শিরোনাম: |
বিএনপি কোন পথে হাঁটবে
|
মিলন কান্তি দত্ত : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), যে দলটি ৫ বার নির্বাচিত হয়ে দেশ পরিচালনা করার দাবি করে, সে দলটি এখন অনেকটা দিকভ্রান্ত হয়ে ছুটোছুটি করছে। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য অংশের দলটির প্রতি সমর্থন থাকলেও নেতৃত্বের দুর্বলতা, অপরিপক্কতা ও অদূরদর্শিতার কারণে ভবিষ্যতে দলটি কোন পথে চলবে তা নিরূপণ করতে দিশেহারা। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের ফলে ১৯৭৫’র ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু স্ব-পরিবারে নিহত হওয়ার পর দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান উর্দিপরা অবস্থায় কুটচালের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে নিজের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাশ চরিতার্থ করার জন্যে ক্ষমতায় থেকে ধর্মাশ্রয়ী স্বাধীনতা বিরোধী, ডান-বামপন্থী নানা মতের ও নানা পথের সুবিধাবাদী রাজনৈতিক নেতাদের সংগ্রহ করে প্রথমে জাগদল ও পরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে। ক্ষমতায় বসেই জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক চেতনাকে ভুলুণ্ঠিত করে সংবিধানকে ইসলামীকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশকে পাকিস্তানী ভাবধারায় নিয়ে যায়। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করে। Money is not a problem এবং I will make politics difficult ঘোষণা করে জিয়াউর রহমান রাজনীতিকে কলুষিত করেন। মুক্তিযুদ্ধ থেকে আমৃত্যু উচ্চাভিলাশের কারণে তার ক্ষমতাকালীন সময়ে নানা ঘাত-প্রতিঘাত, ১৮/১৯ বার সেনা অভ্যুথানের প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় ‘অতি চালাকের গলায় দড়ি’- প্রবাদের মত চট্টগ্রামে দলীয় কোন্দল মেটাতে গিয়ে নিজেকেও ৩০ মে ১৯৮১-তে সেনাবাহিনীর একদল সদস্যের হাতে নির্মমভাবে নিহত হতে হয়েছিল।
জিয়াউর রহামানের মৃত্যুর পর বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকলেও ছন্নছাড়া দলটির কিছু নেতা তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে গৃহকোণ থেকে রাজনীতিতে নিয়ে এসে দলটির হাল ধরান। তত্কালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার তার দলীয় নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে তত্কালীন সেনাপ্রধান হুসাইন মোহম্মদ এরশাদের হাতে ১৯৮২ এর ২১ মার্চ রাষ্ট্র ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। জনসাধারণ মনে করে এরশাদই প্রকৃতপক্ষে সেনাবাহিনীকে কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এরশাদের অবৈধ ক্ষমতা দখলকে প্রায় সকল রাজনৈতিক দল মেনে নিতে পারেননি। তত্কালীন রাজনৈতিক দলসমূহ ৩টি জোটবদ্ধ হয়ে ৯ বছর আন্দোলনের মাধ্যমে এরশাদ সরকারের পতন ঘটায়। ৯ বছরের এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সুযোগে বেগম খালেদা জিয়া নিজেকে রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন এবং ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের কৌশলগত ভুলের কারণে অবিশ্বাস্যভাবে বিএনপি স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা ফিরে পায়। বেগম খালেদা জিয়াও ১৯৯১-১৯৯৬ সময়ের ক্ষমতাকালে স্বামী জিয়াউর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুসহ প্রগতিশীল নেতাদের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাসসমূহকে পর্যায়ক্রমে অন্ধকারের গর্ভে ঠেলে দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করেননি। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসকে রাষ্ট্র ও সমাজ থেকে মুছে ফেলার শুধু হীন চেষ্টাই করেননি বরঞ্চ বিকৃত ইতিহাসকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য যা যা করার দরকার তাই করেছেন। জিয়াউর রহমান, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার একাধারে ২১ বছরের সামরিক-বেসামরিক শাসনামলে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী একটি প্রজন্মকে স্বাধীনতার ভুল ইতিহাসের ওপর বেড়ে উঠতে বাধ্য করেছেন। ১৯৯৬ এর ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসকে অন্ধকার থেকে তুলে এনে জনগণের কাছে বিশেষ করে স্বাধীনতা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়ার প্রচেষ্টা নেয়। জিয়াউর রহমান কর্তৃক প্রবর্তিত ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের ন্যায় বিচারের আওতায় নিয়ে আসেন। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তিচুক্তির মাধ্যমে দীর্ঘদিনের অশান্ত তিন পার্বত্য জেলায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রশাসনিক শৃংখলার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের জন্য অনেক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম হাতে নেয় যার সুফল দেশ পেতে শুরু করেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের বলী হয়ে আওয়ামী লীগ ২০০১ সালের ১ অক্টোবরে অনুষ্ঠিত ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অবিশ্বাস্যভাবে হেরে যায়। