শিরোনাম: |
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী
পঁচাত্তরের পরেই হত্যা ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু
|
বর্তমান প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশে শুরু হয়েছিল হত্যা, খুন, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পালা। থেমে যায় উন্নয়ন। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে ২৫ বছর আগেই বাংলাদেশ উন্নত হতো। বিএনপির বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদকে উসকে দেয়ার অভিযোগ এনে তিনি বলেন, ‘গণআদালতে’ তাদের বিচার হবে। তিনি জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, যারা জ্বালাও-পোড়াও করে দুই শতাধিক মানুষ হত্যা করেছে, দেশের সম্পদ ধ্বংস করেছে, তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা মানায় না। তারা যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমতায় বসিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অপমান করেছে, এ জন্যও তাদের বিচার হওয়া উচিত।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত আওয়ামী লীগের বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। বেলা ৩টা ২৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনসভাস্থলে উপস্থিত হন। এ সময় দলের সিনিয়র নেতারাও সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তব্য রাখেন। এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে দুপুরেই গোটা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। সমাবেশ স্থলে জায়গা না পেয়ে হাজার হাজার মানুষ অবস্থান নেয় টিএসসি ও শাহবাগ মোড় থেকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন পর্যন্ত রাস্তায়, রমনা পার্কে এবং শিশু একাডেমি এলাকাসহ বাংলা একাডেমি পর্যন্ত সড়কে। রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী বর্ণিল সাজে নৃত্যের তালে তালে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে তোলে পুরো এলাকা। লাখো মানুষের ভিড়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চারপাশের রাস্তায় থমকে যায় হাজার হাজার যানবাহন। দুপুর থেকে শুরু করে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে এর রেশ। ১০ জানুয়ারি বাঙালির ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। ১৯৭২ সালের এই দিনটিতেই বাংলার অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে ২৯০ দিন বন্দি থাকার পর ফিরে এসেছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তানি বাহিনীর যারা দোসর ছিল, যারা মা-বোনদের পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দিয়েছিল, যারা গণহত্যা চালিয়েছিল, যারা এ দেশের মানুষকে খুন করেছিল, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে ছারখার করেছিল, এই বাংলাদেশের কিছু কুলাঙ্গার ওই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে গ্রামের পথ দেখিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে গিয়েছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছিল। সেসব যুদ্ধাপরাধীর বিচার জাতির পিতা শুরু করেছিলেন। অনেকেই কারাগারে বন্দি ছিল, অনেকের নাগরিকত্ব বাতিল হয়েছিল। দুর্ভাগ্যের বিষয় ১৫ আগস্টের পর এই হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমান সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে সেই যুদ্ধাপরাধীদের মুক্ত করে দেয়। পরে তাদের এমপি-মন্ত্রী বানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের পর যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারা কখনো জাতিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দিতে চায়নি। কারণ তাদের দেহ এ দেশে থাকলেও মন পড়ে থাকত পাকিস্তানে। শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে ২৫-৩০ বছর আগেই বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত হতে পারত, সবাই সুখে শান্তিতে জীবনযাপন করতে পারত। জঙ্গিবাদে উসকানি দিয়েছে, বিচার হবে গণআদালতে: ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গিবাদের উত্থানের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, তারা জঙ্গিদের উসকে দিয়েছে। জনগণ তাদের বিচার করবে। গণআদালতে বিচার হবে। বাংলাদেশের মাটিতে জঙ্গিদের স্থান হবে না। বাংলাদেশের মাটিতে সন্ত্রাসীদের স্থান হবে না। