শিরোনাম: |
টালমাটাল পটুয়াখালী জেলা বিএনপি
|
এম.উমর ফারুকঃ দলের পরীক্ষিত ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন, স্বেচ্ছাচারিতা ও টাকার বিনিময়ে পকেট কমিটি গঠনসহ অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়েছে। অযোগ্য ও অগ্রহণযোগ্য নেতৃত্বের কারনে টালমাটাল অবস্থা পটুয়াখালী জেলা বিএনপির। এমনকীসরকার বিরোধী আন্দোলনে সারাদেশে যখন আন্দোলনে উত্তাল তখন পটুয়াখালী জেলা ছিল নিস্ক্রীয়। আর এ ব্যর্থতায় জন্য জেলা বিএনপির সভাপতি এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে দায়ী করেছেন স্থানীয় নেতারা। আলতাফ হোসেন চৌধুরীর স্বেচ্ছাচারীতার কারনে জেলা বিএনপি ছাড়াও ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদল, শ্রমিকদলের নেতাকর্মীসহ জেলা ও উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা বর্তমান জেলা কমিটির সাথে বিচ্ছিন্ন।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, আলতাফ হোসেন চৌধুরীর একক আদিপত্য, এলাকায় না আসা, নেতাকর্মীদের খোজ খবর না নেওয়া, আন্দোলন সংগ্রামে দিকনির্দেশনা না দেয়ার কারনে নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা শুরু হয়েছে। ভেঙ্গে পড়েছে সাংগঠনিক কর্মকান্ড। এখনও বিএনপি নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করা, ত্যাগী নেতাদের কমিটিতে অন্তরভুক্ত না করার ফলে জেলা বিএনপি মুখথুবরে পড়েছে। দলের কোন সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই। কেন্দ্র থেকে ঘোষিত কোন কর্মসূচি পালনও হচ্ছে না। সুত্র জানায়, আলতাফ হোসেন চৌধুরী এলাকায় যান স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়োজো করে। নিজ দলের নেতাকর্মীদের প্রতি তার কোন আস্থা নেই। স্থানীয় আওয়াম লীগ নেতাদের অনুমতি ছাড়া চৌধুরী কেন্দ্রীয় কোন কর্মসূচি পালন করতে পারে না। এ নিয়ে স্থানীয় বিএনপির নেতাদের সঙ্গে আলতাফ চৌধুরীর অন্তদ্বন্দ্ব চরমে। তাই আলতাফ চৌধুরী নেতৃত্ব থেকে মুক্তি চান জেলা বিএনপির নেতারা। বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে এক নেতার এক পদ বিধান হওয়ার পরও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী জেলা বিএনপির সভাপতির পদ ছাড়তে নারাজ। যেভাবেই হউক তিনি ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলার সভাপতি পদে থাকতে চান। তারপরেও যদি তিনি থাকতে না পারেন তাহলে তার স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার চৌধূরী জেলা বিএনপির সভাপতি করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। পটুয়াখালী জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির এক সহ সভাপতি বলেন, সব জায়গায়ই বিএনপির দুটি গ্রুপ রয়েছে। আর এই গ্রুপ সৃষ্টির নায়ক আলতাফ চৌধুরী। আলতাফ সাহেব তৃণমূল পর্যায়ে যান না অথচ ঢাকা বসে ইউনিয়ন কমিটিও গঠন করেন। উনি দলটাকে শেষ করে দিচ্ছেন। পটুয়াখালী জেলা বিএনপির দলীয় কোন্দল ক্রমেই তীব্রতর হয়ে উঠেছে। জেলা কমিটি গঠনে কেন্দ্রীয় প্রভাব নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ পটুয়াখালী জেলা বিএনপিকে সংগঠিত করতে একাধিক বার সফর করলেও কোনো সুরাহা করতে পারেনি বরং গ্রুপিং আরও চাঙ্গা হয়েছে বলে নেতাকর্মীদের অভিযোগ। গত ২০১২ সালে আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে সভাপতি এবং আব্দুর রব মিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে তখনকার ভারপ্রাপ্ত মহাসিচব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কমিটি ঘোষণা করেন। এবং ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার নিদের্শ দেন। আলতাফ হোসেন চৌধুরী ও আব্দুর রব মিয়া দলের ত্যাগী, দক্ষ, প্রতিষ্ঠিত নেতাদের বাদ দিয়ে নিজেদের অযোগ্য লোকদের দিয়ে কমিটি গঠন করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, যারা পটুয়াখালী জেলা বিএনপিকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, বিভিন্ন আন্দোল সংগ্রামে রাজপথে