শিরোনাম: |
শুধু সান্ত্বনা নিয়ে এগোচ্ছেন বিএনপি নেতারা
|
এম. উমর ফারুক : দশ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। আন্দোলন সংগ্রাম কিংবা দল গোছানোসহ কোনো কাজই সঠিকভাবে করতে পারেনি দলটি। সিন্ডিকেটের ফাঁদে আটকে গেছেন দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তাই বহুমুখী রাজনীতি না থাকার কারণে বিএনপির দীর্ঘ দিনের বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত সৌদি আরব, মধ্যপ্রাচ্য কিংবা চীনও এখন আর পাশে নেই। বহির্বিশ্বে এক ধরনের বন্ধুহীন হয়ে পড়েছে এ দলটি। একের পর এক ভুল নিদ্ধান্তের খেসারত দিচ্ছেন দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। তবুও সান্ত্বনা নিয়ে এগোচ্ছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। সূত্র মতে, বিএনপিতে শিমুল রিজভী সিন্ডিকেট তত্পর। দলের যে কোনো সিদ্ধান্ত, সাংগঠনিক কিংবা রাজনৈতিক তাদের পরামর্শ ছাড়া অসম্ভব। তারাই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে প্রতিনিয়ত ক্ষমতায় আনার দিনক্ষণ নির্ধারণ করে দিচ্ছেন। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, দেশের জনগণ থেকে দূরে সরে গেছে। তাই সরকারকে সরানোর জন্য বিএনপির কিছু করা দরকার নেই। শুধু চুপ করে থাকলেই হবে। যে কোনো সময়ে সরকারই নতুন নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে বলে পরামর্শ দিয়ে চলছেন ওই সিন্ডিকেট। পাশাপাশি বহির্বিশ্বে একটি ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রের প্রতি সম্পর্ক রাখলেই বিএনপির লাভ। প্রতিবেশী ওই রাষ্ট্র এখন বিএনপিকে ক্ষমতায় আনার পক্ষে বলেও দলের মধ্যে প্রচারণা চালু করেছেন তারা। এরকম বিভ্রান্তির কারণে দলের সর্বোচ্চ হাইকমান্ড স্বাভাবিক রাজনীতি থেকেও নিজেদের বিচ্ছিন্ন রেখেছেন। সূত্রটি আরও জানায়, এ সিন্ডিকেটের অপতত্পরতার কারণে ২০১৪ সালের দশম জাতীয় নির্বাচন ঠেকাও আন্দোলনকে একটি চূড়ান্ত রূপ দেয়ার আগেই পিছুটান দেয় দলটি। বিএনপির রহস্যঘেরা ওই সিদ্ধান্তটিও নেয়া হয়েছিল পরবর্তী নির্বাচনী স্বপ্নের কারণে। আর এসব কারণে দলকে আধুনিকতার সাথে পাল্লা দিয়ে ঢেলে সাজানোর সব প্রক্রিয়া থেকেই দূরে সরে রয়েছেন হাইকমান্ড। রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যান্য কলা-কৌশল থেকেও বিভক্ত করে রাখা হয়েছে। বিশেষ করে সংবাদ মাধ্যমগুলোর সাথে এই দলটির কোনো সংযোগ সেতু এখনও তৈরি হয়নি। রাজনৈতিক কিংবা সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিতে দীর্ঘ সময়ক্ষেপণ নিয়েও রয়েছে অচলাবস্থা। সূত্র মতে, এরআগে ভারতের বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসা উপলক্ষে বিএনপি এক ধরনের ঢেঁকুর গিলতে শুরু করেছিল। কিন্তু ফলাফল শূন্যের কোঠায়। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর নির্বাচনের হিলারির দিকে চেয়ে থাকলেও ফলাফল শূন্য। বহুমুখী রাজনীতি না থাকার কারণে বিএনপির দীর্ঘদিনের বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত সৌদি আরব, মধ্যপ্রাচ্য কিংবা চীনও এখন আর নেই। মূল কথা- বহির্বিশ্বে এক ধরনের বন্ধুহীন হয়ে পড়েছে এ দলটি। এসব বিষয়ে বিএনপি ঘরানার বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে খোলা চিঠি দিয়েছি। তাতে বলেছি, ঘরে বসে বাণী দিয়ে কিংবা আমেরিকা ও ভারতের দিকে তাকিয়ে থাকলে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়েই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। রাস্তায় না নেমে কেউ গণতন্ত্র আনতে পারেনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বিএনপি মূলত দুই ভাগে বিভক্ত। একদিক রয়েছেন ওই সিন্ডিকেটের কতিপয় নেতারা। এর মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান, শিমুল বিশ্বাস, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আর এর সঙ্গে এখন যুক্ত হয়ে পড়েছেন অনেক মধ্যম সারীর নেতারা। তবে তাও হাতে গোনা কয়েকজন। যারা ইতিমধ্যে নিজেদের ভাগ ও ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন। আর বিপরীত রয়েছেন দলের অন্য সবপর্যায়ের নেতারা, তৃণমূলপর্যায়ের নেতাকর্মীরা। সংখ্যাধিক্যে দ্বিতীয় অংশটি শক্তিশালী হলেও ক্ষমতার দিকে প্রথম অংশটাই ছড়ি ঘোরাচ্ছে সব কর্মকাণ্ডে। তাদের এই ক্ষমতার দোর্দন্ড প্রতাপ লক্ষ্য করা গেছে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন থেকে শুরু করে সব কার্যক্রমে। এসব জায়গায় বজায় রেখেছেন তাদের একক আধিপত্য। আর দূরে সরিয়ে দেয়া হয়েছে দলের ত্যাগী, যোগ্য আর সক্রিয়দের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলটির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ওনারা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বুঝিয়েছেন- জনগণ ক্ষমতাসীন দলের ওপর রুষ্ট হয়ে আছেন। বিএনপিকে কিছু করতে হবে না। জনগণই ক্ষুব্ধ হয়ে রাজপথে নেমে আসবে। আমরা এখন রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করলে সরকারের রোষানলে পরে নেতাকর্মীদের ক্ষয়ক্ষতি হবে। এছাড়া সরকার উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য বিএনপির ওপর দোষারোপ করে নিজেদের কৃতকর্ম আড়াল করার চেষ্টা করবে। |