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মাটিতে কখনো কোনো সন্ত্রাসের স্থান হবে না। তার জন্য এ দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ, মসজিদের ইমামসহ শিক্ষক, অভিভাবক সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এ পথে যেন কেউ না যায়, এর জন্য সেভাবেই মানুষকে শিক্ষা দিতে হবে, তারা যেন শান্তির পথে থাকে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইসলাম হলো শান্তির ধর্ম, সৌহার্দ্যের ধর্ম, ভ্রাতৃত্বের ধর্ম। ইসলাম কখনো মানুষ হত্যা শেখায় না। বিচার করবেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। শেষ বিচার তাঁর হাতে। কে ভালো করে না-করে তিনি বিচার করবেন। ইসলামে আত্মহত্যা মহাপাপ। অথচ আজকে যারা ধর্মের নামে সন্ত্রাস করছে অথবা আত্মঘাতী হচ্ছে; যারা মনে করে আত্মঘাতী হয়ে বেহেশতে চলে যাবে, তারা কখনো বেহেশতে যাবে না, তারা দোজখে যাবে। ইসলাম কখনো আত্মঘাতী হওয়া, মানুষ খুন করা কখনো প্রশ্রয় দেয় না। পালিয়ে বেড়ান, ব্যাপারটা কী?: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এতিমের টাকা চুরি করে খেয়েছেন। এতিমের নামে টাকা এসেছে। মামলায় হাজিরা দিতে যান। একদিন যান তো ১০ দিন যান না, পালিয়ে বেড়ান, ব্যাপারটা কী? এতেই তো ধরা পড়ে যায় যে চোরের মন পুলিশ পুলিশ। খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, তার কাছ থেকে রাজনীতি শিখতে হবে, গণতন্ত্র শিখতে হবে- সেটা বাংলাদেশের মানুষ কোনোভাবে মেনে নেবে না। আজকে দেশের মানুষ শান্তিতে আছে, স্বস্তিতে আছে। দেশের মানুষ সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখে। মানুষ যখন ভালো থাকে, তখন তার অন্তরজ্বালা সৃষ্টি হয়। এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্যের। তিনি বলেন, যারা মানুষ হত্যা করে এবং যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানায়, তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা শোভা পায় না। তারা সন্ত্রাসী-জঙ্গি। জঙ্গিদেরও তারা উসকে দিচ্ছে। বাংলার জনগণই একদিন তাদের বিচার করবে। গণ-আদালতে এদের বিচার হবে। কারফিউ দিয়ে দেশ চালাত জিয়া: আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, তখন বাংলাদেশে ১৯টি ক্যু হয়েছিল। পুরো রাত কারফিউ থাকত। জিয়াউর রহমান প্রতিরাতে কারফিউ দিয়ে দেশ চালাত। রাত ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ থাকত। এ দেশের মানুষের স্বাধীনভাবে চলার কোনো ক্ষমতাই ছিল না। মানুষের স্বাধীনতার ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হয়। মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে তাদের বিপথগামী করা হয়েছিল। তাদের পেটোয়া বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করে জিয়া তার রাজনৈতিক অভিলাষ পূরণ করার চেষ্টা করে। একদিকে সামরিক বাহিনী হত্যাযজ্ঞ চালায়, অন্যদিকে আমাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ধরে হত্যাকাণ্ড চালায়। এভাবে দেশের সবকিছু ধ্বংসের দিকে নিয় যায়। শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের পর যারাই ক্ষমতায় এসেছে, তারাই ক্ষমতাকে ভোগের বিষয় বানিয়েছে। নিজেদের আখের গুছিয়েছে। জাতিকে মাথা উঁচু করে চলতে দেয়নি। তারা বাংলাদেশের মানুষকে বঞ্চিত করেছে। তারা দিয়েছে খাম্বা-আমরা দিয়েছি বিদ্যুত্: শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দিয়েছি বিদ্যুত্, আর বিএনপি দিয়েছে খাম্বা। খাম্বা কেন? বিদ্যুত্ নেই, খাম্বা কিনে টাকা শেষ। খাম্বা ছিল বিএনপি নেত্রীর ছেলের কোম্পানি। খাম্বা বানাত আর খাম্বা দিত। রাস্তার পাশে শুয়ে আছে খাম্বা, বিদ্যুতের খবর নেই। এটাই ছিল বাংলাদেশের চেহারা। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন ১৫ হাজার ১৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদন করছি। আজকে বিদ্যুতের হাহাকার নেই। জনসভায় আরও বক্তব্য দেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক, দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসনাত ও সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, ঢাকা উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, যুবলীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী, কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা, জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসার, যুব মহিলা লীগের সভানেত্রী নাজমা আক্তার এবং ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন উপস্থিত ছিলেন জনসভায়। সমাবেশ উপলক্ষে দুপুরের পর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা পতাকা ও ব্যানার নিয়ে মিছিল করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসতে শুরু করেন। এদিকে সভামঞ্চ এবং সোহরাওয়ার্দীর আশপাশের এলাকায় নেয়া হয় কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা। জনসভা শেষ না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগ মোড় থেকে মত্স্য ভবন মোড়ের দু’পাশে এবং টিএসসির মোড় থেকে দোয়েল চত্বর মোড়ের দু’পাশের রাস্তা বন্ধ থাকবে জানিয়ে চালকদের বিকল্প পথ ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। জিপিও মোড়, প্রেসক্লাব, কাকরাইল মসজিদ মোড়, এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগন্যাল মোড়, দোয়েল চত্বরসহ বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়ায় গুলিস্তান, মতিঝিল, ফার্মগেট, মগবাজারসহ আশপাশের সড়কগুলোতে বিকেলে যানজট দেখা যায়। |