শিরোনাম: |
নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত, আশ্রয়কেন্দ্রে বাড়ছে মানুষ
|
নোয়াখালী প্রতিনিধি: নোয়াখালীতে টানা ভারী বর্ষণ ও উজানের পানির চাপে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গত দশদিন ধরে পানিবন্দী ও আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষের দুঃখ-কষ্ট ও দুর্ভোগের শেষ নেই। জেলার ৮টি উপজেলা ও ৭টি পৌরসভা এলাকার কোথায়ও কোমর পানি, কোথায়ও হাঁটু পানি। চারিদিকে থৈ থৈ করছে পানি। তলিয়ে গেছে বসতঘর, রান্নাঘর, নলকূপ ও শৌচাগার। বিশুদ্ধ পানির সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। নোয়াখালীর ঘরে-বাহিরে, রাস্তাঘাটে, দোকানপাটে ক্ষেতে-খামারে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই চিত্র। এ অবস্থায় দুর্গত এলাকার বাসিন্দারা পানিবাহিত রোগসহ নানা জটিল রোগের শঙ্কায় রয়েছেন। সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে বৃদ্ধ, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুরা।
এ দুর্দশাময় পরিস্থিতিতে পানিবন্দী মানুষের মধ্যে যারা কষ্টের শেষ সীমায় পৌঁছে আর সহ্য করতে পারছেন না তারা বাড়িঘর ও সহায় সম্পদ ফেলে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছুটছেন। বানভাসি হাজার-হাজার পরিবার স্বজন ও পরিচিতজনদের আশ্রয়ে এবং লাখ লাখ মানুষ পানির মধ্যে দূর্বিসহ জীবন যাপন করছেন। গত কয়েকদিন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা জেলা শহর ও পৌরসভার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করছে। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় না করে জেলার বাহিরের বেসরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো নিজেদের মত ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করে যাচ্ছে। দবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের পানিবন্দী মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণে তৎপর রয়েছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, জেলা পুলিশ, রাজনৈতিক সংগঠন, রেডক্রিসেন্ট, নোয়াখালী রয়েল ডিস্টিক, নিরাপদ নোয়াখালী চাই, নোবিপ্রবি সাধারণ শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় ও সারাদেশের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও শিক্ষার্থী সংগঠন। বৃষ্টি ও পানির চাপে নোয়াখালী সদর, মাইজদী শহর এবং বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির অপরিবর্তিত রয়েছে। বুধবার দুপুরের পর সেনবাগ, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ ও সুবর্ণচর উপজেলা থেকে ধীরগতিতে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই নোয়াখালীর আকাশে রোদ জলমল করছে। তবে জেলার আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে নতুন করে লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ায় আগামী ২৪ ঘণ্টায় আবারও জেলায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ দিকে বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে পানিবন্দী মানুষর সংখ্যা যেমনি বেড়েছে, তেমনি আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ও মানুষের চাপও বাড়ছে। বেশিরভাগ আশ্রয়কেন্দ্রে ছোট একটি কক্ষে ৫-৬টি পরিবারের সদস্যরা গাদাগাদি করে থাকছেন। এরমধ্যে অনেকে নতুন করে আসছেন আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার জন্য। এ অবস্থায় আশ্রয়ন কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়াতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন। আবার নতুন করে ত্রাণসামগ্রী বরাদ্দ পাচ্ছে না প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) সকাল ১১টায় জেলার ত্রাণ পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. জাহিদ হাসান খান জানিয়েছেন, বন্যাকবলিত ৮ উপজেলা ও ৭টি পৌরসভায় সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র বেড়ে ১ হাজার ৩৬৬টি দাঁড়িয়েছে। বুধবারের চেয়ে আশ্রয়কেন্দ্র বেড়েছে ৬৩টি। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৯৩ হাজার ৫১৩ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। যা বুধবারের চেয়ে ৩০ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। ওনার ধারণা- সন্ধ্যা পর্যন্ত আরও বাড়তে পারে। বুধবার ২১ লাখ ২৫ হাজার ৫০০ পানিবন্দী ছিল। আজ পানিবন্দী সংখ্যা কমে ২০ লাখ ১৮ হাজার ৫শ’তে দাঁড়িয়েছে। এ পর্যন্ত পানিতে ডুবে ও বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে জেলায় ৮ জন মারা গেছেন। তিরি আরো জানান, জেলার পানিবন্দী মানুষের মধ্যে সরকারিভাবে নগদ ৪৫ লাখ টাকা, ১২ হাজার ৭০০ মে. টন চাল, ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ৫ লাখ টাকার শিশু খাদ্য ও ৫ লাখ টাকার পশুখাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। তবে প্রশাসনের হাতে ৫৯৩ মে. টন চাল ছাড়া অন্য কোন সরকারি ত্রাণ নেই। |