থেকেছেন। তারা আলতাফ হোসেন চৌধুরীর প্রিয়ভাজন না হওয়ায় তাদেরকে কোন পদ দেননি। যারা পটুয়াখালী জেলা বিএনপির পদ পাননি তারা হলেন, পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক আলহাজ্ব আব্দুর রশিদ চুন্নু মিয়া, সাবেক সহ সভাপতি শহিদুল আলম তালুকদার, সাবেক প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শাহাদৎ হোসেন মৃধা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক স্নেহাংশু সরকার ওরফে কুট্টি সরকার, পটুয়াখালী সাবেক পৌর মেয়র মোস্তাক আহমেদ পিনু, দুমকী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাক্ষ বাহাউদ্দীন বাহার, পটুয়াখালী সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী মাহবুব, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, মির্জাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব আশ্রাফ আলী হাওলাদারসহ পটুয়াখালী জেলা বিএনপির প্রায় এক ডজন নেতাদের জেলা কমিটির কোন পদে রাখা হয়নি। জানা গেছে, সাবেক সাধারণ সম্পাদক স্নেহাংশু সরকার ওরফে কুট্টি সরকার ও পটুয়াখালী সাবেক দুইবারের পৌর মেয়র মোস্তাক আহমেদ পিনু অনেক জনপ্রিয়। তারা জেলা কমিটির পদে না থেকে বিগত সরকার বিরোধী আন্দোলন করে একাধিক মামলার আসামী হয়ে কারাবরণ করেছেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় নেতাকর্মীদের মতামতের তোয়াক্কা না করে কেন্দ্র কর্তৃক ঘোষিত জেলা কমিটি বিএনপির একটি অংশ আগে থেকেই মেনে নিতে পারেনি। তাদের অভিযোগ ওই কমিটিতে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ও রাজপথের ত্যাগী নেতাকর্মীদের স্থান হয়নি। দু-একজন যারা পদ-পদবি পেয়েছে তারাও ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে দলে রয়েছে। নেতার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোনো কথা বললে পদ-পদবি তো দূরের কথা, দল থেকে তাকে বের করে দেয়া হয়। তাছাড়া গত পৌরসভা ও উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে অবিশ্বাস্যভাবে হারানোর পর দলের প্রধান নেতৃত্বকে সাধারণ কর্মীরা বিশ্বাস করেন না। এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির বর্তমান সহসভাপতি মাকসুদ আহমেদ বায়জিদ পান্না মিয়া বলেন, আমি মনে করি দলের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত, সত্, ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের হাতে দলের নেতৃত্ব তুলে দিলে দলকে সংগঠিত করা সম্ভব এবং তা সাধারণ মানুষের গ্রহণযোগ্যতা অর্জনেও সক্ষম হবে। তা না হলে পটুয়াখালী জেলায় বিএনপিকে চরম মূল্য দিতে হবে। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমএ রব মিয়া বলেন, সাংগঠনিকভাবে আমাদের কোনো সমস্যা আছে বলে মনে করি না। বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে পটুয়াখালী জেলা পিছিয়ে ছিল না। পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আলহাজ আবদুর রশিদ চুন্নু মিয়া বলেন, দলের দুঃসময়ে দলকে সংগঠিত রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছি। দলের জন্য এখন সর্বাত্মক ত্যাগ শিকারে প্রস্তুত। দলের জন্য কে কী করেছে তা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ অবগত রয়েছেন। ঢাকা অফিসে বসে ভোটাভুটিতেও আমি এগিয়ে ছিলাম। অথচ কেন্দ্র থেকে একটি কমিটি চাপিয়ে দেয়া হয়েছে তাতে আমার নামই নেই। তাতে দলই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুমকী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাক্ষ বাহাউদ্দীন বাহার, দলের পরীক্ষিত ও স্থানীয় ত্যাগী নেতা যারা শত বাধার মুখেও কর্মীদের ফেলে স্থান ত্যাগ করবে না। তাদের নেতৃত্ব দিতে হবে। ছাত্রদলের সভাপতি গাজী আশফাকুর রহমান বিপ্লব বলেন, যে সব নেতারা ঢাকায় থাকেন তাদের জেলায় আসার দরকার নাই। আন্দোলন সংগ্রামে তাদের নেতাকর্মীরা পান না। তাদের জেলাকে জেলার নেতা বানিয়ে দলের কোন লাভ হবে না। তাই যারা নেতাকর্মীদের নিয়ে জেলার রাজনীতি করে তাদেরকে জেলা কমিটিতে অন্তভুক্ত করতে হবে। |