শিরোনাম: |
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের আরেকটি পদক্ষেপ : প্রধানমন্ত্রী
|
বর্তমান প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (আরএনপিপি) স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার আরেকটি পদক্ষেপ। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আগামীতে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। এই পরামাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র সেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার আরেকটি পদক্ষেপ।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ অপরাহ্নে ‘আরএনপিপি’র জন্য পরমাণু জ্বালানি গ্রহণ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দেয়া ভাষণে একথা বলেন। অনুষ্ঠানে মস্কোর ক্রেমলিন থেকে রুশ ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুক্ত হন। ভিয়েনা থেকে ‘আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা- আইএইএ’র মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রসিও রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প এলাকায় আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আগামীতে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। এই পরামাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র সেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার আরেকটি পদক্ষেপ। তিনি বলেন, ‘কাজেই, আমরা এটাই মনে করি, আজকের বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। আমরা নিউক্লিয়ার যুগে প্রবেশ করেছি।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু প্রতীম দেশ রাশিয়ান ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ভাচুয়ালি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে দেশসহ সকলকে সম্মানিত করায় তিনি রাশিয়ার ফেডারেশন এবং এর প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে তাঁর সরকার, দেশবাসী এবং তাঁর ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান এবং বাংলাদেশ-রাশিয়া বন্ধুত্ব অটুট থাকবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তেজস্ক্রিয় জ্বালানি হস্তান্তর করার ফলে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৩তম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় পারমাণবিক জ্বালানী ব্যবহারকারী রাষ্ট্র। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে এই শক্তিকে শান্তির জন্য ব্যবহারের এবং পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তির বাস্তবায়নের প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার পুণর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, পরমাণু শক্তি আমরা শান্তি রক্ষায় ব্যবহার করবো। আমরা বিশ^ব্যাপী পারমাণবিক অস্ত্রের সাধারণ ও সম্পূর্ণ নির্মূল এবং পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তির বাস্তবায়নের প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছি। আমরা “বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ আইন” প্রণয়ন করেছি এবং একটি স্বাধীন পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করেছি। এই কর্তৃপক্ষ ‘আইএইএ’-এর সাথে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রতিটি স্তরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটে জয়ী হয়ে আমরা সরকার গঠন করি। ২০২০ সালের মধ্যে ‘সবার জন্য বিদ্যুৎ’ সরবরাহের লক্ষ্য নিয়ে ‘ভিশন স্টেটমেন্ট ও পলিসি স্টেটমেন্ট অন পাওয়ার সেক্টর রিফর্মস’ প্রণয়নও অনুমোদন করি। ১৯৯৬ সালে আমরা জ¦ালানি নীতিতে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করি। ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প’ বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু করি। ‘বাংলাদেশ নিউক্লিয়ার পাওয়ার একশন প্লান-২০০০’ প্রণয়ন করি। ‘আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা’ ‘আইএইএ’ এর সহযোগিতা চাই। ‘আইএইএ’ -এর আান্তরিক সহায়তায় আমরা একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনাও গ্রহণ করি এবং একটি বিশেষ কমিটিও করে দেয়া হয়। এরপর সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এই প্রকল্প আর আগায়নি এবং ২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০০৯ সালে পুনরায় আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে এই রূপপুর পরমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প আবারো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ সরকার, বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা দিয়েছিলাম আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে কাজেই তারসঙ্গে সঙ্গতি রেখে আবার রূপপুর প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করি। বন্ধুরাষ্ট্র রাশিয়া এটি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে। তাছাড়া, ‘আইএইএ’ শুরু থেকেই আমাদের নানাভাবে সহায়তা করে আসছে। এজন্য আমি রাশিয়ান ফেডারেশন সরকার, আইএইএ এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। তিনি প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে তাঁর রাশিয়া সফরে পুতিনের সঙ্গে মস্কোতে বৈঠক এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, “২০১৩ সালের ২ অক্টোবর প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছি। এখন পর্যন্ত আপনার সর্বাত্মক সহযোগিতায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।” তিনি বন্ধু রাষ্ট্র ভারত এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও ধন্যবাদ জানান এই নির্মাণ কাজে সহযোগিতার জন্য। তিনি ২০১৭ সালে ‘আইএইএ’-এর তৎকালীন মহাপরিচালক ইউকিও আমানো’র আমন্ত্রণে ভিয়েনা সফরের সময় ‘আইএইএ’-এর সদর দফতরে বিশেষজ্ঞবৃন্দের সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে সেই সময় এই প্রকল্পে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে তাদের সার্বিক সহায়তা ও মনিটরিং করার আহ্বানের উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সেই থেকে ‘আইএইএ’ আমাদের এ বিষয়ে সার্বিক সহায়তা প্রদান করছে। এরপর ২০১৭ ও ২০১৮ সালে আমি এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিটের কংক্রিট ঢালাইয়ের উদ্বোধন করি। ২০২১ ও ২০২২-এ এই কেন্দ্রের যথাক্রমে ইউনিট-১ ও ইউনিট-২ এর রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল স্থাপন করি। আজ এই কেন্দ্রে পারমাণবিক জ¦ালানি সংযুক্ত হলো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রেটি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় জনবলকে রাশিয়ান ফেডারেশন যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। যেহেতু বন্ধুপ্রতিম ভারতেও একই রকম একটি প্রকল্প হচ্ছে-সেজন্য আমাদের কিছু জনবলকে প্রশিক্ষণের জন্য আমরা ভারতেও প্রেরণ করেছি। প্রধানমন্ত্রী এ সময় এদেশে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় যুদ্ধ বিধ্বস্থ স্বাধীন দেশ গঠনকালেই জাতির পিতার প্রচেষ্টার উল্লেখ করে বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা মাত্র নয় মাসেই একটি সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন। ‘গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি বিপ্লব’ শিরোনামে সেই সংবিধানের ১৬ নম্বর অনুচ্ছেদ-এ যুক্ত করেছিলেন- “নগর ও গ্রামাঞ্চলের জীবন যাত্রার মানের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করিবার উদ্দেশ্যে কৃষি বিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে বৈদ্যুতীকরণের ব্যবস্থা, কুটিরশিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগ-ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল রূপান্তর সাধনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।” সে লক্ষ্যে তিনি প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুতায়ণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সমুদ্র সম্পদ এমনকি খনিজ সম্পদ জাতীয়করণ করেছিলেন এবং বিদেশী ও বহুজাতিক কোম্পানীগুলো থেকে আমাদের গ্যাস ফিল্ডগুলো কিনে নিয়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন এবং নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগের নির্দেশ দিয়েছিলেন, বলেন প্রধানমন্ত্রী। |