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি-জামায়াত জোট পুনরায় রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হয়। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরপরই আওয়ামী লীগ সমর্থক ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্বিচারে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, হত্যাসহ যে অমানবিক নির্যাতন ও নিপীড়ন করে তা মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী অত্যাচারকেও হার মানায়। বেগম খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুজাহীদকে মন্ত্রী বানিয়ে বাংলাদেশের পতাকার অবমাননা করতে এতটুকু দ্বিধা করেননি। এ আমলে বাংলাদেশ ৪ বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়। ক্ষমতার সমান্তরাল কেন্দ্র তারেক রহমানের হাওয়া ভবন, খোয়াব ভবনের নাম দেশে-বিদেশে দুর্নীতির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করে। আগের বারের চাইতে এবারে ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে আরও বেশি করে কিভাবে বিকৃত করা যায় তাই তার সরকার করেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার বন্ধ করে হত্যাকারীদের দেশে-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত করেন। বঙ্গবন্ধুসহ স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নাম মুছে ফেলার ঘৃণ্য কার্যক্রম হাতে নেয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের হত্যার চেষ্টা করা হয়। ইতিহাসের জঘন্যতম এ হামলায় মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হন। শত শত আহত কর্মী এখনও ঐ নারকীয় হামলার আঘাতের যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছে। এ হত্যা মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য জজ মিয়া নাটকের অবতারণা করা হয়। বিচারপতি জয়নাল আবেদীনের মাধ্যমে প্রতিবেশী একটি রাষ্ট্রকে দায়ী করে মিথ্যা তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করা হয়। বিএনপি’র ২০০১-২০০৬ সালের দুর্নীতি ও অপশাসন এবং ৯ম সংসদ নির্বাচন প্রাক্কালে বেগম খালেদা জিয়ার পরামর্শে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন নিয়ে নানা ছল-চাতুরিতে জনগণ এতই বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছিল যে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে এবং ২০০৭’র ১১ জানুয়ারী রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জরুরি অবস্থা জারির মাধ্যমে সেনাবাহিনীর সমর্থনে ক্ষমতায় আসা জেনারেল মঈনউদ্দিন-ফকরুদ্দীন’র সরকার ৯০ দিনের স্থলে ২ বছর ক্ষমতায় থাকতে পেরেছিল। ১/১১-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন পেয়ে সরকার গঠন করে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে বিজয়ী হয়। শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রীত্বে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ধারাবাহিকভাবে ৯ বছরের অধিককাল রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আছেন। এই সময়ে বিস্মৃত মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সংবিধানকে ৭২’র মূল সংবিধানে ফেরত আনা হয়েছে। খাদ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষাখাতে উন্নয়ন, মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যু হার হ্রাস, বিদ্যুত্, সকল ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন, দারিদ্র্যতার হার হ্রাস, মঙ্গা দূরীকরণ, দুঃস্থ-বিধবা ও বয়স্কদের মাঝে সামাজিক নিরাপত্তার প্রসার, ডিজিটাল ব্যবস্থার উন্নয়ন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করা, মাথাপিছু আয় ১৬১০ ডলারে উন্নীত হওয়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে সূচক প্রতিবেশী দেশসমূহের চেয়ে এগিয়ে আছে। দেশ ইতোমধ্যে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পথে হাটছে। বিশ্ব ব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগকে কানাডার আদালতে মিথ্যা প্রমাণ করে স্বপ্নের পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ নিজস্ব অর্থায়নে এগিয়ে চলায় দেশের মানুষের মাঝে ‘নিজেরা করতে পারি’ এ আত্মবিশ্বাসকে দৃঢ় করেছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। বর্তমান সরকার দেশকে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের করে এনে বেগম খালেদা জিয়ার কর্তৃক বিচার বন্ধ করে দেয়া বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচার সম্পন্ন করেছেন। অনেকের সাজা কার্যকর হয়েছে। স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে একাধিক শীর্ষ অপরাধীর বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বিশ্বে প্রশংসা লাভ করেছে। মায়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে বাস্তুচ্যুত প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গাকে মানবিক কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে ‘মাদার অব হিউম্যানেটি’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্র পরিচালনা অসামান্য অবদানের জন্য ‘চ্যাম্পিয়ন অব দি আর্থ’, ‘ইউনেস্কো পিস প্রাইজ’, ‘সাউথ-সাউথ এওয়ার্ড’, ‘ইন্দিরা গান্ধী পিস অ্যাওয়ার্ড’ সহ ১৮টি আন্তর্জাতিক পুরস্কারসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ৯টি অনারারী ডক্টরেট ডিগ্রিতেও ভূষিত হয়েছেন শেখ হাসিনা। তাঁর অসাধারণ কর্মদক্ষতা, দূরদর্শী নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় তিনি নিজেকে বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ‘পিপলস্ অ্যান্ড পলিটিক্স’ কর্তৃক ২০১৭ সালে ১৭৩ দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সততার ওপর পরিচালিত গবেষণায় প্রথম ৫ জন সত্ রাষ্ট্র/সরকার প্রধানের মধ্যে শেখ হাসিনার অবস্থান তৃতীয়। অর্থাত্ শেখ হাসিনা নিজেকে একজন সত্ রাজনীতিবিদ হিসেবে দেশ-বিদেশে প্রমাণ করতে পেরেছেন। শেখ হাসিনার এ সকল অর্জন বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে এবং বিশ্ব এখন বাংলাদেশকে সম্মানের চোখে দেখে। বেগম খালেদা জিয়া যখনই রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকেছেন তখন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করেছেন। ২০০১ সালে নির্বাচন পরবর্তী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন, ২০১৫ সালে ৯০ দিন অবরোধের নামে যানবাহনসহ বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে মারা ও আহত করা, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচার না করে প্রশ্রয় দেয়া, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা করা, ২০১২-১৪ সময়ে যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় ঘোষণার পর মৌলবাদীদের দেশব্যাপী সাধারণ মানুষের বাড়ি-ঘর ভাংচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, যানবাহনের ক্ষয়ক্ষতির বিরোধিতা না করা, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তত্কালীন প্রধান বিরোধীদলের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের হত্যার প্রচেষ্টা নেয়া ও উক্ত হামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা, ক্ষমতায় থাকাকালে দেশি-বিদেশি সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া এবং দেশকে দুর্নীতিতে একাধিকবার চ্যাম্পিয়ন করার মাধ্যমে এক কলঙ্গজনক অধ্যায়ের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বেগম খালেদা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। তার বড় ছেলে তারেক রহমান অর্থপাচার মামলায় ৭ বছরের এবং জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ১০ বছরের সাজা মাথায় নিয়ে লন্ডনে অবস্থান করছেন। তার অপর সন্তান আরাফাত রহমান দুর্নীতির দণ্ড মাথায় নিয়ে বিদেশে মৃত্যুবরণ করেন। তার বিরুদ্ধে নাইকো, গেটকো দুর্নীতিসহ আরও প্রায় ৩২/৩৩টি মামলা বিচারাধীন আছে। তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচার ও ব্যবসায়ে অর্থলগ্নির অভিযোগ ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ১/১১ সরকারের সময় বেগম খালেদা জিয়া কর ফাঁকির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ৩০ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে কালো টাকা সাদা করেছেন। খালেদা জিয়া বর্তমানে জেলের বাসিন্দা। বিএনপি’র গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তারেক রহমান এখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। অথচ তিনিও দুর্নীতি দায়ের সাজাপ্রাপ্ত এবং বিদেশে অবস্থান করেছেন। বিএনপি’র গঠনতন্ত্রের ৭ ধারায় উল্লেখ ছিল উম্মাদ, দেউলিয়া, দুর্নীতিগ্রস্ত ও দণ্ডপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি দলের সদস্য হতে পারবেন না। ২০১৮’র ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের কয়েকদিন আগে গঠনতন্ত্র থেকে ৭ ধারা বিলুপ্ত করে দুর্নীতিবাজদের দলে স্থান করে দেয়ার সুযোগ করে দিয়ে বেগম খালেদা জিয়া প্রকারান্তরে দুর্নীতিকে প্রশয় দেয়াসহ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) কে জনগণের সামনে দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয়স্থল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করলেন। বেগম খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ও একাধিক মামলা মাথায় নিয়ে কারাগারে আছেন। দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমানও লন্ডন প্রবাসী। বিএনপিতে তারেক রহমান অনুসারী ও বিরোধীদের মাঝে অন্তর্দ্বন্দের গুঞ্জন আছে। ২০১৮’র শেষভাগে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কখনও সহায়ক সরকার, কখনও তত্ত্বাবধায়ক সরকার, কখনও নির্দলীয় সরকার এ রূপ নানা ধরনের নির্বাচনে অংশগ্রহণের পূর্ব শর্ত জুড়ে দিয়ে দীর্ঘদিন আন্দোলন করছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। অপরদিকে সরকারি দল ও তার জোট নির্বাচন প্রশ্নে সংবিধানের বাইরে একপাও হাঁটতে রাজি নন। এরশাদও সংবিধানের অধীনেই নির্বাচনের পক্ষে। দুর্নীতির অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত কাণ্ডারীবিহীন বিএনপি এখন কোন্ পথে হাঁটবে এবং আসন্ন নির্বাচনে জনগণের সামনে কি নিয়ে দাঁড়াবেন? লেখক- সমাজকর্মী। |