শিরোনাম: |
বিচারপতি ও বিচারকদের অবসর গ্রহণের বয়সসীমা বাড়ছে?
|
নজমূল হক সরকার: সারাবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও বিচারপতিদের অবসর গ্রহণের সময়সীমা বাড়ানোর কথা সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে সরকার। জনগণের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে ও মামলার দীর্ঘসূত্রতার জট খুলতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে সরকারের নীতি-নির্ধারক পর্যায়ে আভাস পাওয়া গেছে। মামলার জট নিরসনের লক্ষে; বিচারকার্যে গতিশীলতা আনতে ও হয়রানি রোধে বিচারপতিদের অবসর গ্রহনের সময়সীমা বাড়নো হতে পারে। বিচারপতিদের সঙ্গে বিচারকদেরও বয়সসীমা বাড়ানো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনে না হলেও পরবর্তী অধিবেশনে বিচারক ও বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধি সংক্রান্ত আইন পাশ হতে পারে বলে বিশ্বস্ত একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র এ খবর নিশ্চিত করেছেন।
সূত্র জানায়, বিচারকার্য পরিচালনার জন্য যোগ্য ও পরীক্ষিত বিচারপতিদের অভাব থেকে থাকে, তাই এটি সময়ের দাবি। পৃথিবীর বহু দেশে বিচারপতিদের বয়সসীমা এ দেশের থেকে বেশি। আমেরিকায় বিচারপতিরা আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করেন। যুক্তরাজ্যে ৭২ বছর। পাশ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানেও বিচারকদের বয়সসীমা বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) আদালত শেষে সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের ২য় জেষ্ঠ্য বিচারপতি নুরুজ্জামান ননীকে বিদায় সংবর্ধনা দেয়া হয়, পবিত্র হজ্জব্রত পালন করতে যাবেন বিধায় বৃহস্পতিবার ছিল উনার শেষ কার্যদিবস। তিনি আগামী ৩০ জুন অবসরে যাচ্ছেন। আপীল বিভাগের অন্য ৬ বিচারপতির মধ্যে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ০৩.০৯.২০২০ তারিখ আপীল বিভাগে শপথ নেন, সে হিসাবে তার ২ বছর ৯ মাস ১৩ দিন অতিবাহিত হয়েছে। বিচারপতি বোরহানউদ্দিন ও বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ০৯.০১.২০২২ তারিখে আপীল বিভাগের বিচারপতি হিসাবে শপথ নেন সে হিসাবে ১ বছর ৫ মাস ৭ দিন অতিবাহিত হয়েছে। বাকি ৩ জন বিচারপতি মোঃ আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি মোঃ আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ০৮.১২.২০২২ তারিখে আপীল বিভাগের বিচারপতি হিসাবে শপথ নেন, সে হিসাবে মাত্র ৬ মাস ৮ দিন আপীল বিভাগে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। আবার বর্তমান প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর অবসরে যাওয়ার কথা। তাই তাঁর অবসরের পর আপীল বিভাগে অভিজ্ঞ বিচারপতির সংকট প্রকট হবে। উল্লেখ্য, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ২০১৩ সালে ৩১ মার্চ আপীল বিভাগের বিচারপতি হিসাবে শপথ নেন। তাঁর মতো একজন দক্ষ বিচারপতি অবসরে গেলে আপীল বিভাগে দক্ষতার সংকট হবে বিধায় বর্তমান সরকার সুপ্রীম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা আরও ২ বছর বৃদ্ধি করে ৬৯ বছর করার চিন্তা ভাবনা করছে। প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আইনমন্ত্রী, এটর্নি জেনারেল ও বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্ট বেশকয়েকজন এর সাথে আলোচনা করেছেন। এর আগে এক রায়ে অভিজ্ঞ বিচারক সংকটের কথা উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৭৫ করার প্রস্তাব করেছিলেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপিতে দ্বিমত পোষণকারী বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল এ প্রস্তাব রাখেন। রায়ে তিনি উল্লেখ করেন, যেহেতু অভিজ্ঞ বিচারকের সংকট দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে, সেহেতু আমি মনে করি সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অবসর গ্রহণের বয়স ৭৫ বৎসরে উন্নীত করা একান্তভাবে প্রয়োজন এবং অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। সেই লক্ষ্যে আমি মহান জাতীয় সংসদের নিকট সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছদের (১) উপ-ধারা সংশোধনপূর্বক বিচারকদের অবসর গ্রহণের বয়স ৬৭ এর স্থলে ৭৫ করার প্রস্তাব করছি। এর আগে ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে আইন কমিশন এ সংক্রান্ত একটি সুপারিশ আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল। যাতে বলা হয়েছিলো- বিচারপতি পদে নিয়োগে কমপক্ষে ৫০ বছর বয়স এবং অবসর গ্রহণের বয়স ৭৫ বছর নির্ধারণ করলে অভিজ্ঞ বিচারক দক্ষতার সঙ্গে অধিক সময় বিচারিক দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবেন। তবে এই বিধান কেবল নতুন নিয়োগ প্রাপ্তদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে হবে। সংবিধানের ৯৬ (১) অনুচ্ছেদ অনুসারে বর্তমানে বিচারপতিদের বয়সসীমা সাতষট্টি বৎসর। এর আগে ১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর সংবিধানের সপ্তম সংশোধনীতে বিচারপতিদের অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ করা হয়। সর্বশেষ ২০০৪ সালের ১৬ মে চতুর্দশ সংশোধনীতে বিচারপতিদের অবসর গ্রহণের বয়সীমা ৬৫ থেকে ৬৭ করা হয়। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়। বিলটি পাসের পর ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। |