শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪ ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ভারতে বামের পতন আর বিজেপির উত্থান
Published : Monday, 12 March, 2018 at 6:00 AM, Count : 728

ড. এস এম জাহাঙ্গীর আলম : ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় তিন রাজ্যে বিজিপির উত্থান ঘটেছে। গত ৩ মার্চ শনিবার ঘোষিত ওই অঞ্চলের তিন রাজ্যের বিধানসভার ফলাফলে ত্রিপুরায় শক্তিশালী দুর্গের পতন ঘটিয়েছে বিজেপি, নাগাল্যান্ডে ক্ষমতাসীন নাগা পিপলস ফ্রন্টকে (এনপিএফ) টেক্কা দিচ্ছে বিজেপি-এনডিপিপি জোট, মেঘালয়ে কংগ্রেস এগিয়ে থাকলেও বিজেপির তত্পরতার কারণে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। কেরালা ছাড়া ভারতে আর অন্য কোথাও বামদের ক্ষমতায় কোনো রাজ্য নেই।
ভারতের ২৯টি রাজ্যের মধ্যে ১৯টিতে ক্ষমতায় আছে বিজেপি। এখন বিজেপির এই অগ্রযাত্রা ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ছে। ওই অঞ্চলের সাতটি রাজ্যের মধ্যে তিনটি রাজ্য- আসাম, মনিপুর ও অরুণাচলে ইতোমধ্যে মধ্যে বিজেপির শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে; বাকি রাজ্যগুলোর মধ্যে ত্রিপুরাতে জয় ও নাগাল্যান্ডেও বিজেপি বা বিজেপি জোট ক্ষমতার দাবিদার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সরকার সড়ক, রেলপথসহ নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড গ্রহণ করায় এই পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করেন ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা (সূত্র-টাইম অব ইন্ডিয়া)। এছাড়া পাশাপাশি বিজেপির মতাদর্শিক অভিভাবক আরএসএস তাদের ‘ব্যাপক জনসংযোগ’ উদ্যোগের মাধ্যমে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জনতাকে বিজেপির বিষয়ে সচেতন করে তুলতে সক্ষম হয়েছে বলেও তারা মনে করেন। ত্রিপুরায় টানা ২৫ বছরের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার জয়ী হলেও পতন ঘটেছে বাম শাসনের। রাজ্যটির স্থগিত একটি আসন ছাড়া বাকি ৫৯টি আসনের মধ্যে ৪৩টি জয় পেয়েছে বিজেপি, এক সময়ের প্রতিপত্তিশালী সিপিএম পেয়েছে মাত্র ১৬টি আসন। ত্রিপুরায় ইনডিজিনাস পিপলস ফ্রন্ট অব ত্রিপুরার (আইপিএফটি) সঙ্গে জোট গড়েছে বিজেপি। এই জোটের মাধ্যমে রাজ্যটির আদিবাসী সম্প্রদায়গুলোর কাছে পৌঁছে গেছে বিজেপি, যারা জনসংখ্যার ৩১ শতাংশ। বিজেপির এই জোট একটি সফল নির্বাচনী কৌশল হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। রাজ্যের বিশাল বেকারত্বের হারের বিষয়টি মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছে বামপন্থি সরকার। সুযোগটি দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছে বিজেপি।
স্বাধীনতার পর গোটা ভারত ৫০ বছরের বেশি সময় শাসন করে কংগ্রেস। গত ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচনে কংগ্রেসের পতন ঘটে আর ক্ষমতায় আসে বিজেপি। ভারতের রাজনীতি ব্রিটিশ ওয়েস্টমিনিস্টার সিস্টেমের পরে একটি কেন্দ্রীয় সংসদীয় বহু দলীয় গণতন্ত্রী প্রজাতন্ত্রের একটি কাঠামোতে স্থান গ্রহণ করে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী সরকারের প্রধান, ভারতের রাষ্ট্রপতির সময় দেশের আনুষ্ঠানিক প্রধান এবং বিপুল ভবিষ্যত্ সঞ্চয় অধিকার, স্থাপন তাকে ধরে অথবা ব্রিটিশ রাজা হিসেবে আন্দাজ একই অবস্থানে তার। কার্যকরি অধিকার সরকারের দ্বারা অনুশীলন করা হয়। কেন্দ্রীয় আইনের ক্ষমতা উভয় সরকারে অর্পণ করা হয় এবং ভারতীয় সংসদের দুই কক্ষ। বিচারবিভাগ কার্যকরি এবং আইনসভার স্বাধীন।
