বুধবার ৩০ অক্টোবর ২০২৪ ১৪ কার্তিক ১৪৩১
হাটে গরু অনেক, দামও বেশি
Published : Thursday, 13 June, 2024 at 6:00 AM, Update: 13.06.2024 2:10:32 PM, Count : 604

বর্তমান প্রতিবেদক: ঈদুল আজহার বাকি চার দিন। দেশের কোরবানির পশুর হাটগুলোতে গরুসহ অন্যান্য পশু নিয়ে এসেছেন খামারিরা। ঢাকার ১৬ টি গরুর হাটে বিপুল সংখ্যক কোরবানির পশু বিক্রি হওয়া সত্ত্বেও দাম এখনও বেশ চড়া।

হাটগুলোতে কোরবানির পশুর সরবরাহ বেশি থাকলেও ক্রেতা কম বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। অন্যদিকে দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পেরে উঠছেন না বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। ঈদের দুই দিন আগে দাম কমে যাওয়ায় গত বছর ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়া গরু ব্যবসায়ীরা ক্রেতা কম থাকায় লোকসানের আশঙ্কায় দিন পার করছেন।

গত তিন বছরে গরু বিক্রি করে লাভের আশায় ৫ লাখ টাকা লোকসান গুণেছেন মো. বাঁধন। তিনি জানান, “এই বছর আবার লোকসান হলে ঋণ পরিশোধের জন্য আমাকে আমার জমি বিক্রি করতে হবে।” তিনি জানান, দিয়াবাড়ি গরুর হাটে ১০টি ষাঁড় নিয়ে এসেছেন, যার প্রতিটির দাম প্রায় এক লাখ টাকা করে।

কুষ্টিয়া থেকে দিয়াবাড়ি গরুর হাটে চারটি ষাঁড় নিয়ে এসেছেন জামাল হোসেন। তিনি বলেন, “ছোট আকারের ষাঁড়ের চাহিদা ভালো, কিন্তু সরবরাহ খুবই কম, যার জন্য আমি এ বছর কিছুটা লাভের আশা করছি।”

এদিকে কচুক্ষেত গরুর হাটে ৪০টি ষাঁড় নিয়ে এসেছেন আবুল কাশেম। তিনি বলেন, “গবাদি পশু রাজধানীতে আনতে আমাকে আট লাখ টাকা ঋণ নিতে হয়েছে। এখনো তেমন বিক্রি হয়নি।” গত বছরের লোকসানের কারণে অনেক কৃষক এ বছর ষাঁড় লালন-পালন করেননি বলে আবুল কাশেম তিনি।

এদিকে গাবতলী গরুর হাটেও একই অবস্থা দেখেছেন সংশ্লিষ্টরা। গত বছর ব্যবসায়ীদের লোকসানের কারণে বাজারে বড় আকারের ষাঁড়ের সংখ্যা কম ছিল।

সিরাজগঞ্জের গরু ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বলেন, “আমি ৫ লাখ থেকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা দামের ১০টি বড় সাইজের ষাঁড় নিয়ে এসেছি, যার মধ্যে গত বছর অবিক্রিত পাঁচটি ছিল।”

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের এভারেস্ট ডেইরি অ্যান্ড এগ্রো ফার্মের মালিক মুসা ইব্রাহিম বলেন, গবাদিপশুর খাবারের দাম বেশি হওয়ায় এ ব্যবসায় লাভের আশা করা সত্যিই কঠিন।

তিনি বলেন, একেকটি বড় সাইজের ষাঁড়ের জন্য আমাকে বছরে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ করতে হয়। এবছর তিনি ৫০ টি ষাঁড় লালন পালন করেছেন এই কোরবানি ঈদে বিক্রির জন্য। এর মধ্যে ২৫টি ইতিমধ্যে বিক্রি করেছেন

এদিকে দেশের উত্তরাঞ্চল ঘুরে একই চিত্র দেখা গিয়েছে। রংপুরের পাঁচ জেলা কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, রংপুর ও নীলফামারীর ৭৮টি পশুরহাটে ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতাই বেশি। ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুরহাটে গরুর সরবরাহ বেড়েছে। তবে ক্রেতা সংকটের কারণে আশানুরূপ বিক্রি করতে পারছেন না গরু খামারিরা।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ি পশুরহাটের ইজারাদার সদস্য মেহেরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, গরুর খামারিরা আশানুরূপ দামে গরু বিক্রির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করলেও ক্রেতা না থাকায় তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। সরবরাহকৃত গবাদি পশুর মাত্র ২০-২৫ শতাংশ বিক্রি হচ্ছে। প্রতি হাটের দিনে প্রায় ৬-৭ হাজার গবাদি পশু সরবরাহ করা হচ্ছে।

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার চর জোড়গাছ এলাকার গরু খামারি সোহরাব হোসেন (৬০) গণমাধ্যমমকে বলেন, তিনি বিক্রির জন্য দুটি গরু এনেছিলেন কিন্তু একটি বিক্রি করেছেন। দাম কম হওয়ায় তিনি ও অন্য খামারিরা তাদের গরু বিক্রি না করেই বাড়ি ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন। পরিবারে টাকার প্রয়োজন হওয়ায় একটি গরু ৬৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন, কিন্তু এক মাস আগে এই গরুর দাম ছিল ৭০ হাজার টাকা। এ বছর গরু পালন করে আশানুরূপ লাভ করতে পারেননি বলে জানান তিনি।

পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার ইদিলপুর গ্রামের ব্যবসায়ী মজিবর রহমান তিন থেকে সাড়ে তিন মণ ওজনের একটি গরু কেনার জন্য গত এক সপ্তাহে তিনটি হাট ঘুরেছেন কিন্তু বাজেটের মধ্যে পছন্দের পশু কিনতে পারেননি।

মজিবর জানান, এক লাখ থেকে সোয়া এক লাখ টাকার মধ্যে গরু কেনার জন্য এক হাট থেকে আরেক হাটে ঘুরে বাজেটের মধ্যে পছন্দের গরু মেলাতে পারিনি।

তিন মণের গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে ১ লাখ ১০ হাজার টাকার ওপরে, সাড়ে তিন মণের গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত। অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর গরুর দাম অনেক বেশি চাওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

ভালো দাম পাওয়ার আশায় গরু ছাড়তে চাচ্ছে না খামারিরা ফলে পছন্দের গরু কিনতে এক হাট থেকে আরেক হাটে ঘুরতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft