শিরোনাম: |
সংসদে প্রধানমন্ত্রী
রোহিঙ্গাদের স্রোতের মতো আসতে দেয়া হবে না
|
বর্তমান প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা দুয়ার (সীমান্ত) খুলে দিয়ে কাউকে স্রোতের মতো আসার সুযোগ করে দিতে পারি না। কারণ তারা আলাদা রাষ্ট্র, এটা (বাংলাদেশ) আমাদের স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র। আমাদের এখানে (ঢাকায়) নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে এ ব্যাপারে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা সেখানে এমন কিছু সৃষ্টি করবে না যাতে সেখানকার লোকজন বাংলাদেশে চলে আসে। তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে যারা সর্বহারা হয়ে বাংলাদেশে চলে আসছে, তাদের স্থান দেয়া হচ্ছে, শিশুদের খাদ্য দেয়া হচ্ছে ও চিকিত্সার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাদের সব ধরনের সাহায্য করা হচ্ছে। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্নোত্তর পর্বে ফখরুল ইমামের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। চলমান রোহিঙ্গা সমস্যার জন্য মিয়ানমারের পুলিশ হত্যাকারী ও আর্মির ওপর হামলাকারীদের দায়ী করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা মিয়ানমারের ক্যাম্পে আক্রমণ করে ৯ জন বর্ডার পুলিশকে হত্যা করেছে, তাদের কারণেই আজ হাজার হাজার মানুষ ভুক্তভোগী। যারা এই ধরনের কাণ্ড ঘটালো, তাদের কারণেই হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও শিশুরা আজ কষ্ট পাচ্ছে। তাদের (নারী-শিশু) তো কোনো অপরাধ ছিল না। অপরাধী তারা, যারা এ ধরনের অবস্থা তৈরি করেছে। মিয়ানমারের এসব সন্ত্রাসী ও হামলাকারী বাংলাদেশে লুকিয়ে থাকলে তাদের খুঁজে বের করে মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করা হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে বর্ডার সংস্থা (বিজিবি) ও গোয়েন্দাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, মিয়ানমারে যারা ওইসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে, তারা বাংলাদেশে লুকিয়ে আছে কি-না তা খুঁজে বের করার। যখনই তাদের খোঁজ পাওয়া যাবে, তখনই তাদের ধরে মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে কেউ প্রতিবেশী দেশে কোনো অঘটন ঘটাবে তা কখনো মেনে নেয়া হবে না। কমবয়সী গর্ভবতী মেয়েদের বাঁচাতে বাল্যবিয়ে আইনে ‘বিশেষ বিধান’: ফখরুল ইমামের আরেক এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী ১৮ বছর বয়সের আগে আদালতে অনুমতি নিয়ে বিয়ের বিষয় সংবলিত বাল্যবিয়ে আইন অত্যন্ত বাস্তবসম্মত বলে দাবি করেছেন। আইনে সংযুক্ত এ বিধানের যুক্তি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অত্যন্ত বাস্তবসম্মত একটা চিন্তা এটি। যেটা সম্পর্কে সমালোচকদের কোনো ধারণাই নেই। ঢাকা শহরে বাস করে গ্রামের অবস্থা জানা যায় না। গ্রামে যার একটি উঠতি বয়সী মেয়ে আছে সে জানে। তিনি বলেন, বাল্যবিয়ে আইন নিয়ে ঘাবড়াবার বা চিন্তিত করার কিছু নেই। সব কিছু বিবেচনা করেই এ আইনটি করা হয়েছে। বাস্তবতাকে সামনে রেখেই করা হয়েছে। কিছু কিছু আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এটা নিয়ে অনেক কথা বলছে। যারা কথা বলছেন, তারা কিন্তু একটানা দুই-চার বছর গ্রামে বসবাস করেনি। তাই এ সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণাই নেই। তিনি বলেন, আমাদের দেশে কিছু বিষয় আছে, সে বিষয়গুলো নিয়ে তারা কখনো ভাবে না। প্রত্যেক আইনেই যদি কোন অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাহলে সেখানে কি করণীয় তার একটা সুযোগ অবশ্যই দিতে হবে। সেটা যদি না দেয়া হয় তাহলে এই সমাজের জন্য অনেক বড় একটা বিপর্যয় নেমে আসবে। আইনে ১৮ বছর বিয়ের বয়স নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো মেয়ে যে কোনো কারণেই হোক যদি ১২/১৩ বছর বয়সে প্রেগনেন্ট হয়ে যায় আর তাকে অ্যাবর্সোন করানো না যায় তবে যে শিশুটি জন্ম নেবে সেই শিশুটির অবস্থানটা কোথায় হবে? তাকে সমাজ গ্রহণ করবে? তাকে কি বৈধভাবে নেবে? নেবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে সেখানে যদি বাবা-মা এবং কোর্টের মতামত নিয়ে বিয়ে দিয়ে দেয়া হয় তাহলে মেয়েটা বেঁচে গেলো। আর যে বাচ্চাটা হলো সেটা বৈধতা পেল। এই শিশুটি একটা ভবিষ্যত্ পেল। জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ রোলমডেল হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাচ্ছে: মমতাজ বেগমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গিবাদ দমনে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষ সদস্যদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি রাজনৈতিক সংগঠন ও