মঙ্গলবার ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রতিবেদন
সুষম উন্নয়নে ভারত পাকিস্তানের চেয়েও এগিয়ে বাংলাদেশ
Published : Tuesday, 17 January, 2017 at 6:00 AM, Count : 739

এটি আমাদের বড় অর্জন, বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি মূল্যায়ন
- ড. জায়েদ বখত

বর্তমান সরকারের অর্থনীতি এবং আর্থিক কৌশলের সুফল এটি
- ড. আতিউর রহমান


রহমান আজিজ :
বিশ্বের উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোর সুষম উন্নয়ন সূচকে ভারত পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে অনেক এগিয়ে বাংলাদেশ। গত সোমবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ‘সুষম প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন প্রতিবেদন-২০১৭’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ)। এতে বলা হয়েছে, অধিকাংশ দেশই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর সুযোগ কাজে লাগাতে ও বৈষম্য কমাতে ব্যর্থ হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের সুষম উন্নয়ন বিশ্ব পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য ঘটনা। বিশ্বের উন্নয়নশীল ৭৯টি দেশের সুষম উন্নয়ন সূচক প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
এই সূচকে ভারত পাকিস্তানের অনেক উপরে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রকাশিত ওই সূচকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভালো অবস্থানে রয়েছে চীন (১৫তম) ও নেপাল (২৭তম)। এর পরেই  বাংলাদেশ (৩৬তম)। ভারতের (৬০তম) ওপরে রয়েছে পাকিস্তান (৫২তম)। ১২টি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে ডব্লিউইএফ। তবে এর মূলভিত্তি ধরা হয়েছে প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন, সুষম এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমতা ও টেকসই উন্নয়ন।
উন্নয়নশীল অর্থনীতির ৭৯ দেশের তালিকার শীর্ষে রয়েছে লিথুনিয়া। এরপরেই দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে আজারবাইজান ও হাঙ্গেরি। এ ছাড়া শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় রয়েছে পোল্যান্ড (চতুর্থ), রোমানিয়া (৫ম), উরুগুয়ে (ষষ্ঠ), লাটভিয়া (৭ম). পানামা (৮ম), কোস্টারিকা (৯ম) এবং চিলি (১০ম)। এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, এটি আমাদের বড় অর্জন। এর মাধ্যমে আমরা বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি মূল্যায়ন পেলাম। এ সাফাল্য ধরে রাখতে হবে এবং সতর্ক থাকতে হবে যেন গুটি কয়েক ব্যক্তির হাতে সব সম্পদ জমা না পড়ে।
রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র গবেষক ড. জায়েদ বখত বলেন, এটি একটি বড় অর্জন। এর মাধ্যমে আমরা বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি মূল্যায়ন পেলাম। তিনি বলেন, সাধারণত একটি দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়লে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। কিন্তু আমাদের দেশে এর উল্টো হয়েছে। প্রবৃদ্ধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ রাখা, দারিদ্র্যের হার কমানো, গ্রাম ও শহর অর্থনীতি চাঙ্গা, কৃষি, সেবা, শিক্ষা প্রায় সব সূচকই ভালো অবস্থানে নিয়ে গেছে সরকার। একই সঙ্গে সামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং নারীর ক্ষমতায়ন পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায় অনেক ভালো। সিনিয়র এ গবেষক বলেন, আমাদের প্রবৃদ্ধি ৬ থেকে ৭ শাতাংশে এসেছে। আগামীতে ৮ শতাংশে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে সরকারকে ব্যয় কমাতে হবে, শিক্ষার মান বাড়ানো এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং  অনিশ্চিয়তা দূর করতে হবে। তাহলে আমাদের কেউ আটকাতে পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, বর্তমান সরকারের অর্থনীতি এবং আর্থিক কৌশল গ্রহণের সুফলের বহির্প্রকাশ এটি। সরকারের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় রয়েছে এটি। সেখানে নিম্ন আয়ের মানুষের বিষয়ে অর্থাত্ গ্রামীণ অর্থনীতি, অবকাঠামোর উন্নয়ন, মোবাইল ব্যাংকিং, শিক্ষা, স্বাস্থ্যখাতে বিশেষভাবে নজর দেয়া হয়েছে। আতিউর রহমান বলেন, আমাদের প্রবৃদ্ধি বিশ্ব অর্থনীতিতে ভালো অবস্থানে রয়েছে। এটি গুণাগুণমানের। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমকি ৭ শতাংশ এবং ভারতের সাড়ে ৬ শতাংশ। সেখানে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ওপরে হবে বলে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের অধিকাংশ সূচকের অবস্থা ভালো। এ সাফাল্য ধরে রাখতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে যেন গুটিকয়েক ব্যক্তির হাতে সব সম্পদ জমা না পড়ে। সরকারের যে স্বপ্ন মধ্যম আয়ের দেশ গড়ার। যেটি আর বেশি দূরে নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। ড. আতিউর বলেন, এ সফলতার জন্য সরকারের পাশাপাশি সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা, ব্যাংকিং সেবাতে শহর ও গ্রামের মধ্যে বৈষম্য দূর করা। কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ, ১০ টাকার হিসাব, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি, মোবাইল ব্যাংকিং ছিল এ সাফাল্যের একটি অংশ। সাবেক এ গভর্নর বলেন, গত ৮-১০ বছরে দেশের সার্বিক অবস্থা বদলে গেছে। গ্রামের মানুষের অভাব কমে গেছে। সে তুলনায় নগরে এখনও দরিদ্রের হার বেশি। আর্থিক খাতে অন্তর্ভুক্তির কৌশল, উত্পাদনশীল মুদ্রানীতির কৌশলে এটি হয়েছে।  তিনি আরও বলেন, সরকারের স্বাস্থ্যখাতে সফলতা আরেকটি কারণ। আমাদের দেশে মানুষের গড় আয়ু ৭২ বছর। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত আমাদের চেয়ে গড় আয়ু ৫-৬ বছর কম। পাকিস্তানে ৪ বছর কম । জানা গেছে,  আওয়ামী লীগ সরকার যে রূপকল্প ঘোষণা করেছে তাতে ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছানোর লক্ষ্য রয়েছে। তবে তার আগে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছাতে হবে। এজন্য একাধিকবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ২০১৮ সালে এলডিসি তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য জাতিসংঘে আবেদন জানাবে বাংলাদেশ। আবেদন গৃহীত হলে ২০১৮ সালেই উন্নয়নশীল দেশে পৌঁছানোর লক্ষ্য অর্জন হবে। তবে এর আগেই আমরা এ স্বীকৃতি পেলাম।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft