আর বঙ্গবভনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপকালে বিএনপি চেয়ারপারসন নতুন ইসি গঠন নিয়ে তার দলের ভাবনা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেন। লিখিতভাবে সেসব প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ তুলে ধরার পাশাপাশি সে সময় খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতিকে বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানে নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক সরকার’-এর অধীনে একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দরকার। এ জন্য আগামী দিনে ব্যাপক জাতীয়ভিত্তিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি স্থায়ী ব্যবস্থা প্রণয়ন প্রয়োজন। এর আগে গত ১৮ নভেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য তার প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। সেদিন তিনি ‘সহায়ক সরকার’-এর রূপরেখা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, যথাসময়ে ওই সরকারের রূপরেখা তুলে ধরা হবে। |