যুক্তরাষ্ট্রীয় স্তরে ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। স্বাধীনতার পর অধিকাংশ সময়ই ভারতের শাসনকর্তৃত্ব ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের আধিপত্য ছিল। অন্যদিকে রাজ্যগুলোর রাজনীতিতে প্রাধান্য বিস্তার করে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি), ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) (সিপিআই(এম)) প্রভৃতি জাতীয় দল ও একাধিক আঞ্চলিক পার্টি। দুটি সংক্ষিপ্ত সময়কালকে বাদ দিলে ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৯০ সাল অবধি জাতীয় কংগ্রেস সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের মর্যাদা ভোগ করেছে। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ঘোষিত জরুরি অবস্থার কারণে জন-অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে ১৯৭৭ থেকে ১৯৮০ মধ্যবর্তী সময়ে কংহ্রেসকে ক্ষমতাচ্যুত করে জনতা পার্টি সরকার গঠন করে। ১৯৮৯ সালে জনতা দলের নেতৃত্বে জাতীয় ফ্রন্ট বামফ্রন্টের সহযোগিতায় নির্বাচনে জয়লাভ করে দুই বছর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকে। ১৯৯১ সালে কোনো পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ না করতে পারায় কংগ্রেস পি ভি নরসিমা রাওয়ের প্রধানমন্ত্রিত্বে একটি সংখ্যালঘু সরকার গঠন করে। এই সরকার অবশ্য পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় টিকে থাকতে সক্ষম হয়। ১৯৯৬-১৯৯৮ সালটি যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের অস্থিরতার যুগ। এই সময় একাধিক স্বল্পসময়ের জোট কেন্দ্রে সরকার গঠন করে। ১৯৯৬ সালে সংক্ষিপ্ত সময়কালের জন্য বিজেপি সরকার গঠন করে। তারপর কংগ্রেস ও বিজেপি বিরোধী যুক্তফ্রন্ট ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৮ সালে বিজেপির নেতৃত্বে ন্যাশানাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। এই সরকারই ভারতের প্রথম পূর্ণ সময়কালের অকংগ্রেসি সরকার। ২০০৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স (ইউপিএ) লোকসভায় বিপুল সংখ্যক আসনে জয়লাভ করে এবং বিজেপি-বিরোধী বাম সাংসদদের সহায়তায় সরকার গঠন করে। ইউপিএ ২০০৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে পুনরায় ক্ষমতায় আসে। অবশ্য জোটের মধ্যে বামপন্থীদের  প্রতিনিধিত্ব গুরুত্বপূর্ণভাবে কমেছে। ঠিক ১০০ বছর আগে রাশিয়ার অক্টোবর বিপ্লব বিশ্বের আরও অনেক দেশের মতো ভারতেও কমিউনিস্ট আন্দোলনের জন্ম দিয়েছিল। গত শতাব্দীতে ভারতের বামপন্থী রাজনীতিও নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে গেছে, আর তাতে অক্টোবর বিপ্লব তথা সাবেক সোভিয়েত রাশিয়ার একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ছিল আগাগোড়াই। রুশ বিপ্লবের নায়ক ভ্লাদিমির লেনিন বা তার উত্তরসূরি স্তালিন একটা পর্বে ভারতের কমিউনিস্টদের প্রবলভাবে আলোড়িত করেছেন, কিন্তু পরে চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লব বা মাও জে দংয়ের আবেদনই যে ভারতের বামপন্থীদের কাছে বড় হয়ে ওঠে তাতেও বোধহয় কোনো ভুল নেই।
লেখক: বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক কর কমিশনার ও চেয়ারম্যান ন্যাশনাল এফ  এফ ফাউন্ডেশন



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft