রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
সিন্ডিকেটেই কপাল পুড়ছে রিজভীর
Published : Thursday, 17 November, 2016 at 6:00 AM, Count : 638

এম. উমর ফারুকঃ সিন্ডিকেটেই কপাল পুড়ছে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব ও দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা রুহুল কবির রিজভীর। বিভিন্ন সময়ে সিন্ডিকেটের অপকর্মের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে দলের মধ্যেই সমালোচনা ও বিতর্কের মুখোমুখি হয়েছেন এই নেতা। তার বিরুদ্ধে দলের কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতারাও সরব এবং সক্রিয়। ফলে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকলেও কারাভোগকারী রিজভীর পক্ষে কোনো প্রতিবাদ সভা সমাবেশ বা কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনগুলোকে। এমনকি রিজভীর মুক্তি চেয়ে একটি পোস্টারও প্রকাশ করা হয়নি। এ নিয়ে দলের কোনো স্তরেও আলোচনা নেই। দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও এখন কোথাও নেই রিজভী।
সূত্র জানায়, গতকাল শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নগর বিএনপির যৌথসভা থেকে তারেক রহমানের গ্রেফতারি পরোয়ানার বিরুদ্ধে দুই দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি দেয়া হয়।

কিন্তু দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের মুক্তি চেয়ে কোনো কর্মসূচি নেয়া হয়নি। দলীয় কোনো তত্পরতা না থাকায় চিন্তিত রিজভী ও তার পরিবার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদোন্নতি পেয়ে বিএনপির সদ্যঘোষিত কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব হলেও আগের সেই ইমেজ নেই রিজভীর। আর সে কারণে তিনি বর্তমানে কারাগারে থাকলেও কারাবন্দি নেতাকর্মীদের কাছে তিনি অনেকটা অগ্রহণযোগ্য নেতায় পরিণত হয়েছেন। বিষয়টি রিজভী আহমেদও অনুভব করে নেতাকর্মীদের রোষানলে পড়ার আতঙ্কে ইতোমধ্যে জেলারের সঙ্গেও নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলেছেন। সম্প্রতি কারাগার থেকে জামিনে বের হওয়া ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মী এমনটিই দাবি করেছেন। সূত্র জানায়, আগে রিজভী আহমেদ কারাগারে গেলে বন্দি নেতাকর্মীরা তার কাছে ছুটে যেতেন।

তার সহযোগিতায় এগিয়ে আসতেন। কিন্তু এবারই এর ব্যত্যয় ঘটেছে। কারাগারে কোনো নেতাকর্মীই তার কাছে যান না। তাকে কোনো প্রকার সহযোগিতাও করেন না। সবার কাছেই এখন তিনি ঘৃণার পাত্র হয়েছেন। ওয়ান ইলেভেনের শেষ দিকে রাজনৈতিক ভূমিকা আর পরবর্তী ক্ষমতাসীন দলের রোষানলে জেল-জুলুম আর নির্যাতনের কারণে সবার শ্রদ্ধেয় জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিলেন এক সময়ের ছাত্রনেতা রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। ওয়ান ইলেভেনে তার ভূমিকার কারণে দল তাকে পুরস্কৃত করে সহ-দফতর সম্পাদক থেকে যুগ্ম-মহাসচিব করেছিল।

আর ক্ষমতাসীন দলের রোষানলের কারণে সম্প্রতি তিনি সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব পদে পদোন্নতিও পান। কিন্তু মাঝে তিনি দলের মধ্যে অদৃশ্য সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। যা পরে প্রকাশ্যে রূপ ধারণ করে। জিয়া পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আর বিশ্বস্ততার সুযোগে নানা অনিয়মের সঙ্গেও নিজের নামটি জড়িয়ে ফেলেন। দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদ সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব হওয়ার পরও তিনি দফতর শাখাকে নিজের কুক্ষিগত রাখার সব আয়োজনই করেছেন। বিগত বছরের মতো এবারও তিনি দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত রয়েছেন। আর অন্যদিকে অনুগতদের সহ-দফতরে নিয়ে এসেছেন। এর মধ্যে প্রথম সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুর বিরুদ্ধে বিগত ইউপি নির্বাচনে আর্থিক কেলেঙ্কারির নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে। মোহাম্মদ বেলালের বিরুদ্ধে রয়েছে হত্যা মামলা।

নিজ দলের জনপ্রিয় নেতাকে হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি তিনি। রয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র মামলাও। এসব তল্পীবাহক নেতাদের দিয়ে কীভাবে বিএনপির মতো এত বড় রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ দফতর শাখা পরিচালনা করা হবে তা নিয়ে সন্দিহান নেতাকর্মীরা। সূত্র মতে, নিজস্ব সিন্ডিকেটের আওতায় অযোগ্য, বিতর্কিত নেতাকর্মীদের তিনি নেতৃত্বের ভার তুলে দিয়েছেন। দলের চেয়ারপারসনকে ভুল বুঝিয়ে বিভিন্ন সময়ে আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে সম্পৃক্ত নেতারাও পদোন্নতি পেয়েছেন। শুধু নিজের বলয়ের কারণে অখ্যাতদের তিনি কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিয়ে এসেছেন। আর বিপরীতে তার অন্যায়ের বিরুদ্ধাচরণ করতে পারেন এমন সব নেতাদের পদাবনতিসহ কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ দিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন।

বিএনপির একাধিক নেতা অভিযোগ করেন, ওয়ান ইলেভেনের শুরুতে রিজভী সংস্কারপন্থি নেতা হলেও পরে মূলধারার রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে পুরনো প্রতিশোধ নিতে জিয়া পরিবারকে ধ্বংস করার যাবতীয় আয়োজন সম্পন্ন করেছেন। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন গুলশান কার্যালয়ের একজন প্রভাবশালী কর্মকর্তা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাজাহান ও তাদের বলয়ের নেতাকর্মীরা। বিষয়টি এখন নেতাকর্মীদের কাছে ওপেন সিক্রেট। তাই তারাও রিজভীর প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন প্রতিনিয়ত। সূত্র জানায়, সিন্ডিকেট রিজভী আহমেদকে দিয়ে সব ধরনের কাজ করিয়ে থাকে। যাতে পরবর্তীতে রিজভী আহমেদের ওপর সব দোষ বর্তায়। আর সিন্ডিকেটের মূল হোতারা থাকেন আড়ালে। যার খেসারত দিতে হচ্ছে রিজভীকে। 



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft