শিরোনাম: |
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও দুর্নীতি প্রতিরোধসহ বিভিন্ন বিষয়ে সচিবদের নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর
|
বর্তমান প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন, দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং যাচাই-বাছাই করে প্রকল্প গ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয়ে সচিবদের নির্দেশনা দিয়েছেন। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সচিবদের সভায় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন। সভা শেষে সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলো তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘সকাল ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত সচিবদের সঙ্গে সভা করেন প্রধানমন্ত্রী। সভায় সব সচিব এবং সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় নির্দিষ্ট কোনো আলোচ্যসূচি ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাশা আমরা শুনতে চেয়েছি। আমাদের জন্য তাঁর নির্দেশনা কি সেটি আমরা জানতে চেয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী জাতীয় নির্বাচনে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও সচিব এবং জনপ্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা সুসংহত হয়েছে।’ ‘গত সচিব সভার পরে যেসব কার্যক্রম হয়েছে, সেটি নিয়ে আলোচনা করেছি। কিছু বিষয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছি। ১৫/১৬ জন সচিব আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। ১১ জন সচিব সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।’ মাহবুব হোসেন বলেন, ‘সচিবদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দায়িত্ব পালনে আত্মপ্রত্যয়, আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মান সমুন্নত রেখে যেন নিজ নিজ ক্ষেত্রে আমরা দায়িত্ব পালন করি।’ তিনি বলেন, ‘সভায় প্রথমে নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে আলোচনা হয়। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও আসন্ন রমজানের প্রস্তুতি নিয়ে অবহিত করেছি। খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি, কৃষি উৎপাদন ও সার ব্যবস্থাপনা, কর্মমুখী শিক্ষা, নতুন পাঠ্যক্রম ও কর্মসংস্থান, বিদ্যুৎ সরবরাহ ও জ্বালানি নিরাপত্তা, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ, উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা, সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও আর্থিক খাতের দক্ষতা বাড়ানো নিয়ে আলোচনা করা হয়।’ মাহবুব হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘এটার ধারাবাহিকতায় এবার ইশতেহার দিয়েছেন। ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট বাংলাদেশ করতে যাচ্ছেন, সমৃদ্ধ বাংলাদেশের পথে নিয়ে যাচ্ছেন আমাদের। তারই ধারাবাহিকতা রয়েছে। জনগণ রায় দিয়েছে, দল নির্বাচিত হয়েছে, তাঁরা সরকার গঠন করেছেন। তাই, নির্বাচনী ইশতেহারটাই হবে ৫ বছরে সরকার পরিচালনার মূলনীতি দলিল। এ দলিল বাস্তবায়নের জন্য তিনি আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন।’ ইশতেহার বাস্তবায়ন সমন্বয়ের দায়িত্ব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ করবে জানিয়ে মাহবুব হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনী ইশতেহারে ১১টি অগ্রাধিকার কার্যক্রম আছে, ৩০০টির বেশি অঙ্গীকার আছে, সেটিকে ম্যাপিং করা হবে। এরপর কোন মন্ত্রণালয়ের কি কাজ সেটি চিহ্নিত করা হবে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সেই কাজগুলো করবে। কাজগুলো যাতে ঠিকমত মনিটর করা হয় সেজন্য বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি, সিটিজেন চার্টার, রাইট টু ইনফরমেশন এবং সুশাসনের যেসব টুলস আছে, সেখানে নির্বাচনী ইশতেহারের অঙ্গীকারগুলো ইন্টিগ্রেট করতে বলা হয়েছে। যাতে করে বাৎসরিকভিত্তিতে মনিটরিং করতে সুবিধা হয়।’ মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। দুর্নীতির ব্যাপারে জিরো টলারেন্সের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। এও বলেছেন, যে দুর্নীতি দমনের দায়িত্ব শুধু দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নয়। প্রত্যেক মন্ত্রণালয় ও সচিবদেরও দায়িত্ব আছে দুর্নীতি নিরসন, লাঘব করার জন্য যে সার্ভিস পয়েন্ট আছে সেখানে নজরদারির জন্য। যে প্রক্রিয়া নেওয়া যায় সে প্রক্রিয়া নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। নতুন পাঠ্যক্রমের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কিছু বলেছেন কি না-জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘নতুন যে শিক্ষাক্রম নেওয়া হয়েছে, তা প্রচলিত শিক্ষাক্রম নয়, তা থেকে ভিন্ন একটা। এ বাস্তবতা আমাদের মানতে হবে। আমরা যারা বিশেষজ্ঞ তারা প্রচলিত পাঠ্যক্রমে শিক্ষা পেয়েছি। নতুন যে পাঠ্যক্রম রচনা করতে হবে, সে ব্যাপারে প্রশিক্ষিত লোক খুব বেশি আছে তা কিন্তু নয়। যারা আছেন, তাদের কাজ হচ্ছে-তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, যদি কোনো ভুল-ভ্রান্তি, যদি কোনো তথ্যগত বা কোনো একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়, তাহলে, দ্রুত যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, কোনো বিলম্ব হবে না। কোনো গ্যাপ তৈরি হলে যেন যথাযথভাবে পর্যালোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে বলেছেন।’ প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে খুবই সতর্কতা ও বাছাইয়ের কথা বলেছেন জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যে প্রকল্পগুলো জনগণের কল্যাণে ব্যবহৃত হবে, জনগণ উপকার পাবে, সেদিকে তিনি মনোযোগ দিতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাঁর মূল লক্ষ্য হলো মানুষের অবস্থার উন্নতি। এরকম নয় যে মানুষকে দেখানো। জনমানুষের কল্যাণ হচ্ছে কি না, তাদের ভাগ্য পরিবর্তন হচ্ছে কিনা-এটি তিনি জিজ্ঞাসা করবেন, জানতে চাইবেন যে কীভাবে এটি জনগণকে সবিধা দেবে। সেভাবে যেন প্রকল্পগুলো বাছাই করা হয়। চলমান যে প্রকল্পগুলো আছে সেগুলো তিনি দ্রুত শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় যাতে অহেতুক না বাড়ে। সেজন্য আগে থেকেই পূর্ণাঙ্গ প্ল্যান করে প্রকল্প নিতে হবে। প্ল্যানিং কমিশন একটি নতুন সফটওয়্যার তৈরি করেছে, সেটির পাইলটিং চলছে এখন। পাইলটিং শেষ করে দ্রুত যাতে এই সফটওয়্যার আওতায় যাতে প্রকল্প নেওয়া হয় তিনি এই ব্যাপারে উৎসাহ দিয়েছেন। এই বিষয় তিনি বলেছেন, এটা হলে ভালো হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘মুদ্রাস্ফীতির কথা তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, মুদ্রাস্ফীতি আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির নিচে থাকতে হবে। সেটি করার জন্য তিনি কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন।’ মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘তিনি বলেছেন যে, এখনও বিরাট সংখ্যক ব্যক্তি যাদের আয়কর দেওয়ার কথা তারা আয়করের আওতায় আসেনি। তাদের যেন আয়করের আওতায় আনা হয় সেজন্য জোরালো নির্দেশ দিয়েছেন।’ প্রধানমন্ত্রী বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য পদক্ষেপ নিতে বলেছেন জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘অহেতুক যেন তারা হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে নজর রাখতে বলেছেন। বিনিয়োগ আসতে কোনো জটিলতা হলে তাঁর নজরে যেন সেটি নেওয়া হয়। কোনো কারণে যদি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয় তিনি তা ভালো চোখে দেখবেন না এবং তা ভালোভাবে নেবেন না।’ মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে নজরদারি করতে বলেছেন। নজরদারি করার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট একটি ক্ষেত্রের কথাও তিনি বলেছেন। অনেক সময় দ্রব্যমূল্যের জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পর্যায়ে চাঁদাবাজির প্রসঙ্গ আসে, নিউজ আসে। এক্ষেত্রে তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে খুবই শক্তভাবে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। এটি যাতে কোথাও না হয়। কোন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী পণ্য পরিবহনের চাঁদাবাজি প্রতিরোধের কথা বলেন- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাজার মনিটরিংয়ের জন্য যে নির্দেশনা দিয়েছেন, সেই নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তিনি বলেছেন, এ রকম কারণে অনেক সময় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। সুতরাং এটি যাতে না হয়। এজন্য সংশ্লিষ্টদের তিনি খুবই শক্তভাবে মাঠে থাকতে বলেছেন।’ প্রধানমন্ত্রী সরকারি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, ‘গার্মেন্টসের যে সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়, কৃষিজাত পণ্য, চামড়া এবং পাটজাত পণ্যে একই রকম সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন এবং কাজ করতে বলেছেন। গার্মেন্টসের ক্ষেত্রে একটা বড় অংশ আমদানি করতে হয়। একটা বড় অংশ চলে যায় আমদানি ক্ষেত্রে। এই তিনটি পণ্যে আমাদের স্থানীয়ভাবে কাঁচামাল আছে। সুতরাং এখানে ভ্যালু অ্যাড অনেক বেশি হবে।’ প্রধানমন্ত্রী খাদ্য উৎপাদনে নজর দিতে বলেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ, জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য বলেছেন। বিশেষ করে সেচ মৌসুমে সতর্কতার সাথে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে বলেছেন। কোনোভাবে যেন সেচ মৌসুম বাধাগ্রস্ত না হয় সেটির খেয়াল রাখতে বলেছেন। সেচের ক্ষেত্রে সোলার এনার্জি ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়েছেন।’তিনি আরও বলেন, ‘বইমেলা জেলার বাইরে উপজেলা পর্যায়ে নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।’ মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘শূন্য পদ পূরণের জন্য উদ্যোগ নিতে বলেছেন এবং সময়মতো পদোন্নতির জন্য বলেছেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পে যারা আছেন প্রয়োজনে তাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিশেষ উদ্যোগ নিতে বলেছেন। খাদ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা উন্নত রাখার জন্য বলেছেন। এখন যে ক্যাপাসিটি আছে তা বৃদ্ধির জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।’ |