আলেম সমাজ, শিক্ষক-ছাত্রসমাজ, অভিভাবকরা, বুদ্ধিজীবী, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন সর্বস্তরের জনগণ যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জঙ্গিবাদ ও উগ্র সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলেছে তার নজির পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। তাই আজ জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ রোলমডেল হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাচ্ছে। জঙ্গিবাদ-মৌলবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার সময় এসেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসী হামলাকারীদের শেকড় খুঁজে বের করার ব্যাপারে যে দৃঢ়তা প্রদর্শন করে চলেছে তাতে দেশ ও বহির্বিশ্বে সরকারের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিষয়টি সরকারের একটি অন্যতম সফলতা হিসেবে বিবেচনা করে। জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এ পর্যন্ত ৬টি সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জঙ্গিবাদ নির্মূলের লক্ষ্যে পুলিশ বাহিনীতে ডিএমপি’র অধীনে ‘কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম’ নামক পুলিশের নতুন একটি জঙ্গি দমন ইউনিটের কার্যক্রম চালু হয়েছে, যার কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এছাড়া গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যক্তিকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ গ্রেফতার করেত সক্ষম হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সাফল্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে বর্তমান সরকার বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সরকারের আন্তরিকতা এবং পদক্ষেপগুলো গ্রহণের ফলে বর্তমানে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জঙ্গিবাদ নির্মূলে এসব কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। রুস্তম আলী ফরাজীর লিখিত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পায়রা নদীতে সেতু নির্মাণে সম্ভাবতা সমীক্ষা পরিচালনা করা হয় এবং এটি নির্মাণে বিশ্বব্যাংক ও চীন সরকারের আর্থিক সহায়তা চাওয়া হয়। তিনি জানান, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতার আওতায় চীন সরকারের অনুদানে আগামী ৫ বছরে বাস্তবায়নযোগ্য ৯ম, ১০ম ও ১১তম বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সেতু বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ‘দ্য প্লান অফ স্পেশাল এসিসটেন্সি প্রজেক্ট অফ ব্রিজ কন্সট্রাকশন’ সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক গত ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়। উক্ত সমঝোতা স্মারকের আলোকে প্রস্তাবিতক সেতুটি বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু হিসেবে নির্মাণের কাজ যথাসময়ে শুরু করা সম্ভব হবে আশা করা যায়। দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর দাবি উঠলে বিবেচনা করব: রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ চলছে। আগে একটা সেতুর কাজ শেষ করি। এরপর যদি দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের দাবি তোলা হয় তখন আমরা বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবো। তিনি বলেন, আমাদের পদ্মা সেতুকে ঘিরে যেভাবে রাস্তাটা করা হচ্ছে সেটা শেষ হলে তখন রাজবাড়ী এলাকার মানুষ হয়তো ভাঙ্গা হয়েই যাতায়াত করবেন। তখন হয়তো দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় আর আসবে না। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ৮০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ করা হচ্ছে: সেলিনা বেগমের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত সুরক্ষা এবং সহজে সমুদ্রের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগের সুবিধার্থে ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ কক্সবাজার-টেকনাফ-সাবারাং মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ১ম পর্যায়ে ২৪ কিলোমিটার (কলাতলি থেকে ইনানি) ও ২য় পর্যায়ে ২৪ কিলোমিটার (ইনানি থেকে সিলখালী) মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, ৩য় পর্যায়ে অবশিষ্ট ৩২ কিলোমিটার (সিলখালী-টেকনাফ-সাবারাং) মেরিন ড্রাইভ নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এছাড়া বান্দরবান পার্বত্য জেলার রুমা উপজেলার পর্যটন আকর্ষণ বগালোক ও কেওক্রাডং-এ যাতায়াত সহজ করার লক্ষ্যে ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ রুমা-বগালোক-কেওক্রাডং সড়ক নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। |