শিরোনাম: |
রেল যোগাযোগে নতুন দিগন্ত
দেশজুড়ে নেটওয়ার্ক
|
হাসান আরেফিন: ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর রেলপথকে জনবান্ধব করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার এবং রুপকল্প ২০২১ অনুযায়ী রেলওয়ে সম্প্রসারনও উন্নয়নের মাধ্যমে অধিকতর নিরাপদ, পরিবেশ বান্ধব ও সাশ্রয়ী পরিবহন ব্যবস্থ্যা চালু করার উদ্যোগ গ্রহন করে সরকার। দেশের অভ্যন্তরীন, আঞ্চলিক, উপ-আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ট্রাফিক পরিবহনের মাধ্যমে রেলওয়ে মেডাল শেয়ার বৃদ্ধিকরা স্বল্প খরচে যাতাযাত ও রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য নতুন রেললাইন স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। রেলওয়ের সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনসহ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে রেলওয়ে সুত্রে জানা গেছে। এদিকে সারা দেশকে রেলওয়ের আওতায় আনারও পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে।
দেশের সবচেয়ে বড় পদ্মাসেতু চালুন দিন থেকেই রেল চলাচলের প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের কাজও পুরোদমে এগিয়ে চলেছে বলে রেলপথ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। সুত্রমতে, রেলপথ উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় দুই শতাধিক নতুন ট্রেন চালু করা হয়। ২৯৩ কিলোমিটার নতুন রাস্তা নির্মাণ এবং ৩৫৩ কিলোমিটার রাস্তা মিটার গেজ থেকে ডুয়েলগেজে রুপান্তর করা হয়েছে। এছাড়াও যাতায়াত ও পণ্য পরিবহণের অন্যতম সহজ ও সস্তা এই মাধ্যমকে জনবান্ধব করতে রাস্তার উন্নয়ন ও সিগন্যালিং ব্যবস্থায় বেশ কিছু ইতবাচক পরিবর্তন এনেছে সরকার। রেলপথ মন্ত্রনালয় সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, ২০০৯ থেকে ২০১৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত জামালপুর জেলার তারাকান্দি থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার নতুর রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। টঙ্গীলিংক রোডসহ টঙ্গী থেকে ভৈরব বাজার পর্যন্ত নতুন রেলপথ করা হয়েছে ৮৪ কিলোমিটার। এরমধ্যে ৬৪ কিলোমিটার নতুন রেললাইন এবং ২০ কিলোমিটার লুপ লাইন রয়েছে। লাকসাম থেকে চিনকি আস্তানা পর্যন্ত ৬১ কিলোমিটার নতুন লাইন এবং ২০ কিলোমিটার লুপসহ ৮১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মিত হয়েছে বর্তমান সরকারের সময়ে। এছাড়া ফরিদপুর-ভাঙ্গা ১০ কিলোমিটার এবং ঈশ্বরদী থেকে পাবনা পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মাণ করা হয়েছে। এদিকে ২০১৫ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত টঙ্গীলিংকসহ টঙ্গী থেকে ভৈরব বাজার পর্যন্ত ও ঈশ্বরদী-পাবনা সেকশন মিলিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে আরও ১৭ কিলোমিটার নতুন রেলপথ। নতুন রেলপথের পাশাপাশি উল্লেখিত সময়ের রেলপথ উন্নয়নেও বেশ কিছু দৃশ্যমান কাজ করেছে রেলপথ মন্ত্রনালয়। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত প্রায় ৯১৪ কিলোমিটার রেললাইনের উন্নয়ন বা পুনঃনির্মাণ কাজ করা হয়েছে। একই সাথে ২০১৫ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত ১৩৮ কিলোমিটার রেললাইনের উন্নয়ণ বা পুনর্বাসন কাজ করা হয়েছে। ফলে রেল পথে চলাচলে যাত্রীদের মধ্যে বেশে সস্তি ফিরেছে বলে মনে করছেন রেলপথ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা। বর্তমান সরকারের সময়ে রেলপথ নির্মাণ ও উন্নয়নে সঙ্গে সঙ্গে রেল স্টেশন উন্নয়ন ও আনুকায়নসহ ট্রেন সার্ভিসও বৃদ্ধি করা হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে নতুন নতুন ভবন ও প্লাটফর্ম। সূত্র মতে আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে নতুন ট্রেন চালু করা হয়েছে দুই শতাধিক। যার মধ্যে ২০০৯ থেকে ২০১৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত ৯৬টি এবং ২০১৫ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত সময়ে নতুন ট্রেন চালু হয়েছে ১০৪টি। ফলে ট্রেন সার্ভিস বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান সরকারের সাত বছরে রেলওয়ের ৬৭টি নতুন ভবন নির্মাণ এবং উন্নয়ন করা হয়েছে ১৬০টি ভবনের। ১৭৯টি নতুন রেল ব্রিজ নির্মাণের পাশাপাশি ৫৯৭টি রেল ব্রিজের উন্নয়ন বা পুননির্মাণ করেছে রেলপথ মন্ত্রনালয়। এদিকে,পদ্মাসেতুর সঙ্গে রেলপথ সংযোজন করে রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনগনের দীর্ঘদিনের দাবি পুরণ করেছে বর্তমান সরকার। এছাড়া এই কয়েক বছরে সিগন্যালিং ব্যবস্থার আধুনিকায়নসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি যোগ হয়েছে রেলওয়েতে। সরকারি মালিকানা ও সরকার পরিচালিত পরিবহন সংস্থা রেলওয়ের মোট ২৫ হাজার ৮৩ জন কর্মচারীসহ মোট ২৮ হাজার ৭৭ দশমিক ১০ কিলোমিটার রেলরুট রয়েছে। যেহেতু দেশের এক প্রান্তকে অন্য প্রান্তের সাথে সংযোজন করার জন্য রেলপথ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থল পরিবহন ব্যবস্থা সেহেতু দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। রেলওয়ে সুত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নয়নের পরিকল্পনা কমিশনের পরিবহন সমন্বয় উইং এর অধীনে ২০ বছর মেয়াদী মাষ্টারপ্ল্যান অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। ওই মাস্টার প্ল্যানে রেলওয়ে উন্নয়নে মোট ১২৫৯২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৩১ টি প্রকল্প গ্রহণের প্রস্তাবনা রয়েছে। এছাড়াও আগামী ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় দেশের অভ্যন্তরীন রেলযোগাযোগ উন্নয়নের সাথে সাথে আঞ্চলিক,উপ আঞ্চলিক ও আর্ন্তজাতিক সহযোগীতার উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার আওতায় রেলওয়ের আধুনিকায়ন এবং উন্নয়নের জন্য মোট ৩৬২১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪৯ টি প্রকল্পের মধ্যে ৪২ টি চলমান এবং ১০৭ টি নতুন প্রকল্প। রেলওয়ের উন্নয়নে বর্তমান সরকারের নেয়া বিভিন্ন প্রকল্প সম্পর্কে জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, স্বাধীনতার পর রেলওয়েকে বারবার ধ্বংস করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সরকারের পর ১৯৯৬ সালের আগের সরকারের সময়ে ১৩৫টি স্টেশন বন্ধ করে অসংখ কোচ বিক্রি করে রেলকে লোকসানী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হরা হয়েছিলো। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে রেলের উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করে রেলকে একটি গণমুখী পরিবহনে পরিণত করেছে। বর্তমানে রেল একটি জনপ্রিয় পরিবহন। তাই রেলের উন্নয়নে রেলপথ মন্ত্রণালয় নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। |