শিরোনাম: |
শিমুল-রিজভীকে নিয়ে বিএনপিতে ক্ষোভ
|
• রিজভীকে ব্রিফিং বন্ধ করতে হবে, • পাল্টাতে হবে বিশেষ সহকারী: ডা. জাফরুল্লাহ এম. উমর ফারুক : বিএনপিতে বহুল আলোচিত-সমালোচিত সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এই দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে দলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নগ্ন হস্তক্ষেপসহ অনেক অভিযোগ রয়েছে। বিগত ইউপি, উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে নানা কৌশলে পছন্দের লোকদের মনোনয়ন দেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। দলের উপদেষ্টা, স্থায়ী কমিটি এবং সিনিয়র নেতারাও দারুণভাবে ক্ষুব্ধ এই দুই নেতার কর্মকাণ্ডে। কিন্তু দলের চেয়ারপারসনের বিশেষ আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলতে সাহস করেন না। এসব কিছু জানার পরও দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয়ায় সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রকাশ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিউিটশনের হল রুমে দুটি গ্রন্থের প্রকাশনা উত্সবে বিএনপির বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত গণস্বাস্থ্য বোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে নিত্যদিন ব্রিফিং করার প্রবণতা থেকে বের হতে হবে। তিনি বলেন, দলীয় কার্যালয়ে বিএনপি নেতা রিজভীর সংবাদ সম্মেলন এক নিয়মিত চিত্র। প্রতি সপ্তাহেই তিনি কোনো না কোনো বিষয়ে কথা বলেন। কখনো কখনো একই দিন একাধিকবার ব্রিফিং ডাকেন। এমনকি দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কোনো বিষয়ে কথা বলার পর একই বিষয়ে রিজভীর ব্রিফিং করার উদাহরণও আছে। জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, রিজভী সাহেবকে প্রতিদিন প্রেস কনফারেন্স ডাকলে চলবে না। আজ এখানে আসার আগে একজনের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। আমি এখানে আসছি জেনে তিনি বলেছেন, সেখানে রিজভী সাহেব থাকেন কি-না, যদি তিনি থাকেন তাহলে তাকে বলবেন তিনি যেন প্রতিদিন সংবাদ ব্রিফিং না ডাকেন। জাফরুল্লাহ বলেন, এটি আমার কথা না, আমার আত্মীয়ের কথা। পরে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র হত্যা করেছে। তারা বিরোধী দলের সভা-সমাবেশ করার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু এটাকে অজুহাত দিয়ে রিজভী সাহেবকে বিবৃতি দেয়া বন্ধ করতে হবে। সরাসরি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না থাকলেও নানা সময়ে বিএনপির রাজনীতির ভুলভ্রান্তি, আন্দোলন নিয়ে কথা বলে আলোচনায় এসেছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বিএনপিকে তিনি আন্দোলনে নামার পরামর্শও দিয়ে আসছেন। তিনি বলেন, উনাকে (খালেদা) রাস্তায় নামতে হবে। কমিটিতে যারা আছেন সেসব নেতারা রাস্তায় বসে পড়ুন। মৌন মিছিল করুন। জনগণের কাছে যান। খালেদা জিয়াকে শিমুল বিশ্বাসকে বাদ দিয়ে অন্য একজন সহকারী নেয়ার পরামর্শ দেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, তাকে হতে হবে একজন মহিলা। তিনি প্রতিদিন সকালে তার (খালেদা জিয়া) বাসায় যাবেন। একসঙ্গে ব্রেকফাস্ট করবেন। পরে দরজার সামনে বসে নেতাকর্মীদের সঙ্গে চেয়ারপারসন কথা বলবেন। যারা কারাগারে আছে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলবেন। দেখবেন কীভাবে জাগরণ সৃষ্টি হয়। বুঝতে হবে বিএনপির জন্য যেমন বেগম খালেদা জিয়াকে প্রয়োজন, তেমনি তারও কর্মীদের প্রয়োজন। বিএনপিকে পাল্টানোর পরামর্শ দিয়ে এই বুদ্ধিজীবী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যা শুনতে চায় সেসব কথা বলুন। বিএনপির ধারণা তারা সবকিছু জানেন। তাদের অহমিকা ছাড়তে হবে। কথা বলার আগে অন্যান্য বিরোধী দলসহ ছোটখাটো রাজনৈতিক দল, বিশিষ্টজনদের সঙ্গে আলোচনা করে কথা বলার অভ্যাস করতে হবে। জিয়াউর রহমান সব সময় বিজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলতেন। পরে নিজে বুঝে কথা বলতেন। জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সব দায়-দায়িত্ব তাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার ওপর অর্পণ করে তারা (বিএনপি নেতারা) খুব ভুল করছেন। এ সময় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। গত ১৪ই অক্টোবর