শিরোনাম: |
বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগকে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে এগিয়ে আসতে হবে
|
স্বপন কুমার সাহা : বাঙালির জাতিসত্ত্বার পরিচয় হলো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালি জাতির সংস্কৃতি ও কৃস্টি মনে প্রাণে ধারণ করে তিনি হয়েছিলেন বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী নেতা। তাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলো স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ইনটিগ্যালপাট অব বাংলাদেশ। সেদিনের শেখ মুজিবের লালিত স্বপ্ন বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ গঠন করেছিলেন। বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষা করার জন্য বঙ্গবন্ধুর অগ্রসেনানী ছাত্র সংগঠন ৪ জানুয়ারি ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শিক্ষা-শান্তি-প্রগতির মূলমন্ত্র নিয়ে ছাত্রলীগের যাত্রা শুরু হয়। তাই ছাত্রলীগের ইতিহাস ত্যাগের মহিমায় গৌরবে গৌরবান্বিত। আমরা যারা ছাত্রলীগের কর্মী ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক ছাত্রলীগের পতাকাতলে ছিলাম তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ইন্টিগ্রিটি অর্থাত্ অবিছেদ্দ্য অংশ হিসেবে গর্বের অংশীদার হয়ে বেঁচে থাকার অধিকার আদায় করেছি। বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকাকে মাথার ওপর সমুন্নত রেখে বঙ্গবন্ধুর ভাবশিষ্য হিসেবে দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করছি। ছাত্রলীগের আদর্শের কর্মীদের লক্ষ্যবস্তু থেকে কেউ কখনো বিচ্যুত করতে পারবে না। যারা সেই আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে রজনৈতিক হীন স্বার্থে জড়িয়েছে তারা আজ ইতিহাস থেকেও ঝরে পড়েছে। ছাত্রলীগ হলো একটি আদর্শের পতাকা। সেই পাতাকা তলে থেকেই দেশের অগ্রগতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে একমাত্র ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাই। কেন না যখন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি জাতি এগিয়ে চলে, ঠিক তখনই বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে উজ্জ্বলতম নক্ষত্রটিকে নিভিয়ে দিতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হিংস্র হায়নার বীভত্স চিত্কারে গর্জে উঠলো ফারুক, রশিদ, মহিউদ্দিন, বজলুল হুদাদের মরণাস্ত্র। পেছন থেকে প্রত্যক্ষ মদদ দিল খন্দকার মোশতাক ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্র। ১৯৭৫ পরবর্তী বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভাগ্যাকাশে যে কালো মেঘ গ্রাস করেছিল সেই মেঘ সরাতে প্রত্যাশার সূর্য হাতে ১৯৮১ সালের ১৭ মে প্রত্যাবর্তন করেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা। সেদিন শেখ হাসিনার পাশে ভ্যানগার্ডের ভূমিকায় অবতীর্ন হয়েছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। যেমনটি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তত্কালীন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মুক্তিযুদ্ধেও ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং স্বাধীনতার লাল সূর্য্যটিও ছিনিয়ে এনেছিল। তাই আজকের ছাত্রলীগ ও প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ২০২১ ও ২০৪১ সালের রূপকল্প বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের ও উন্নত দেশে পরিণত করার জন্য ছাত্রলীগের অগ্রসেনানী ভূমিকা পালন করতে পারলেই আমাদের এই প্রত্যাশা পূরণ হবে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ঐতিহাসিক ভূমিকা, সফল আন্দোলন ও সংগ্রামের অগ্রণী ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশের ইতিহাসে মাইলফলক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। বঙ্গবন্ধুর হাতে প্রতিষ্ঠিত এ ছাত্রলীগ অল্প সময়ের ব্যবধানে মানুষের মনের মধ্যে আস্থা অর্জন করে নেয়। বিশ্বে এমন কোনো ছাত্র সংগঠন নেই যে ছাত্রলীগের সঙ্গে অন্য কোনো