রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
মেসি জাদুকরী, মেসি পারেন!
Published : Sunday, 27 November, 2022 at 6:00 AM, Count : 716

বর্তমান ডেস্ক: ২০১৪ থেকে ২০১৮, ব্রাজিল থেকে রাশিয়া, আগের দুই বিশ্বকাপেই আর্জেন্টিনার যাত্রাপথটা মনে আছে তো আপনাদের? খোদ আর্জেন্টিনা ভক্ত শুধু না, মনে থাকার কথা তার শত্রুদেরও। আলবিসেলেস্তাদের সেই যাত্রাপথে বারবার ত্রাতা হয়ে ওঠা 'মেসি' নামক এক জাদুকরের নামটা কিভাবে ভুলতে পারে কেউ? আর্জেন্টাইন জাদুকরের সেই জাদুকরী বাঁ পায়ে আঁকা হয়েছে কতশত রাতজাগা রূপকথার গল্প। সেই গল্পের সাক্ষী হয়ে বেড়ে উঠেছে একটা গোটা প্রজন্ম।

২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপে এসে কেনো চার বা আট বছর আগের দুই বিশ্বকাপের ইতিহাস টেনে আনা? ফুটবলভক্তদের বেশ ভালোভাবে জানা থাকার কথা এই প্রশ্নের উত্তর। ২০২২'এ এসেও আগের দুই বিশ্বকাপের পুনারাবৃত্তিই কি ঘটালো আর্জেন্টিনা? আক্ষরিক অর্থে বলতে গেলে মেসি?

বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন নিয়ে কাতারে আসা আর্জেন্টিনা যে প্রথম ম্যাচেই হেরে বসে নিজেদের গ্রুপের সবচেয়ে দুর্বল দল সৌদি আরবের কাছে। বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন নিয়ে মরুর বুকে পা রাখা আর্জেন্টাইনদের সামনে শঙ্কা গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ পড়ার। খাঁদের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা সেই দলকে আরও একবার টেনে তুললেন মেসি নামের সেই জাদুকর। আইসিইউতে ধুকতে থাকা আর্জেন্টিনাকে এনে দিলেন একরাশ অক্সিজেন। জিইয়ে রাখলেন ৩৬ বছরের অপেক্ষার সমাপ্তি ঘটিয়ে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন।


চলুন, আরও একবার ফিরে যাওয়া যাক ইতিহাসের পাতায়। ২০১৪ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনার বিপক্ষে ২-১ গোলের জয় দিয়েই বিশ্বকাপের শুভসূচনা করেছিলো আর্জেন্টিনা। সেই ম্যাচে দলের জয়সূচক গোলটি এসেছিলো এই মেসির পা থকেই।

দ্বিতীয় ম্যাচে এসেই এশিয়ার দল ইরানের সামনে খেই হারিয়ে বসে আর্জেন্টিনা। আপ্রাণ চেষ্টা করেও পুরো ৯০ মিনিটে ইরানের রক্ষণব্যূহ ভাঙতে পারলো না আলবিসেলেস্তারা। ম্যাচের তখন ইনজুরি টাইম চলে। ৯১ মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে বল পেলেন মেসি। বাঁ পায়ে নিলেন কোনাকুনি এক শট, তার সেই শটেই ইরানকে হারিয়ে দ্বিতীয় পর্ব নিশ্চিত হলো আর্জেন্টিনার। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচেও নাইজেরিয়ার বিপক্ষে করলেন জোড়া গোল। দলকে জিতিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন করেই নক-আউটে তুললেন মেসি।

চার বছর পেরিয়ে রাশিয়ার মাটিতে ২০১৮ বিশ্বকাপ। রাশিয়ার মাটিতে সূচনাটা খুব একটা ভালো হলো না লিওনেল মেসির দলের। আইসল্যান্ডের সঙ্গে ১-১ গোলের ড্র করে পয়েন্ট হারালো আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয় ম্যাচে তো অবস্থা আরও নাজুক, ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ৩-০ গোলে হেরে বসলো আলবিসেলেস্তারা। নক-আউটে উঠতে হলে শেষ ম্যাচে জয়ের কোনো বিকল্প ছিলো না আর্জেন্টিনার সামনে। প্রতিপক্ষ আগেরবারের সেই নাইজেরিয়া। ডু অর ডাই ম্যাচে ১৪ মিনিটেই নাইজেরিয়ার জালে বল জড়িয়ে আর্জেন্টিনাকে যেন জয়ের মন্ত্র শিখিয়ে দিলেন মেসি। ২-১ গোলে সেই ম্যাচ জিতে নিশ্চিত হলো নক-আউট রাউন্ড।