দু’দিনের সফরে ঢাকা আসেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ওই দিন বিকেলে হোটেল লা-মেরিডিয়ানে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। ওই প্রতিনিধিদলের বৈঠকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে একই কাতারে বসতে দেখা যায় ফেরারি আসামি শিমুল বিশ্বাসকে। বিএনপির কোনো দায়িত্বশীল পদে না থেকেও হাইপ্রোফাইল ওই বৈঠকে দলের ভেতরে বিতর্কিত শিমুল বিশ্বাসের উপস্থিতি নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। সমালোচনার ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও। গুলশান কার্যালয় সূত্র জানায়, শিমূল বিশ্বাসের নামে মোট ৭২টি মামলা। এর মধ্যে ৩৪টি মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। তিনি সর্বশেষ দেড় বছর আগে একটি মামলায় হাজিরা দেয়ার জন্য আদালতে গিয়েছিলেন। এরপর থেকে তিনি পুলিশের কাছে পলাতক। এসব মামলায় গ্রেফতার এড়ানোর জন্য এক বছরের বেশি সময় ধরে তিনি গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসভবনে বসবাস করছেন। যদিও খালেদা জিয়ার সঙ্গে গুলশান কার্যালয়সহ সব জায়গায় সফরসঙ্গী থাকেন শিমুল বিশ্বাস। তবে নেতাকর্মীদের রোষানল থেকে বাঁচার জন্য একাকী কখনো প্রকাশ্যে আসেন না শিমুল বিশ্বাস। কিন্তু এবার খালেদা জিয়া সৌদি আরব যাওয়ার পর তিনি কোথায় ছিলেন, তা নিয়েও দলের মধ্যে কানাঘুষা রয়েছে। অনেকে মনে করছেন, তিনি সরকারের ছত্রছায়ায় আত্মগোপনে ছিলেন। বিএনপির তৃণমূল নেতারা অভিযোগ করে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে বৈঠকের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ফাঁস করতেই ফেরারি আসামি হওয়া সত্ত্বেও তাকে বৈঠকে অংশ নেয়ার সুযোগ দিয়েছে। দুর্ভেদ্য নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে কীভাবে একজন পলাতক আসামির সঙ্গে বৈঠক করেছেন তাও নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ ধরনের হাইপ্রোফাইল বৈঠকে একজন পলাতক আসামিকে প্রতিনিধিদলে রাখায় বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক দূরদর্শিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। গত ১৮ ডিসেম্বর নতুন ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে খালেদা জিয়ার সংলাপে যান ফেরারি আসামি শিমুল বিশ্বাস। এ নিয়ে দলের ভেতরে বাইরে ব্যাপক সমালোচনা হয়। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে অনুরোধ করব আপনি আর সংবাদ সম্মেলন ডাকবেন না, বিবৃতি দিবেন না। রিজভী কারো সঙ্গে আলোচনা না করেই সংবাদ সম্মেলন ডাকেন এবং বিবৃতি দিয়ে বেড়ান। এগুলো থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কারণ বিএনপির ভবিষ্যত্ উজ্জ্বল নয়, তাদের আরও দীর্ঘ সময় বক্তব্য দিয়েই বেড়াতে হবে, সেটাও সংবাদ সম্মেলনে। তিনি বলেন, বিএনপিকে বড় দলের অহমিকা ছাড়তে হবে। আজকের বিএনপি যে অবস্থায় আছে তাকে বড় দলের অহমিকা ছেড়ে দেয়া উচিত। সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত। নিজেদের দলের পরিকল্পনা তৈরি করা দরকার। বিএনপির নেতাদের এত পণ্ডিত ভাবা ঠিক নয়। তিনি বলেন, দলের সব সিদ্ধান্ত খালেদা জিয়ার উপর ছাড়লে ঠিক হবে না। খালেদা জিয়া না থাকলে বিএনপি চলবে এটি যেমন সত্য তেমনি উনি (খালেদা জিয়া) রাস্তায় না নামলে বিএনপি কখনোই ক্ষমতায় যাবে না। বিএনপির প্রেস ব্রিফিং বন্ধ করে নেতাকর্মীদের একত্রিত করে রাস্তায়, প্রতিটি ওয়ার্ডে সমাবেশ আন্দোলন করতে হবে। খালেদা জিয়ার শিমুল বিশ্বাস ছাড়া আরেকজন মহিলা সহকারী দরকার। যিনি সকাল ৮টায় কার্যালয়ে যাবেন নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলবেন। যেসব নেতাকর্মী জেলে আছে তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে হবে। মনে রাখতে হবে বিএনপির জন্য যেমন খালেদা জিয়া গুরুত্বপূর্ণ তেমনি কর্মী ছাড়া বিএনপি ক্ষমতায় যাবে না। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীদের জিয়াউর রহমানের জীবনী অনুসরণ করার জন্য আহ্বান জানান। বিএনপির নেতারা বই পড়েন না মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই অনুষ্ঠানে আসলে তারা কিছু শিখতে পারতেন। অথচ তাদের ‘বিএনপি’ ধারণা তারা সবাই পণ্ডিত, সব জান্তা। এর জন্য শহীদ জিয়া যেমন সবার সঙ্গে পরার্মশ করতেন, তারা করেন না। |