দেশের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে তুলনা করা যায়। স্বাধীনতার রূপকল্পক মহানায়ককে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম সংগঠক হিসেবে যে সাফল্যের ভূমিকা রেখেছে তা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। বাংলাদেশ ছাত্রলীগই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে জনগণকে সম্প্রীতি করে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশের স্বাধীনতার লাল সূর্য্যটি ছিনিয়ে এনেছিলেন। ছাত্র-জনতা-শ্রমিক-কৃষক ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের দীর্ঘ পথ চলায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হারিয়েছে তার হাজার হাজার নেতাকর্মীকে। ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ, বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগের সমাবেশে বলেছিলেন, ‘দানবের সঙ্গে লড়াইয়ে যে কোনো পরিণতিকে মাথা পেতে বরণের জন্য আমরা প্রস্তুত। ২৩ বছর রক্ত দিয়ে এসেছি। প্রয়োজনবোধে বুকের রক্তে গঙ্গা বহাইয়ে দিয়ে বাংলাদেশের মানুষে অধিকার প্রতিষ্ঠা করব। মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও বাংলার বীর শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করব না।’ তাইতো মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগের হাজারও মুক্তিযোদ্ধা তাদের বুকের তাজা রক্তে এঁকেছেন লাল-সবুজের পতাকা, এঁকেছেন ছাপ্পান্ন হাজার বর্গ কিলোমিটারের এক স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের মানচিত্র। সেই সব বীরযোদ্ধারাই এখন ছাত্রলীগের অনুপ্রেরণা, শক্তি ও সাহস। বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত প্রিয় ছাত্র সংগঠনের (চত্বধসনষব) অর্থাত্ বিশেষ কোনো আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবনা। শিক্ষা: ছাত্রলীগের সমস্ত নেতাকর্মীদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে জ্ঞানের পরিধি বাড়িয়ে দেশ পরিচালনায় দায়িত্ব নিতে হবে। শান্তি: সত্য সুন্দর ও শৃঙ্খলা ভালোবাসার পরিবেশ সৃষ্টি করে সুন্দর বাসস্থানের স্বপ্ন দেখতে হবে। প্রগতি: মান উন্নয়নে দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্মগত অধিকার ক্ষুধা দরিদ্রতা বাসস্থান স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চয়তা নিয়ে মানুষ যেন শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারে। তাই বঙ্গবন্ধুর উপরোক্ত প্রস্তাবনাবলী নিয়ে তার প্রিয় সংগঠনকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। তাই ছাত্রলীগের ঐতিহাসিক উল্লেখযোগ্য ভূমিকাগুলো মানুষের হূদয় দখল করে নিয়েছে। তাই ইতিহাসে ছাত্রলীগের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ আছে। ১৯৬২ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রলীগের অগ্রণী ভূমিকা ছিল। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা অর্থাত্ বাংলার মানুষের স্বাধিকার আন্দোলনে ছাত্রলীগের ছিল গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। ১৯৬৯ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের গণঅভ্যুত্থান ছিল ছাত্র আন্দোলন এক ঐতিহাসিক মাইল ফলক। সেদিন ডাকসুর ভিপি ছিলেন আজকের আওয়ামী লীগ জননেতা তোফায়েল আহমেদ। সেদিন ছাত্রলীগের নেতৃত্বের দূরদর্শিতার কারণে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রধান আসামি শেখ মুজিবকে জেল থেকে মুক্ত করে জনগণের রায়ে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছিল। ১৯৭১ স্বাধীনতা যুদ্ধে বঙ্গবন্ধু প্রতিচ্ছবি মনে প্রাণে ধারণ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের ইতিহাস সৃষ্টিকারী যুগান্তকারী ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ সম্প্রতি কিছু সংঘটিত ঘটনায় তৃণমূল পর্যায়ে কিছু নেতাকর্মীদের নাম পত্রপত্রিকায় ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে উঠে এসেছে। এতে অগ্রজ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা লজ্জা ও ব্যথিত হন। দেশকে