শিরোনাম: |
পদ্মা সেতু বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে - প্রধানমন্ত্রী
|
বর্তমান প্রতিবেদক : বিদেশি অর্থায়ন ব্যতিত নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করায় বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ আমাদের জন্য একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, এই সেতু নিয়ে বাংলাদেশকে অপবাদ দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ কোনো অপবাদ কখনো মেনে নিতে পারে না। তাই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি। আমরা কারও কাছে মাথানত করতে চাই না বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল রোববার ঢাকা সেনানিবাসে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ঘাঁটি বঙ্গবন্ধুকে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই পদ্মা সেতু নির্মাণে উদ্যোগ নেয়া হয়। এ লক্ষ্যে ঋণ চুক্তি হয় বিশ্বব্যাংকসহ কয়েকটি বিদেশি সংস্থার সঙ্গে। কিন্তু পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সরকারের টানাপোড়ন তৈরি হয়। এক পর্যায়ে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বাদ দিয়ে নিজস্ব খরচে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংযোগ সড়ক, নদী শাসনের কাজ অনেকদূর এগিয়ে যাওয়ার পর ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ মূল সেতুর নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন তিনি। এখন পর্যন্ত এই প্রকল্প এগিয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের আগেই এই সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করতে চায় সরকার। পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগকে অহেতুক অপবাদ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিজয়ী জাতি, মহান মুক্তিযুদ্ধে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। মাথা উঁচু করে বিশ্ব দরবারে চলব। কেউ যদি আমাদের ওপর অহেতুক কোনো অপবাদ দিতে চায়, তাহলে সেটা আমরা কখনো গ্রহণ করতে পারি না। পদ্মা সেতু নির্মাণ চ্যালেঞ্জের বিষয় ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু একটি চ্যালেঞ্জের বিষয় ছিল। আজকে তার নির্মাণকাজ আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এটা বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। আমরা পারি, এটাই হচ্ছে কথা। বিমানবাহিনীকে আরও আধুনিক করা হবে: নিজেদের ও জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে বিমানবাহিনীকে তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিমানবাহিনীর সদস্যদের দক্ষ ও আদর্শ বিমানসেনা হিসেবে গড়ে ওঠার পাশাপাশি জনগণের কষ্টার্জিত অর্থের বিনিময়ে সংগ্রহ করা যুদ্ধ উপকরণের কার্যকর ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণে আরও বেশি যত্নবান হওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদস্যবৃন্দ তাদের দক্ষতা, দেশপ্রেম, নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে ভবিষ্যতে দেশ ও জাতির জন্য আরও অনেক সাফল্য বয়ে আনবে। তিনি বলেন, আমি আশা করি, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আপনারা নিজেদের গড়ে তুলবেন এবং জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে সর্বতভাবে সক্ষম হবেন। তিনি বলেন, শুধু দেশে নয়, বিদেশের মাটিতেও আপনারা যত্নবান থাকবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। শেখ হাসিনা বলেন, বিমানবাহিনীর সদস্যরা ইতোমধ্যে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে দেশের জন্য ‘গৌরব ও সন্মান’ বয়ে এনেছেন। সেনাবাহিনী আধুনিকায়নে সরকারের নেয়া উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিকায়নের মাধ্যমে বিমানবাহিনী দেশ ও জাতির উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে আরও সক্রিয় অবদান রাখতে সক্ষম হবে। শেখ হাসিনা বলেন, বিমানঘাঁটি বঙ্গবন্ধু একটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এই ঘাটিটি মিত্র বাহিনীর বিমান পরিচালনার জন্য ব্যবহূত হয়েছিল। স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির পিতার নির্দেশে এই ঘাঁটির পুনর্গঠন ও উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়। ২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল এই ঘাঁটির নাম রাখা হয় বঙ্গবন্ধু ঘাঁটি। বর্তমানে এটি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সর্ববৃহত্ যুদ্ধবিমান ঘাঁটি। শেখ হাসিনা বলেন, জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে, আকাশ প্রতিরক্ষা এবং শত্রুর আক্রমণ প্রতিরোধে এই ঘাঁটির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিমানবাহিনীর এই ঘাঁটিটি ঢাকা তথা বাংলাদেশের আকাশ প্রতিরক্ষার মূল ঘাঁটি হিসেবে আজ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। তিনি বলেন, ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিচালনায় এই ঘাঁটি প্রত্যক্ষ সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলায় অসামরিক প্রসাশনকে সহযোগিতার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় এই ঘাঁটির ‘পারদর্শিতা’ প্রশংসিত হয়েছে। তিনি বলেন, আকাশযুদ্ধে সুসজ্জিত বঙ্গবন্ধু ঘাঁটি বাংলাদেশের আকাশসীমাকে শত্রুমুক্ত ও নিরাপদ রাখতে সম্পূর্ণভাবে সক্ষম বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ বিমান বাহিনীর সদস্যদের অংশ গ্রহণের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধে সীমিত যুদ্ধাস্ত্র নিয়েও পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে আকাশযুদ্ধে অংশ নেন বিমানবাহিনী। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এই সাহসিকতার কথা বাঙালির ইতিহাস চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, একটি স্বাধীন জাতির আকাশসীমাকে নিরাপদ ও শত্রুমুক্ত রাখাই সেদেশের বিমান বাহিনীর মূল দায়িত্ব। বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান ও সামরিক কৌশলগত দিক, অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিধি ও সম্ভাবনার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল একটি আধুনিক, পেশাদার ও শক্তিশালী বিমানবাহিনী ১২,১২১২ গঠন করা। বঙ্গবন্ধুর সময় থেকেই এই বাহিনীর আধুনিকায়ন শুরু হয়। আর বর্তমান সরকারও ফোর্সেস গোল ২০৩০ এর আলোকে বিমানবাহিনীকে একটি আধুনিক ও প্রতিরোধক ক্ষমতাসম্পন্ন বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিরতিহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, একটি উন্নত ও আধুনিক দেশের জন্য প্রয়োজনীয় গভীর সমুদ্রবন্দর, পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত্ প্রকল্প, মেট্রো রেল, আন্তঃদেশীয় রেল প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের পদক্ষেপ নিয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ও কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দেশের প্রথম টানেল নির্মাণের কাজও এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের আগে অতীতে কেউ এই যুগান্তকারী প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের কথা কখনো চিন্তাও করে নাই। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিরক্ষা বাহিনীতেও এসব প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। এটা আমাদের কাজকে আরও সহজ করে দিচ্ছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু ঘাঁটিতে পৌঁছানোর পর বিমান বাহিনীর প্যারেড পরিদর্শন করেন। এরপর বঙ্গবন্ধু ঘাঁটিকে তিনি ন্যাশনাল স্টান্ডার্ড প্রদান করেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বঙ্গবন্ধু ঘাঁটির প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছলে তাকে বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরার এবং এয়ার কমোডর এম মফিদুর রহমান স্বাগত জানান। সেখানে গ্রুপ ক্যাপ্টেন রেজা ইমদাদ খানের পরিচালনায় একটি বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানায়। এছাড়া বিমানবাহিনীর মিগ-২৯, এফ-৭ বিজি এবং এফ-৭ বিজি১ ফাইটার বিমানের মনোরম ফ্লাইপাস্ট প্রত্যক্ষ করেন তিনি। এছাড়াও বিশেষ মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, বিদেশি কূটনিতিক, নৌবাহিনী প্রধান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারসহ উচ্চপর্যায়ের সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ জন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দুই ধাপে আড়াই ঘণ্টা বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ বন্ধ ছিল। সকাল ১০টা থেকে সোয়া এক ঘণ্টা ও পরে দুপুর পৌনে ১২টা থেকে আরও এক ঘণ্টা বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিচালক কাজি ইকবাল করিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (ভিভিআইপি) চলাচলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ওই সময়ে বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণ বন্ধ রাখা হয়েছিল। বিমানবন্দর পরিচালনার আইন অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গতকাল বিমানবন্দরের কাছেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। কাজি ইকবাল করিম বলেন, প্রথম ধাপে সকাল ১০টা থেকে ১১টা ২০ মিনিট পর্যন্ত এয়ারপোর্ট ক্লোজ ছিল। পরের ধাপে ১১টা ৪৫ মিনিট থেকে ১২টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত এয়ারপোর্ট ক্লোজ ছিল। তিনি বলেন, ভিভিআইপির কেউ বিমানবন্দরের এক কিলোমিটারের মধ্যে থাকলে এয়ারপোর্ট ক্লোজ রাখা হয়। প্রধানমন্ত্রী এয়ারপোর্টের কাছাকাছি বিমানবাহিনীর একটি অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। তার আগমনের পূর্ব নির্ধারিত সময় জানিয়ে দিয়েছিল এসএসএফ। তাই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি জানান, যতক্ষণ প্রধানমন্ত্রী এক কিলোমিটার এলাকায় অবস্থান করেন ততক্ষণ নিয়মানুসারে এয়ারপোর্ট ক্লোজ (সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ) রাখা হয়। মোদির আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন শেখ হাসিনা: ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। পিটিআইয়ের খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সফরের তারিখ এখনও নির্ধারণ হয়নি। সফরের তারিখ এবং অন্যান্য বিষয় নির্ধারণে দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং ঢাকায় বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ চলছে বলেও ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী স্বাক্ষাত্: রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাক্ষাত্ করেছেন। গতকাল রোববার সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাত্ হয় বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতির সহকারী প্রেস সচিব মাহমুদুল হাছান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কোনো বিদেশ সফরের আগে অথবা পরে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত্ করেন। গত নভেম্বর মাসে মরক্কোতে জলবায়ু সম্মেলন এবং হাঙ্গেরিতে পানি সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।্ল |