শিরোনাম: |
মহা-কম্পন
|
তোফায়েল আহমেদ : কিছু না হতে এমনিতেই বুক কেঁপে ওঠা তার ছোটবেলার অভ্যাস। সেখানে ভূমিকম্প হলে কী হবে? সেটা তো সহজেই কল্পনা করা যায়। আমরা তাই ধরে নিতে পারি, আমির শাহজাহানের সেদিনের ভূমিকম্প পরবর্তী মনের অবস্থা। কিন্তু সবকিছু কি আর ধারণার ওপর চলে? সেদিন সারা ঢাকা নাচিয়ে দেয়া ভূমিকম্পের দিনও আমির শাহজাহানের যে বুক কাঁপলো না; এটা তাই অকল্পনীয় কোনো ব্যাপার নয়। বরং সেদিনের কম্পনই যে তাকে বিরহের কবি, প্রেমের কবি করে তুললো এটাই সত্য। চলুন আমরা না হয় সেদিনের আসল ঘটনাটা জানি। আমির শাহজাহানকে সেদিন হাওয়া খেতে দেখা যায় পল্টনের এনএসসি টাওয়ারের সামনের ওই রাস্তাটায়। নানা যানে ভরা রাস্তা পেরিয়ে কী মনে করে যেন একটা জুতার দোকানে ঢুকছিলেন তিনি। ঢোকার মুখেই ব্যস্তসমস্ত একঝাঁক করপোরেট মানুষ তার চোখে পড়ে। যারা হুড়োহুড়ি করে ওপর থেকে নিচে নামছেন। ‘সামথিং ইজ রং’- বলে তার মনটা তখন একটু কেঁপে উঠলো কী? উঠেছিল বটে; তবে সেটি ওই খানিক মুহূর্তের জন্যই। দলবেঁধে ছুটে চলাদের মধ্যে করপোরেট এক তরুণী কিংবা মহিলা এমন একজনের দিকে নজর পড়তেই জাগতিক সব চিন্তা তার মাথা থেকে উড়ে যায়। মহিলার নাক ঘেমে আছে, চোখে-মুখে রাজ্যের আতঙ্ক (ভূকম্পন আতঙ্ক)। অথচ কী সুন্দরই না তাকে লাগছে! আড়াল থেকে সেই সৌন্দর্যে অন্য কেউ ডুব দিয়েছে কী? কবি সাহেব আড়চোখে দেখার চেষ্টা করেন। মফস্বল থেকে বছর পাঁচেক আগে কবি হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় পাড়ি দেয়া আমির শাহজাহান তার সেই সৌন্দর্যে হারিয়ে গেলেন। মন ভাবে, এই নারী যখন প্রেয়সী হয়ে কোনো এক ভাগ্যবান পুরুষের বুকে মাথা রাখেন, তখনো কি তার নাকে-মুখে ও রকম জল জমে? আমির শাহজাহান পল্টনের সেই জুতার দোকনের সামনে দাঁড়িয়েই মনে মনে জনৈক নারীর নাক-মুখের জল শুষে নেন। সেখানে শেষ হলেই হতো। কিন্তু শেষ হয়েও হলো না যে শেষ! ঠিক ওই মুহূর্তে তার মনে পড়ে নিজের প্রথম প্রেমের কথা, জুঁইকে যে তিনি আজও ভুলতে পারেননি। এই জুঁইয়ের প্রেমে ছ্যাঁকা খেয়েই আসলে আমির শাহজাহানের ঢাকায় আসা। আপনি-আমি জানি, তিনি কবি হবেন- অনেক পত্রিকায় কবিতা লিখবেন বলে এই শহরে পা রেখেছেন। এক সাক্ষাত্কারে তিনি এমনটাই বলেছেন। আসলে তা নয়, তিনি এসেছেন তার সাবেক প্রেমিকাকে ভুলতে। নির্জনে যাকে একদিন গোলাপ দিতে গিয়েও তার হাত কেঁপে উঠেছিল। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ‘ভূমিকম্প’ বলে দৌড় দিয়েছিলেন। ওই কম্পনের সঙ্গে সঙ্গে প্রেম তার সেদিনই হাওয়া হয়ে যায়। এরপর? এরপর জুঁইকে একদিন তিনি আবিষ্কার করেন। তার চেয়েও দুই বছরের ছোট এক হ্যাংলার হাত ধরাধরি করে ঘুরছে। |