শিরোনাম: |
নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জর্জরিত শুকুরেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়
|
জিএম জয়, রংপুর ব্যুরো: রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার শুকুরেরহাট উচ্চ বিদ্যালয় নানা অনিয়ম-দূর্নীতিতে জর্জরিত হয়ে পড়েছে। এতে ক্ষুন্ন হচ্ছে বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার মান। নেই কমন রুম, কম্পিউটার ল্যাব, পাঠাগার, নামাজ ঘর ও পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা। এরপরও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক শ্রেনীকক্ষে পাঠদান বন্ধ করে গড়ে তুলেছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দুটি ইলেকট্রনিক্স শো-রুম দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। দির্ঘদিন ধরে এমন অনিয়ম-দূর্নীতি চলে আসলেও রাজনৈতিক কারণে প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি কেউ। এসব অনিয়মের সমাধান চেয়ে ওই বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ইউএনও’র কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
সরেজমিনে জানা গেছে, শুকুরেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের আঞ্চলিক মহাসড়ক লাগোয়া দুটি শ্রেণীকক্ষে করা হয়েছে দুটি ইলেকট্রনিক্স শো-রুম। একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক ওই উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম ও আরেকটির মালিক ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রিপন মিয়া। প্রায় বছর তিনেক আগে শ্রেণীকক্ষ দুটি শো-রুমে রুপান্তরিত করেন তারা। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব পালন করার সময় তারা শ্রেণীকক্ষ দুটি ১০ বছরের জন্য লিজ নিয়ে এমনটি করেছেন। এরফলে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। এছাড়াও, বিদ্যালয়টিতে রয়েছে শ্রেণীকক্ষ সংকট। শিক্ষার্থীদের ঠিকমত লেখাপড়া করারমত পরিবেশ নেই। ফলে ধিরে ধিরে কমতে শুরু করেছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানটি বাঁচাতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা। কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যালয়টিতে নেই কমন রুম, কম্পিউটার ল্যাব, পাঠাগার, নামাজ ঘর ও পর্যাপ্ত টয়লেট সুবিধা। বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী শহিদ ইসলাম বলেন, আমাদের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি নানা অনিয়ম ও দূর্নীতে জর্জরিত। প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি মিলে প্রতিষ্ঠানটি বানিজ্যিক কেন্দ্রে পরিনত করেছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের কথা তারা ভাবছেন না। আরেক শিক্ষার্থী সোহেল রানা বলেন, বিদ্যালয়ের লেখাপড়া মান ফিরিয়ে নিতে আনতে না পারলে শিক্ষার্থীরা মুখ ফিরিয়ে নিবে এই প্রতিষ্ঠান হতে। বিদ্যালয়টি বাঁচাতে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কামনা করছি। শিক্ষার্থী আল-আমিন বিশ্বাস ও আতিকুর রহমান বলেন, শ্রেণীকক্ষে পাঠদান বন্ধ করে সেটিতে শো-রুম ব্যবসা পরিচালনা করছেন সভাপতি ও সহকারী শিক্ষক। সেগুলো পুনরায় শ্রেণীকক্ষে রুপান্তর করতে জোর দাবি জানাচ্ছি। শুকুরের হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ে সভাপতি থাকাকালিন সময়ে মাহবুবুর রহমান ও সহকারী শিক্ষক রিপন মিয়া ১০ বছরের জন্য শো-রুম দুটি ভাড়া নেন। ১০ লাখ টাকা জামানতের বিনিময়ে শো-রুম দুটি করতে দেওয়া হয়েছে। প্রতি মাসে তারা ৭ হাজার ভাড়া প্রদান করছেন। তিনি আরও বলেন, ১০ লাখ টাকা দিয়ে ওই শো-রুম দুটি সংস্কার, সীমানা প্রচীর নির্মাণ করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শ্রেণীকক্ষ সংকট নেই বলে দাবি করেন তিনি। শিক্ষার্থীদের দাবি সমুহ পূরণের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম। এবিষয়ে রংপুর জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল বলেন, বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্য, শুকুরের হাট উচ্চ বিদ্যালয়টি ১৯৪২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে বিদ্যালয়টি বেশ সুনাম অর্জন করে। তবে বিগত কয়েক বছরে স্বল্প সংখ্যক দুষ্কৃতিকারী শিক্ষক ও কমিটির সভাপতির অপকর্মের কারণে বিদ্যালয়টির শিক্ষার মানউন্নয়নের পরিবর্তে দিন দিন এর মান ক্ষুণ্ন হচ্ছে। অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জর্জরিত হয়ে পড়েছে সাবেক সভাপতি মহুবুল আলম, প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম, সহকারী শিক্ষক রিপন মিয়াসহ আরো কয়েকজন শিক্ষক! |