শিরোনাম: |
নামাজের কাতারে ইউএনওকে সরে দাঁড়াতে বলা ইমামের চাকরি যায়নি
|
কুমিল্লা প্রতিনিধি : খুতবা শেষে জুমার নামাজ শুরুর আগে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে (ইউএনও) ‘একটু সরে কাতারে (লাইনে) দাঁড়াতে’ বলাকে কেন্দ্র করে মসজিদের ইমামকে হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কুমিল্লার লালমাই উপজেলার পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নের ভাটরা কাচারি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে গত শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) জুমার নামাজ শেষে এ ঘটনা ঘটে। তবে লালমাইয়ের ইউএনও মো. ফোরকান এলাহি অনুপম বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। এদিকে এ ঘটনার পর মসজিদের ‘ইমামকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে’ বলে গণমাধ্যম প্রকাশসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়ে পড়েছে। রোববার (১৬ অক্টোবর) বিকালে মসজিদের ইমাম মাওলানা আবুল বাশার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘তিনি হেনস্তার শিকার হয়েছেন। ওইদিন নামাজ শেষে ইউএনও তাকে ডেকে নিয়ে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন বিষয়ে নানা প্রশ্ন করেছেন, তবে তার চাকরি যায়নি।’ এদিকে রোববার বিকালে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের কক্ষে ঐ ইউএনও, ইমাম এবং বাংলাদেশ খতিব কাউন্সিল, জেলা ইমাম সমিতির নেতৃবৃন্দের এক বৈঠকে বিষয়টির সুরাহা হয়েছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় এলাকার কয়েকজন জানান, লালমাই উপজেলার ইউএনও ফোরকান এলাহি অনুপম গত শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) ওই উপজেলার ভাটরা কাচারি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশের একটি পুকুরে সকাল থেকেই বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করছিলেন। এদিন বেলা সোয়া একটার দিকে জুমার নামাজ পড়তে যখন তিনি ঐ মসজিদে প্রবেশ করেন তখন খুতবা শেষ হয়। এরপর মসজিদের মুয়াজ্জিন পারভেজ হোসেন ইউএনওকে একটু সরে লাইনে দাঁড়ানোর জন্য বলেন। তারা আরও জানান, ইউএনও নামাজ শেষে মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনকে পুকুরের ঘাটলায় ডেকে নেন। এরপর ইউএনওকে চেনেন কি না জানতে চান। তখন ইমাম আবুল বাশার বলেন, ইউএনওকে চিনতে পারেননি। এ জন্য তিনি দুঃখও প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে ইউএনও ক্ষুব্দ হয়ে ইমামকে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন বিষয়ে নানান প্রশ্ন করেন। রোববার দুপুরে মসজিদের ইমাম মাওলানা আবুল বাশার বলেন, ‘আমরা তো ইউএনওকে চিনি না। মসজিদে মুসল্লিরা নামাজ পড়তে আসেন। নামাজ শুরুর আগে ডান-বাঁ দেখে লাইনে (সারি) দাঁড়ানোর জন্য সব সময়ই বলা হয় মুসল্লিদের। এটা তো দোষের কিছু নয়। এরপরও তিনি তার মতো করে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়েছেন। নামাজ শেষে তিনি আমাকে ও মুয়াজ্জিনকে ডেকে নেন। এরপর বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করার পর চলে যেতে বলেন। পরে স্থানীয়রা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, আমাকে চাকরিচ্যুত করা হতে পারে। দুপুরে লালমাইয়ের ইউএনও মো. ফোরকান এলাহি অনুপম বলেন, আমি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আছি, পরে কথা বলবো। ইউপির চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুল্লাহ বলেন, ইমামের চাকরি যাওয়ার বিষয়টি জানা নেই। এদিকে, রোববার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়ার অফিস কক্ষে লালমাইয়ের ইউএনও মো. ফোরকান এলাহি অনুপম, বাংলাদেশ খতিব কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মাওলানা শামীম মজুমদার, কুমিল্লা জেলা ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা মিজানুর রহমানসহ দুই সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বেশ কয়েকজন নেতা, মসজিদের ইমাম মাওলানা আবুল বাশার, স্থানীয় পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুল্লাহসহ এক বৈঠক হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া সাংবাদিকদের জানান, ‘বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। ভুল বুঝাবুঝির কারণে এমনটি হয়েছে। বৈঠকে বিষয়টির সুরাহা হয়েছে। বৈঠক শেষে ইউএনওর গাড়িতে করে ইমাম লালমাইয়ের উদ্দেশ্যে চলে গেছেন।’ বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে মসজিদের ইমাম মাওলানা আবুল বাশার বলেন, ভুল বুঝাবুঝির কারণে এমন প্রচারণা হয়েছে। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বিষয়টির সুরাহা হয়েছে। তিনি বলেন, আমার চাকরি যায়নি। আমি বহাল আছি। লালমাইয়ের ইউএনও মো. ফোরকান এলাহি অনুপম বলেন, বিষয়টির সুরাহা হয়েছে। এর বেশি কিছু বলবো না। |