পুরোনো ইতিহাসের পাতা থেকে ঘুরে এবার একটু বর্তমানে ফেরার পালা। বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন নিয়ে অন্যতম ফেভারিট হয়ে যেই দলটা পা রেখেছিলো কাতারের মাটিতে, তারাই কিনা প্রথম ম্যাচে হেরে বসলো 'আন্ডার ডগ' সৌদি আরবের কাছে। আগের দুই বিশ্বকাপের চেয়ে এবারের সূচনাটা যে আরও বাজে। বিশ্বকাপের স্বপ্ন নিয়ে এসে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা নিয়েই শঙ্কা। শেষ শোলোর টিকিট পেতে হলে জিততেই হবে পরের দুই ম্যাচ। তবে সেই দুই ম্যাচ তো আরও কঠিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে।

আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ স্বপ্ন কি থেমে যাবে প্রথম রাউন্ডেই? একজন জাদুকর 'মেসি' থাকাতে হয়তো আশা রাখা যায় চরম দুঃসময়েও। জিতলে টিকে থাকবে নক আউটের আশা, হারলে বাদ প্রথম পর্ব থেকেই, এমন 'ডু অর ডাই', ম্যাচে আলবিসেলেস্তাদের প্রতিপক্ষ মেক্সিকো। একজন মেসির ওপর ভর করেই যেন আশা রাখলো সারা বিশ্বের আর্জেন্টাইন ভক্ত-সমর্থক। তিনি মাঠে নামলেন অগণিত ভক্তের প্রত্যাশার চাপ মাথায় নিয়েই। দেখালেন তার ওপর কেনো এতোটা আশা করা যায়।

মেক্সিকোর বিপক্ষেও হার বা ড্রয়ের শঙ্কা পেয়ে বসতেই পারে যে কোন আর্জেন্টাইন ভক্তের। প্রথমার্ধে যে অনেকটা নিষ্প্রভ মেসি, সঙ্গে আর্জেন্টিনাও। সেই মেসি খোলস ছাড়লেন দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমেই। মেক্সিকান রক্ষণদেয়াল ভেঙ্গে আর্জেন্টিনাকে এগিয়েও নিলেন অধিনায়ক নিজেই। ম্যাচের তখন ৬৪ মিনিট, ডি-বক্সের একটু বাইরে পেয়েছিলেন বল, বাঁ পায়ের দুর্দান্ত এক শটে বারপোস্টের কোল ঘেষে বল জড়ালো মেক্সিকোর জালে। উল্লাসে মাতলো লুসাইল স্টেডিয়ামের আকাশী-সাদার গ্যালারি। সেই উল্লাস যেন ছুঁয়ে গেলো সুদূর আর্জেন্টিনার রোজারিও থেকে ঢাকা শহরের টিএসসিতেও।

মেসি ম্যাজিকের বাকি রয়েছে তখনও, ম্যাচের প্রথমার্ধে যেখানে আপ্রাণ চেষ্টা করে ভাঙা যায়নি মেক্সিকোর রক্ষনদেয়াল, সেখানে দ্বিতীয়ার্ধে সেটি ভেঙেছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। এরপর যেন বাকি কাজটুকুও নিজের কাঁধেই তুলে নিলেন মেসি। বদলি নামা এনজো ফার্নান্দেজ ৮৭ মিনিটে যে গোলটি করেলেন তার পেছনের কারিগরও তো এলএম টেন নিজেই। মেসিময় এক ম্যাচে ২-০ গোলের জয় তুলে নিয়ে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় পর্বের আশা বাঁচিয়ে রাখলো আর্জেন্টিনা। শুধু কি দ্বিতীয় পর্ব? বিশ্বকাপের স্বপ্নটাও যে এখনও দেখতেই পারেন আর্জেন্টাইনরা।

একজন মেসি ছিলেন বলেই হয়তো ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প লেখা সম্ভব। খাঁদের কিনারায় দাড়িয়েও কিভাবে প্রত্যাবর্তনের ইতিহাস লিখতে হয় সেটি যেন আরও একবার প্রমাণ করলেন মেসি।

কাতারের মাটিতে বিশ্বকাপের নক-আউটে উঠতে হলে সামনে আরও এক পরীক্ষা অপেক্ষা করছে আর্জেন্টিনার জন্য। সেই পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর একটাই, একজন মেসি আছেন তো। হয়তো আরো একবার জ্বলে উঠবেন আলবিসেলেস্তাদের প্রয়োজনে। শেষমেশ পারবেন কিনা মেসি সেই প্রশ্ন তোলা থাক ভবিষ্যতের জন্য। তবে একজন মেসির কাঁধে চড়ে আর্জেন্টিনার ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প লেখা চলুক অবিরত, এমনটা চাওয়া থাকবে সারাবিশ্বের ফুটবলভক্তদেরই।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft