শিরোনাম: |
কলাপাড়ায় কারিগরি শিক্ষার দ্রুত প্রসার ঘটছে
|
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা : প্রস্তাবিত জেলা কলাপাড়ার সাগরপাড়ের জনপদের শিক্ষার্থীরা কারিগরি শিক্ষার দিকে এখন বেশি ঝুঁকছে। ঘটছে দ্রুত প্রসার। শিক্ষাজীবন শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি; এমন আকাঙ্ক্ষা নিয়েই কারিগরি শিক্ষায় শুরু হয়েছে নতুন দিগন্ত। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীরা এগিয়ে আসছে কারিগরি শিক্ষায়। প্রতিদিন এদের সংখ্যা বাড়ছে। কারিগরি কিংবা কর্মমুখী এ শিক্ষার মানও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। নবম শ্রেণির সাথী রানী, খুকুমনি, বন্যা ঘরামী, কাজী কবির উদ্দিন, শাকিল আহম্মেদ, সাগর খান ও মিজান জানায়, ইট বালুর মান যাচাই-বাছাই করতে পারছে তারা। একদিনে, একই সময় দেড় মিটারের বেশি ইটের গাথুঁনি করা ঠিক নয়। এর বেশি করলে মজবুত হয় না। এরা সবাই কারিগরি শাখার বিল্ডিং মেনটেনেন্সের শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থী দিপীকা, মার্জানা, বন্যা ঘরামী, একমি, তানজিলা, ফাতেমা তানজিলা, নিলয় হালদার, মলয় পাল, মহসিন, তামিম, রাকিব, সুব্রত ও সমর্থ জানায়, কারিগরি শিক্ষায় কর্মসংস্থান বেশি। তারা নিজেরাই হাতে-কলমে করে দেখায় কীভাবে ওয়েল্ডিং, ড্রিলিং, টার্নিং, থ্রেডিংসহ লেদ মেশিনে কাজ করতে হয়। প্রত্যেকেরই বাস্তবে এসব কাজ শেখার প্রচণ্ড উদ্যমী মানসিকতা রয়েছে। সবাই মনের মধ্যে পুষে রেখেছে ইঞ্জিনিয়ারিং লাইনে স্বাবলম্বী হওয়ার সুপ্ত বাসনা। এক সময় মেয়েরা এসব কর্মের মধ্যে পেশার স্বপ্ন দেখতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করত না। খুঁজে পেত না ভবিষ্যত্ জীবনের কোনো পথ। কিন্তু বিশ্বায়নের এ যুগে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়ে শিক্ষার্থীরা কর্মমুখী শিক্ষার মধ্য দিয়ে দেখছে জীবন গড়ার স্বপ্ন। ১৯৯৮ সালে মাত্র ২৬ শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে কলাপাড়ার খেপুপাড়া মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বর্তমানে এ বিদ্যালয়ে কারিগরি শাখায় রয়েছে ১৮২ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে মাত্র ৪০ জন মেয়ে। এক সময় কারিগরি শাখায় শিক্ষার্থী খুঁজতে হতো। একটি নেতিবাচক ধারণা রয়েছে কারিগরি শিক্ষার প্রতি। যারা কম মেধাবী তারাই এ বিভাগে পড়ছে। এখন দৃষ্টিভঙ্গির পবিবর্তন ঘটছে। খেপুপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কারিগরি কিংবা ভোকেশনাল শাখা থেকে উত্তীর্ণ হয়ে জার্মান, ইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে প্রকৌশলী হিসেবে অনেকে সুনামের সঙ্গে চাকরি করছেন এমন তথ্য দিলেন শিক্ষকরা। এখান থেকে পাস করে উচ্চশিক্ষা নিতে না পারলেও কেউ বেকার থাকেনি; এমন বহু উদাহরণ দেখালেন শিক্ষকরা। একসময় লেদ, ড্রিলিং, ওয়েল্ডিং কিংবা বিল্ডিং মেনটেনেন্স কাজ নারী শিক্ষার্থীরা করবে- এ চিন্তা করাও ছিল দুরুহ ব্যাপার। কিন্তু এখন এসব কাজ অনায়াসে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় পরিণত হয়েছে। ইতোমধ্যে বহু শিক্ষার্থী কারিগরি শাখা থেকে উত্তীর্ণ হয়ে বিভিন্ন স্তরে সফলতার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। যা সাধারণ শিক্ষায় সম্ভবপর নয়। ওই বিদালয়ে কারিগরি শাখায় শিক্ষক রয়েছেন আট জন। সপ ও ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট রয়েছেন দুজন। শিক্ষকরা জানালেন, প্রথম দিকে এসব ট্রেডের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেয়া হতো। যা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে কারিগরি শাখা চালাতে সমস্যার অন্ত নেই। ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রপাতি, কাঁচা মালের অভাব, যন্ত্রপাতি সঙ্কট রয়েছে। ক্লাসরুমের সঙ্কট প্রকট। শিক্ষকদের দাবি কারিগরি বিভাগে মেধাবীদের ভর্তিতে সমস্যা অভিভাবকদের অসচেতনতা। সাধারণ বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের এ বিভাগের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি কারিগরি শিক্ষার বড় অন্তরায় বলে মনে করছে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে বাংলা, ইংরেজিসহ জেনারেল ক্লাস পর্যন্ত কারিগরি বিভাগের শিক্ষকদের আলাদা পড়াতে হয়। এ বৈষম্য দূর করা দ্রুত প্রয়োজন বলে মনে করছে অধিকাংশ শিক্ষার্থী। বিদালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহাদাত হোসেন বিশ্বাস জানান, চারটি ল্যাবরেটরির জন্য আলাদা তিনটি কক্ষসহ ভিন্ন ক্লাসরুম প্রয়োজন। কাঁচামাল সরবরাহ সরকারিভাবে চালু রাখা জরুরি। এছাড়া বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক পদায়ন খুবই জরুরি। নইলে কারিগরি শিক্ষার মান বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়। উল্টো মুখ থুবড়ে পড়ার শঙ্কা করছেন উক্ত প্রধান শিক্ষক। খেপুপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন জানান, তার বিদ্যালয়ের ফুড প্রসেসিং, ড্রেস মেকিং ও অডিও ভিডিও তিনটি বিষয় চালু রয়েছে এখানে। যেখানে প্রায় ৯০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এ তিনটি শাখায়ও রয়েছে যন্ত্রপাতি ও শ্রেণিকক্ষসহ নানাবিধ সমস্যা। কারিগরি এ শিক্ষায় কর্মসংস্থান থাকলেও অভিভাবকদের অসচেতনতার কারণে কর্মমুখী এ শিক্ষায় এতদাঞ্চলে তেমন প্রসার লাভ করতে পারছে না বলে মনে করছেন তিনি। |