শিরোনাম: |
গাজার ধ্বংস চেয়ে ইসরায়েলের টিভিতে শিশুদের গান, নেটিজেনদের ক্ষোভ
|
গাজায় ফিলিস্তিনিদের ‘নিধন’কে উৎসাহিত করে এমন একটি গান ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় টিভিতে শিশুদের গাইতে দেখা গেছে। পরে ভিডিওটি অনলাইন মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে নেটিজেনদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, ‘ফ্রেন্ডশিপ সং–২০২৩’ শিরোনামের ভিডিওটি গত ১৯ নভেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করা হয়েছিল। সিভিল ফ্রন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা ভিডিওটি পরে অবশ্য সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ভিডিওতে দেখা গেছে ইসরায়েলি শিশুরা এক সঙ্গে দাঁড়িয়ে কোরাস ভঙ্গিতে গান গাইছে। তাদের পেছনে ইসরায়েলি পতাকা দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া ভিডিওটির সঙ্গে ইসরায়েলি সেনাদের সক্রিয় যুদ্ধ, বোমা হামলা ও শোক পালনের চিত্র যুক্ত করা হয়েছে। গানের কথাগুলো নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে শিকাগোভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইলেনট্রনিক ইন্তিফাদা। গানের কথাগুলো ছিল এমন—‘গাজার সৈকতে শরতের রাত নেমেছে, বিমান বোমাবর্ষণ করছে, ধ্বংস, ধ্বংস হচ্ছে। অন্য কোনো বছরে সেখানে কিছুই থাকবে না এবং আমরা নিরাপদে বাড়িতে ফিরে আসব। এক বছরের মধ্যে আমরা সবাইকে ধ্বংস করে দেব এবং তারপরে আমরা আমাদের ক্ষেত চাষে ফিরে যাব। আমরা আজ বিশ্বকে দেখাব কীভাবে আমরা শত্রুদের ধ্বংস করি।’ গানের এই কথাগুলো নিয়ে নেটিজেনদের মধ্যে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। লায়লা আলারিন নামের একজন এক্স ব্যবহারকারী লিখেছেন, গাজার ধ্বংস চেয়ে ইসরায়েলি শিশুদের গাওয়া গানটি দেখে ভীষণ খারাপ লেগেছে। কারণ ফিলিনস্তিনি শিশুরাও তো এই যুদ্ধে ভুগছে। হাজার হাজার শিশু ধ্বংসস্তুপের নিচে মারা গেছে। তারতানমার্ভেল৮৯ নামের আরেকজন ব্যবহারকারী অভিভাবকদের উদ্দেশে লিখেছেন, আমি শিশুদের দোষ দেই না। দোষ দেই অভিভাবকদের। তারা কীভাবে ছোট ছোট সন্তানদের এমন বিদ্বেষমূলক গান গাওয়ার অনুমতি দিলেন! ভিডিওটির পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে অনেকেই গাজার শিশুদের গাওয়া একটি গানের ভিডিও শেয়ার করছেন। সেই ভিডিও দেখা যাচ্ছে, গাজার শিশুরা সুরে সুরে বলছে, আমাদের থাকার জায়গা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, আমাদের স্বাধীনতা চুরি হয়ে গেছে। মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ আরব জানিয়েছে, ইসরায়েলি শিশুদের গাওয়া গানের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সরিয়ে নেওয়ার আগে ‘কান’ নামে পরিচিত ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম তাদের ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছিল। কান বলেছে, ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে যেসব ইসরায়েলি জীবন দিয়েছেন, তাঁদের স্মরণে রচিত একটি গান থেকে ফ্রেন্ডশিপ সং–২০২৩ রূপান্তর করা হয়েছে। এদিকে মালয়েশিয়ার সাংবাদমাধ্যম নিউ স্টেটস টাইমস জানিয়েছে, সিভিক ফ্রন্ট নিজেদেরকে ‘অরাজনৈতিক’ আন্দোলনকারী গোষ্ঠী হিসেবে পরিচয় দেয়। গোষ্ঠীটি গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর গঠিত হয়েছে। তারা সম্প্রতি একটি সিরিজ ভিডিও তৈরি করেছে, যেখানে গাজা ধ্বংসের আহ্বান জানানো হয়েছে। ভিডিওটির নির্মাতা অফের রোজেনবাউম আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘যারা মানুষ নয়, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাই আমাদের দায়িত্ব। আমাদের গানের কথাগুলো মানবতার কথাই বলে।’ গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েল ও গাজার স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। এ যুদ্ধে ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ১৩ হাজারে ৩০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। অন্যদিকে হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল সরকার। এরই মধ্যে ৪৬ দিন পেরিয়ে গেলেও যুদ্ধবিরতির কোনো লক্ষণ নেই। যদিও জাতিসংঘসহ আরব দেশের নেতারা বারবার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছেন। |