শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪ ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ভারতে পাট রফতানিতে শুল্ক
আপিল নিয়ে তিন পক্ষের টানাটানি
Published : Sunday, 15 January, 2017 at 6:00 AM, Count : 703

বর্তমান প্রতিবেদক : বাংলাদেশের পাটপণ্য রফতানিতে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করেছে ভারত। দেশটির ডিরেক্টরেট জেনারেল অব অ্যান্টি ডাম্পিং অ্যান্ড অ্যালাইড ডিউটিজের (ডিজিএডি) সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ৫ জানুয়ারি তাদের রাজস্ব বিভাগ একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। ফলে ওইদিন থেকে এর কার্যকারিতা শুরু হয়ে গেছে। তবে ৯০ দিনের মধ্যে ভারত সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবে বাংলাদেশের এ খাতের ব্যবসায়ীরা। তবে আপিল করা নিয়ে মন্ত্রণালয়, সচিব ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তিনজন দিচ্ছেন তিন ধরনের মতো।
কার কাছে আপিল করা হবে আর কারা আপিল করবে তা নিয়েই চলছে ‘টানাটানি’। পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কাছে (ডব্লিউটিও) এ আপিল করা হবে। বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএমএ) এ আপিল করবে। তবে প্রতিমন্ত্রীর এ কথার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থার কাছে নয়, ভারতের যে সংস্থা এ কর আরোপ করেছে বা রায় দিয়েছে, তাদের কাছে আপিল করতে হবে। আর পাট ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, প্রস্তুতি না থাকায় আপিলে আগ্রহ নেই তাদের। তাহলে কার কাছে, কে আপিল করবে এ নিয়ে এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রসঙ্গত, কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ পণ্যের উত্পাদন খরচের যে হার, একই পণ্য তার থেকে কম দামে যদি কোনো দেশ রফতানি করে, তার ওপর যে কর আরোপ করা হয় তাকে অ্যান্টি ডাম্পিং বলে। অভ্যন্তরীণ শিল্প ও পণ্যের সুরক্ষার জন্যই এটি করা হয়ে থাকে। জানা গেছে, ভারতে পাট উত্পাদন খরচের চেয়েও কম দামে পাট ও পাটপণ্য রফতানি করত বাংলাদেশের রফতানিকারকরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের স্থানীয় বাজার ও ব্যবসায়ীদের সুরক্ষার লক্ষ্যে ২০১৪ সালে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নেন দেশটির পাটপণ্য উত্পাদনকারীরা। আনুষ্ঠানিক অভিযোগের পর এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করে ভারতের ডিজিএডি নামের সংস্থা। প্রায় এক বছর তদন্তের পর ২০১৫ সালের অক্টোবরে শুল্ক আরোপের সুপারিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি। পরবর্তী সময়ে ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে এ নিয়ে শুনানি করে ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে ৫ জানুয়ারি ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন রাজস্ব বিভাগ শুল্ক আরোপের বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে আগামী পাঁচ বছরের জন্য অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করেছে দেশটির সরকার। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বাংলাদেশের রতানিকারক প্রতিষ্ঠানের ওপর প্রতি টন পাটপণ্যে সর্বনিম্ন ২০ দশমিক ৩৫ ডলার থেকে সর্বোচ্চ ৩৫১ দশমিক ৭২ ডলার অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশ ও নেপাল থেকে পাটপণ্য ভারতে রফতানির ফলে ভারতের স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করলেও ক্ষতির পরিমাণ বা কোনো তথ্য তাতে উপস্থাপন করতে পারেনি। ভারত সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে (৫ জানুয়ারি থেকে) আপিল করার সুযোগ রয়েছে। এ নিয়ে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। গত মঙ্গলবার রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ভারতে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানিতে অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) আপিল করা হবে। এ আপিল করবে, বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএমএ)। এতে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে সরকার। আর সরকারের উদ্যোগের বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পদেক্ষপ নেয়া হবে। ভারত যা করেছে তা বৈধভাবেই করেছে।
আইনগত, কূটনৈতিক এবং যেভাবে সম্ভব সেভাবেই বিষয়টি মোকাবিলা করা হবে। তবে প্রতিমন্ত্রীর এ বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন এবং বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএমএ) সাবেক চেয়ারম্যান ও জনতা জুট মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হক। হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জানান, ভারত সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে বিষয়টি সমাধানে জন্য আপিলের পথ রয়েছে। মিল মালিকরা বা ব্যবসায়ীরা এটি ভারতের সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিকট করবেন। তাদের সহায়তা করবে, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো।  এ আপিল কি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) করতে হবে’ এ প্রশ্নে তিনি জানান, না এর সঙ্গে ডব্লিউটিওর কোনো সংযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে তাদের কিছু করার নাই। তারা যে দাবিতে শুল্ক আরোপ করেছে, এটি আইনি সিদ্ধ না হলে তা ডব্লিউটিও পর্যবেক্ষণ করতে পারে। অন্য কিছু নয়। আর বাংলাদেশ সরকার এখন কূটনৈতিকভাবে এটির সমাধানের চেষ্টা করবে। আপিল করতে হবে ভারতের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে। একই মত দেন জনতা জুট মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হক। বিজেএমএ আপিল করছে কি না, সে বিষয়টি তার জানা নেই বলে জানান।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft