শিরোনাম: |
সবার জন্য স্বাস্থ্য
|
অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ : সবার জন্য স্বাস্থ্য বলতে বোঝায় এমন একটি স্বাস্থ্য প্রক্রিয়া যেটি একটি দেশের সব জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা ও অর্থনৈতিক সহায়তা দেবে এবং একটা প্যাকেজের মাধ্যমে সমাজের সব সদস্যকে অর্থনৈতিকভাবে প্রতিরক্ষা দেবে স্বাস্থ্যসেবার জন্য। সবার জন্য স্বাস্থ্য তিনটি জটিল প্রক্রিয়ায় বিভক্ত। (১) যাকে দেয়া হবে (২) কী দেয়া হবে (৩) কত মূল্যমানের দেয়া হবে। ১৮৮৩ সালে জার্মানিতে সর্বপ্রথম স্বাস্থ্যবিমা চালু হয়। ইন্ডাস্ট্রি কর্মচারীরা তাদের আঘাত ও অসুস্থতার জন্য সিক ফান্ড থেকে সহযোগিতা পেতেন। অন্যান্য দেশও শিগগির শুরু করছে। ইউনাইটেড কিংডম ১৯১১ সালে জাতীয় বিমা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা চালু করেছে। এছাড়া রাশিয়া, জাপান, সোভিয়েত ইউনিয়ন, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াতে ও বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা চালু করেছে। বাংলাদেশে প্রাধান্য পেয়েছে।
সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশের জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করেছে। অর্থনৈতিক বাধা সবচেয়ে বড় বাধা স্বাস্থ্যসেবার জন্য। যদিও আমরা জানি মাথাপিছু ২৭ ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে স্বাস্থ্য খাতে তবুও ৬৪% টাকা আসে মানুষের পকেট থেকে। আমাদের দেশে সংক্রামক ব্যাধি পিছিয়ে দিচ্ছে এবং অসংক্রামক ব্যাধিগুলো খুব দ্রুত চলে আসছে। আমাদের দেশের সরকার সবার জন্য স্বাস্থ্য বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে দেখছে। সরকার ইতোমধ্যে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবার রোডম্যাপ করে ফেলেছে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবার জন্য স্বাস্থ্যকে একটি পোস্ট এমডিজি লক্ষ্যে নিচ্ছেন। এটা অকল্পনীয় ব্যাপার যে আমরা খুব অল্প সময়ে আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছি। যদিও সরকারের একটি রোডম্যাপ করা আছে তারপরেও এনজিও, প্রশাসনিক গবেষণা ও উপদেষ্টা সংস্থার সাপোর্ট দরকার আছে। সবার জন্য স্বাস্থ্যনীতি সরকারের একটা চ্যালেঞ্জ। এর জন্য একটা দেশের প্রচুর সম্পদ থাকতে হবে তেমন কোনো কথা নেই। তিনটি স্বাস্থ্য নীতির সুপারিশ করেছে। (১) স্বাস্থ্যখাতে ফান্ড বাড়াতে হবে। (২) মানুষের পকেট মানি স্বাস্থ্যখাতে কমিয়ে আনতে হবে। (৩) রাষ্ট্রের পুজি থেকে খরচ কমিয়ে আনতে হবে। ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ (UHC) বা বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবা হলো বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার অঙ্গীকার ও পরিকল্পনা। সংজ্ঞায় বলা আছে এর বাস্তবায়নের মাধ্যমে যাতে করে পৃথিবীর প্রতিটা মানুষ তার প্রয়োজনীয় মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা বহনযোগ্য ও যৌক্তিক খরচে পেতে পারে। এ জন্য বাংলাদেশসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই বর্তমানে ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজের আওতায় যার যার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এমডিজি বা মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল বা লক্ষ্যসমূহ অর্জনের পর নতুনভাবে এসডিজি বা সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল বা টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যসমূহ নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে তৃতীয় লক্ষ্য হলো ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজের লক্ষ্য যার বিশ্বব্যাপী পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের ভার বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা নিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলো UHC । এমডিজি রূপকল্প বাস্তবায়নের পর বাংলাদেশ সরকার এসডিজির এই লক্ষ্য পূরণের পথে অনেকখানি এগিয়ে গেলেও বেসরকারি ও এনজিও খাতের অবস্থা আশানুরূপ নয়। যদিও আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সারা বিশ্বের জন্য মডেল হিসাবেই পরিগণিত হচ্ছে এবং আমাদের মাথাপিছু আয় ও ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলেও স্বাস্থ্যসেবা পেতে ব্যয়বাহুল্য এখনো টঐঈ লক্ষ্য অর্জনে বড় বাধা। বাংলাদেশে বর্তমানে স্বাস্থ্যখাতে জনপ্রতি বার্ষিক ব্যয় ২২ থেকে ২৩০০ টাকা খরচ হয় যার অর্ধেকের বেশি নিজের পকেট থেকে যোগাড় করতে হয়। এ কারণে ওই ব্যক্তির জীবিকার ওপর কিছুটা চাপ সৃষ্টি হয়। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে সংক্রামক রোগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, কিডনি রোগ, ক্যানসার জাতীয় অসুখের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় অনেক রোগীকে মাস এমনকি বছরব্যাপী বা আজীবন চিকিত্সার পেছনে খরচ করে যেতে হয়। এসব কারণে আমাদের স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে এবং ভবিষ্যতে আরও বাড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় টঐঈ বাস্তবায়ন করে প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমেই কেবল এই সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব। আমাদের সরকার এই লক্ষ্য অর্জনে অত্যন্ত আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টঐঈ প্রেরণা থেকে স্বাস্থ্য সেবা খাতকে সংস্কারের জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে এই দুরূহ অভীষ্ট অর্জন রাতারাতি সম্ভব নয়। আর শুধু সরকারের আন্তরিক পরিকল্পনা থেকেই এটা হয়ে যাবে এমন ভাবার অবকাশ নেই। ব্যক্তিখাত, বেসরকারি ও এনজিও খাত, চ্যারিটি ও ট্রাস্ট থেকে শুরু করে গবেষক, শিক্ষক ও উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীদেরকে এই লক্ষ্য অর্জনের রোডম্যাপ বাস্তবায়নে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করার মাধ্যমেই কেবল তা সম্ভব। লেখক: প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় |