একটি চিহ্নিত চক্র তাদের নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপাসনালয় ও মন্দিরগুলোতে হামলা চালিয়ে মূর্তি ভেঙেছে এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে আগুন দিয়ে অরাজকতা শুরু করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্ব দরবারে ছোট করে, শেখ হাসিনা সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার এক গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। একমাত্র এই ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে শিক্ষা-শান্তি-প্রগতির পতাকাকে আবারও হাতে নিয়ে ইতিহাস রচনা করতে এগিয়ে আসতে পারে। ছাত্রলীগই সব ষড়যন্ত্রকারী, চক্রান্তকারীদের মুখোশ উন্মোচন করে এদের প্রতিরোধ করতে পারে এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার ভাবমূর্তিকে সমুজ্জ্বল রাখতে পারে। দেশে-বিদেশেও বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িকর সম্প্রীতির বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করার ভূমিকা পালন করতে পারে এবং দেশ পরিচালনায় শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে পারে। তবেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা মানুষ দেখতে পাবে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মী তরুণ শেখ মুজিবুর রহমানের নান্দনিকতা ও আদর্শ গড়ে উঠবে এ প্রত্যাশা বাংলাদেশের জনগণের। কাজী নজরুলের বাঁধ-ভাঙার শৌর্য, আছে ক্ষুদিরামের প্রত্যয় আর সুকান্তের অবিচল চেতনায় জাগ্রত হবে নতুন প্রজন্মের ডিজিটাল বাংলাদেশ। ছাত্রলীগ শিক্ষার অধিকার রক্ষার পাশাপাশি জাতীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক স্বার্থ সুরক্ষায় সবসময় মঙ্গল প্রদীপের আলোকবর্তিকা কাজ করছে এবং করবে এটাই হলো জাতির আকাঙ্ক্ষা। স্বপ্নগুলো শুধু স্বপ্ন নয়, বাস্তব হওয়ার পথে। কেন না আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। তাকে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামেও নেতৃত্ব দিতে দেখেছি। ১৯৬৭ সালে ইডেন মহিলা কলেজ থেকে ছাত্রলীগের মনোনয়নে ছাত্রসংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তখন থেকেই দেখেছি আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিনের ছাত্রলীগের নেতা হয়ে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক দক্ষতায় ছিলেন বলেই আজকের সফল প্রধানমন্ত্রী। গত ২৫ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনা পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অভিনন্দন জানাতে গণভবনে যান। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কিছু নির্দেশ দিয়েছেন। ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীদের পড়াশুনায় মনযোগী হয়ে প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করে দেশের আগামী দিনের দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত হতে হবে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশের জনগণের আস্থা অর্জন করার জন্য তৃণমূল পর্যায়ে গিয়ে নিরক্ষর মানুষকে অক্ষরজ্ঞানে শিক্ষিত করে তুলতে হবে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের স্ব স্ব এলাকায় হত দরিদ্রদের ঘরবাড়ি তৈরি করে দেয়ার জন্য তালিকা প্রস্তুত করার পর সরকারের নিয়োজিত প্রতিনিধিকে দিতে হবে। মানুষের অনুভূতিতে কষ্ট দেয় এমন কোনো কাজ করা যাবে না। বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত ছাত্রলীগ জনগণের বন্ধু হিসেবে আস্থা অর্জন করে দেশরত্ন শেখ হাসিনা সমস্ত উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। এতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করবে ছাত্রলীগ। তবে বাংলার মানুষ প্রাণ খুলে হাসবে। বাংলার ছাত্র-জনতা-কৃষক-শ্রমিকের ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে উঠবে। জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা এ দেশ থেকে নির্মূল হবে কৃষক-শ্রমিক-জনতা তা বিশ্বাস করে। লেখক: উপদেষ্টা সম্পাদক -দৈনিক বর্তমান। |