শিরোনাম: |
ট্রাম্পকে সরাতে ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগের প্রস্তাব নাকচ করলেন পেন্স
|
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে তার পদ থেকে সরাতে সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগের যে প্রস্তাব ডেমোক্র্যাটরা এনেছিল, তা নাকচ করে দিয়েছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স।
এক প্রতিবেদনে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিকে চিঠি দিয়ে মঙ্গলবার তিনি বিষয়টি জানিয়েছেন। গত সপ্তাহে ট্রাম্পের সমর্থকরা যুক্তরাষ্ট্রে কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে হামলার পর সোমবার ডেমোক্র্যাটরা প্রতিনিধি পরিষদে ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্সকে সংবিধানের ২৫ তম সংশোধনী প্রয়োগ করে ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে সরানোর প্রস্তাব তোলে। ওই প্রস্তাব নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রতিনিধি পরিষদের ভোটের প্রস্তুতির মধ্যে পেন্স তার পাঠানো চিঠিতে বলেন, এ ধরনের পদক্ষেপ আমাদের জাতির স্বার্থ সবচেয়ে ভালোভাবে রক্ষা করবে বা এটি আমাদের সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে বলে আমি মনে করি না। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট যদি শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে দায়িত্ব চালিয়ে যেতে ‘অপারগ’ হন, তাহলে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ভাইস-প্রেসিডেন্ট ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব নিতে পারেন। ওই সংশোধনীর ৪ নম্বর ধারায় বলা আছে, প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা হস্তান্তর করতে না পারলে ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্য তাকে ‘দায়িত্ব পালনে অপারগ’ ঘোষণা করতে পারেন। সেক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টকে ‘দেশ শাসনে অক্ষম’ এবং ‘দায়িত্ব হস্তান্তরে অপারগ’ ঘোষণা করে প্রতিনিধি পরিষদ ও সেনেটের স্পিকারকে চিঠি দিতে হয়। নিয়ম অনুযায়ী, তখন ক্ষমতা চলে যায় ভাইস প্রেসিডেন্টের হাতে। এরপর নিয়ম অনুযায়ী, প্রেসিডেন্টকে লিখিতভাবে জবাব দেওয়ার একটি সুযোগ দেওয়া হয়। তিনি যদি সেখানে ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেন, তখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার থাকে কংগ্রেসের ওপর। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হাউজ ও সেনেট- দুই জায়গাতেই দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের প্রয়োজন হয়। আর ভোটাভুটির মাধ্যমে বিষয়টির মীমাংসা হওয়ার আগ পর্যন্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব চালিয়ে যেতে পারেন। ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পকে সরাতে সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগের প্রস্তাব তুললেও তাতে রিপাবলিকান মন্ত্রিপরিষদ যে সাড়া দেবে না, তা অনুমিতই ছিল। সে কারণে ট্রাম্পকে সরানোর চেষ্টায় ডেমোক্র্যাটরা অভিশংসনের প্রস্তাবও এগিয়ে নিচ্ছে। প্রতিনিধি পরিষদের নেতৃস্থানীয় এক সদস্যসহ অন্তত তিন জন রিপাবলিকান মঙ্গলবার জানিয়েছেন, ক্যাপিটলে হামলার অল্প কিছুক্ষণ আগে ট্রাম্প তার সমর্থকদের মিছিল নিয়ে যাওয়ার ও ‘লড়াইয়ের’ আহ্বান জানানোর কারণে তাকে অভিশংসিত করার প্রস্তাবে সমর্থন দেবেন তারা। ক্যাপিটলে ট্রাম্প সমর্থকদের ওই হামলার ঘটনায় এক পুলিশসহ পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার পরই ট্রাম্পকে সরানোর দাবি জোরালো হয়ে ওঠে, যদিও আগামী ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক পর্যন্তই তার মেয়াদ আছে। পেন্স তার চিঠিতে পেলোসিকে বলেছেন, প্রশাসন পুরো শক্তি নিয়োগ করে সুশৃঙ্খলভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর নিশ্চিত করতে চাইছে। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করে বা বিভক্তি আরও বাড়িয়ে দেয়- এমন কোনো পদক্ষেপ না নিতে পেলোসি ও কংগ্রেস সদস্যদের অনুরোধ করছেন পেন্স। তিনি বলেছেন, উত্তেজনা কমাতে আমাদের সঙ্গে কাজ করুন এবং নির্বাচিত জো বাইডেনকে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে বরণ করার প্রস্তুতির এ সময়ে আমাদের দেশকে ঐক্যবদ্ধ করুন। কংগ্রেসে বাইডেনের জয়ের স্বীকৃতি আটকে দেওয়ার চেষ্টা করতে রাজি না হওয়ায় জনসম্মুখে পেন্সের কড়া সমালোচনা করেছিলেন ট্রাম্প, আর ক্যাপিটল ভবনে হামলার পর থেকে ভাইস-প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কয়েকদিন কথা বন্ধ ছিল তার। তারপর সোমবার হোয়াইট হাউসে প্রথম কথা বলেছেন তারা। ৩ নভেম্বরের নির্বাচনের পরাজয় উল্টে দেওয়ার সবরকম চেষ্টা করেছিলেন ট্রাম্প, কিন্তু সফল হননি। নিজেদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে কংগ্রেসে বাইডেনের জয়ের অনুমোদন প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করার জন্য পেন্সের ওপর চাপও প্রয়োগ করেছিলেন তিনি। ক্যাপিটলে হামলার সময় ট্রাম্পের কিছু সমর্থক পেন্সকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ অভিহিত করে তাকে হত্যার কথাও আলোচনা করেছিল। পেলোসির কাছে লেখা চিঠিতে এসব বিষয়ও উল্লেখ করেছেন পেন্স। পেন্স লিখেছেন, গত সপ্তাহে নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণের জন্য সাংবিধানিক কর্তৃত্বের বাইরে গিয়ে ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করা হলেও আমি তাতে সাড়া দেইনি আর এখন আমাদের জাতির এই অতি গুরুত্বপূর্ণ মূহুর্তে প্রতিনিধি পরিষদের রাজনৈতিক খেলার উদ্যোগেও সাড়া দেবো না। ‘শাস্তি বা অধিগ্রহণের’ উপায় হিসেবে ২৫তম সংশোধনীর শরণ নেওয়ার মধ্যমে ‘ভয়ানক নজির স্থাপিত হতে পারে’, বলেছেন পেন্স। |