শিরোনাম: |
উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারায় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভাবনা
|
ইঞ্জিনিয়ার মো. শামসুর রহমান : অর্থনৈতিক অগ্রগতি, অবকাঠামোগত বিনির্মাণ, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় যে কোনো হুমকি ও চ্যালেঞ্জ গ্রহণের অকুতভয় নেতৃত্ব, মানবতার বাতিঘর, সাম্প্রতিক সময়ে আমিরাতের প্রভাবশালী দৈনিক খালিজ টাইমসের ভাষায় প্রাচ্যের নতুন তারকা কিংবা মার্কিন সাময়িকী নিউজ ইউক এর ভাষায় মহানুভবতার শিল্পীখ্যাত, মাদার অব হিউমিনিটি, জননন্দিত নেতা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত। তার মেধা ও প্রজ্ঞাচিত রাজনৈতিক দৃঢ়তায় আজ বাংলাদেশ বিশ্বপরিসরে নতুন মর্যাদায় অভিসিক্ত ও মানবিক বাংলাদেশের প্রকৃত রূপ অবলোকনে বিশ্ব বিবেক মুগ্ধ। স্বাধীনতা পরবর্তী যে বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলা হয়েছিল, স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে চার দশক পরে সেই বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব কারিশমায় বিকাশমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়। বিশেষ করে ওষুধ শিল্প, তৈরি পোশাক, তথ্যপ্রযুক্তি, হিমায়িত মাছ রফতানির মাধ্যমে বাংলাদেশ এশিয়ান টাইগার কিংবা কৃষি ও শিক্ষাখাতে বাংলাদেশে বিপ্লব হবে মর্মে বিশ্ব নেতৃত্বের মন্তব্য জননেত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনায়কোচিত কর্মগুণাবলির নির্দেশ করে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বাংলাদেশকে নাম্বার ওয়ান উন্নয়নমুখী দেশ বলে আখ্যায়িত করেছেন। জনগণের প্রতি শেখ হাসিনার অঙ্গীকারদীপ্ত নেতৃত্বের জন্য এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। স্বাধীন বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক হিসেবে আমরা যখন দেখি জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ইতোমধ্যে অনেক ঈর্ষান্বীয় সাফল্য বিশেষ করে জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, দারিদ্র্যের হার ৪০ থেকে ২৩ ভাগে নামিয়ে আনা, শিক্ষার হার ৪৯ থেকে ৭২.৩ ভাগে উন্নীতকরণ, বিদ্যুত্ সুবিধার আওতায় ২৭ ভাগ থেকে ৭৫ ভাগ জনগোষ্ঠীকে নিয়ে আসা, তথ্যপ্রযুক্তির চরম উত্কর্ষতা সাধনের মাধ্যমে ১৩১ মিলিয়ন জনগোষ্ঠীকে ইন্টারনেট সুবিধার আওতায় আনা, মাথাপিছু আয় ১৬০৩ ডলারে উন্নীতকরণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৩ মিলিয়ন ডলার অতিক্রম, রফতানি ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম, বৈশ্বিক প্রতিকূলতা ও চরম নৈরাজ্য-ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সুদৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়ে ৭ শতাংশের উপরে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা, ৪ লাখ কোটি টাকার উপরে জাতীয় বাজেট ও ৯২ ভাগ অর্থ নিজস্ব উত্স থেকে জোগানের সক্ষমতা অর্জন, শান্তিপূর্ণভাবে ভারতের সঙ্গে সিটমহল বিনিময় চুক্তি সম্পাদন, ভারত ও মায়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র বিরোধ নিরসন ও বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠা, জিন প্রযুক্তির উদ্ভাবনে বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান ও কৃষিতে ভর্তুকি দিয়ে খাদ্য উদ্বৃত্ত দেশে পরিণত হওয়া, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ, কঠোরহস্তে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন দেশের মানুষকে প্রবলভাবে আশান্বিত করেছে। বর্তমান সরকারের ধারাবাহিক সফলতায় বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে বাংলাদেশ সাত ধাপ এগিয়েছে। জনগণের মাঝে সৃষ্ট এই প্রবল আস্থা ও বিশ্বাস আগামী দিনে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নত বাংলাদেশ নির্মাণে আমাদের সাহস ও প্রেরণা জোগাচ্ছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা শুধু জাতিকে স্বপ্নই দেখাচ্ছেন না, কীভাবে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয় সেই কৌশলও ভবিষ্যত্ নেতৃত্বকে দেখিয়েছেন। বিশেষ করে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে যাবার পরে যখন পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়, তখন নেতৃত্ব কারিশমায় তিনি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়ে জাতিকে বিশ্ব দরবারে গর্বিত করেছেন। স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ খরস্রোতা পদ্মার জলতরঙ্গের মাঝে প্রবাহমান স্বপ্ন নয়, সেতুতে প্রথম স্পান বসানোর মধ্য দিয়ে প্রমত্তা পদ্মার উপর স্বপ্নের সেতু বাস্তবায়নের বাস্তব সাক্ষীও বটে। আমরা গর্বিত এ জন্য যে, বিশ্বব্যাংক যখন অযৌক্তিকভাবে অর্থ প্রদানের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে তখন আইডিইবি থেকে আমরা বিশেষ করে রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্টজনদের নিয়ে গোলটেবিল আলোচনা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বিকল্প অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রস্তাব উপস্থাপন করি। সামাজিক সুরক্ষামূলক কর্মসূচির আওতায় বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, স্বামী পরিত্যক্তা ও দুঃস্থ ভাতা, পঙ্গু, প্রতিবন্ধী ও অসহায়দের জন্য ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী, ভর্তুকি মূল্যে খোলা বাজারে খাদ্যপণ্য বিক্রি, ভিজিডি, ভিজিএফ, টেস্ট রিলিফ, কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আওতায় খাদ্য সহায়তা, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ইত্যাদি কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে যে সামাজিক বলয় তৈরি হয়েছে, তার মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সুফল পেতে শুরু করেছে। শহর ও গ্রামীণ জনপদের মধ্যে বৈষম্য হ্রাসে জননেত্রী শেখ হাসিনার অবদান অতুলনীয়। তার নেতৃত্বেই ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রভাব পড়েছে সর্বত্র। দেশের প্রতিটি ইউনিয়নের তথ্য ও সেবাকেন্দ্র চালু হয়েছে। এসব তথ্য কেন্দ্র থেকে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী বিভিন্ন সরকারি ফরম, নোটিস, পাসপোর্ট ও ভিসা সংক্রান্ত তথ্য, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বিভিন্ন সেবাবিষয়ক তথ্য, চাকরির তথ্য, নাগরিকত্ব সনদপত্র, পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল, বিদেশে চাকরি প্রাপ্তির লক্ষ্যে রেজিস্ট্রেশনসহ ২২০টি সেবা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। উপরন্তু মোবাইল ব্যাংকিং, জীবনবীমা, মাটি পরীক্ষা ও সারের সুপারিশ, বিদ্যুত্ বিল পরিশোধ এবং জমির পর্চাসহ অন্যান্য সেবা পাচ্ছে। প্রায় ৪ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। উপজেলা ও জেলা হাসপাতালগুলোতে মোবাইল স্বাস্থ্যসেবা টেলিমেডিসিন সিস্টেমসহ চলছে। মোবাইল টেলিফোনের ব্যাপক ব্যবহার ও ইন্টারনেটের গতি বেড়েছে। ফলে টেলি-কনফারেন্স এখন সহজ ব্যাপার। এভাবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে চমত্কার সাফল্য দেখিয়েছে। এছাড়া আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতি প্রতিষ্ঠায় এদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা শুধু বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সুশাসনের মাঝে সীমাবদ্ধ নয়। জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমূহক্ষতির হ্রাস, মানবাধিকার সুরক্ষণ, জাতিগত নিধনে শরণার্থী সমস্যা মোকাবিলায় যথাযথ ভূমিকা রাখার মাধ্যমে তিনি বৈশ্বিক মানবতার বাতিঘরে পরিণত হয়েছেন। ফোর্বস ম্যাগাজিনের জরিপে বিশ্বের ১০০ ক্ষমতাধর নারীর মধ্যে শেখ হাসিনার অবস্থান ৩৭তম, নিউইয়র্ক টাইমস সাময়িকী জরিপে বিশ্বে প্রভাবশালী নারীদের মাঝে ৭ম, সেরা ১০ ক্ষমতাধর নারীর মধ্যে ৬ষ্ঠ স্থান অধিকার করে ইতোমধ্যে তিনি বিশ্ব নেতায় পরিণত হয়েছেন। বিশেষ করে জাতিসংঘে তার উপস্থাপিত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলা এবং দারিদ্র্যবিমোচন কৌশল গ্রহণের মধ্য দিয়ে তিনি বিশ্বের প্রায় ৮শ’ কোটি মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি হিসেবে বিশ্ব অঙ্গনে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃঢ় অবস্থান আমাদের শুধু উজ্জীবিত করছে না বরং অনুপ্রাণিতও করেছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ এখন বৈশ্বিক সমস্যা। এ সমস্যা মোকাবিলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে। কিন্তু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে যখন হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা সংঘটিত হয়, তখন কীভাবে এ ধরনের হামলা ও অশুভ শক্তির উত্থান ঠেকিয়ে দেয়া যায় তা পুরো বিশ্ব দেখেছে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর অবস্থান থেকে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে আপনি দিন রাত কাজ করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একের পর এক জঙ্গি নিধনের মাধ্যমে এ অপশক্তির মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে। জাতীয় জীবনে নিরাপত্তার বিষয়টি অনেকটা সুদৃঢ়। কিন্তু আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারী মহল এখনও দেশীয় সন্ত্রাসবাদকে আইএস জঙ্গিগোষ্ঠীর কার্যক্রম বলে চালিয়ে আমাদের বিকাশমান উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে তত্পর। সাম্প্রতিক সময়ে মায়ানমারে জাতিগত নিধন ও রোহিঙ্গা সঙ্কট অপ্রত্যাশিতভাবে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দেয়া তারই অংশ বলে আমরা মনে করি। সিরিয়া সঙ্কটে উন্নত বিশ্ব যখন উদ্ভুত শরণার্থী বিষয়টি নিয়ে হিমশিম খেয়েছিল, তখন আমরা দেখছি জনবহুল বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ অনেক সমস্যার পরেও প্রধানমন্ত্রী মানবতার মহানুভবতা নিয়ে রোহিঙ্গা শরণাথীদের শুধু আশ্রয়ই দেননি, সর্বাত্মক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। বিশ্বে এ যাবত্ যত শরণার্থী সঙ্কট হয়েছে, সেখানে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশ যত দ্রুত সাহায্য ও আশ্রয় দিয়েছে তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এটা একমাত্র প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব গুণের দ্বারাই সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি কোনো ধরনের উসকানিতে বাংলাদেশ পা না দিয়ে কূটনৈতিক তত্পরতার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে আন্তর্জাতিক জনমত গঠন এবং প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে জোরালোভাবে তুলে ধরার মাধ্যমে বিশ্ববিবেককে নাড়া দিতে সক্ষম হওয়ায় মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে কিছুটা নমনীয় হচ্ছে। আমরা আশা করছি- বাংলাদেশের কূটনৈতিক তত্পরতার মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা নিজ দেশের নাগরিকত্ব ফেরত পাবেন। এ অঞ্চলের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রতিবেশী দেশগুলো আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবেন। জাতিসংঘ ২০১৬ থেকে ২০৩০ মেয়াদে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার যে ১৭টি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, তার উদ্দেশ্য হলো: দারিদ্র্য দূরীকরণ, খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টিমান উন্নয়ন, স্বাস্থ্যমান অর্জন, মানসম্পন্ন শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি, নারীর সর্বজনীন ক্ষমতায়ন, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলাসহ সামুদ্রিক সম্পদ সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা। এসব উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে নাগরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়টি জড়িত। এর জন্য গুণগত শিক্ষার প্রসার ও এর মাধ্যমে মানুষের প্রায়োগিক দক্ষতার সক্ষমতা অর্জন গুরুত্বপূর্ণ। মানব আচরণের প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা বা টিভিইটিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। ২০২১ সালে মধ্যম ও ২০৪১ সালে সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশের অভীষ্ট লক্ষমাত্রা অর্জনের সরকারের অসাধারণ সাফল্যে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো কারণ নেই। প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট অপ্রত্যাশিত দুর্যোগ কীভাবে অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে সেই বিষয়গুলো ব্যাপক গবেষণার মাধ্যমে আমাদের চিহ্নিত করতে হবে। বিশেষ করে বিভাজিত রাজনীতি, আমলাতান্ত্রিক লালফিতার দৌরাত্ম্য, অতি মুনাফা প্রবণতা ও প্রত্যাশিত মাত্রায় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার না হলে এ আরোধ্য পথে আমরা এগিয়ে যেতে পারব না। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে অপ্রত্যাশিত ক্ষতিজনিত দারিদ্র্যতার হার বৃদ্ধি ও মধ্যম ও উন্নত দেশের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। দারিদ্র্য ও অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনের অভাবে সংক্ষুব্ধতা থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটলে সে ক্ষেত্রে দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে এবং বিনিয়োগের পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই উন্নত দেশের গণ্ডিতে প্রবেশের লক্ষ্য কিংবা এসডিজি বাস্তবায়ন উভয় ক্ষেত্রেই প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনসহ অর্থনৈতিক বৈষম্যের দৌরাত্ম্যের রাশ টেনে ধরে দারিদ্র্যবিমোচনের কর্মকৌশল গ্রহণ ও প্রয়োগের সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। শুধু সরকারি পর্যায়ে কর্মসংস্থান বা সহযোগিতার মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচন সম্ভব নয়। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি উদ্যোক্তা উন্নয়নেও শিক্ষার্থীদের বিশেষভাবে উত্সাহিত করার কৌশল রাষ্ট্রীয়ভাবে গ্রহণ করতে হবে। কর্ম ধরন বিবেচনায় নয়, যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মীর মূল্যায়ন সুনিশ্চিতকরণে সামাজিক রাষ্ট্রিক মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন অপরিহার্য। কেননা, যে সমাজ ও রাষ্ট্রে মানবিক মর্যাদা উপেক্ষিত হয়, সেখানে অনিয়মই নিয়মে পরিণত হতে বাধ্য। তাই, স্থিতিশীল ও উন্নত বাংলাদেশের পথে আমাদের এগিয়ে যাবার জন্য মানবিক মর্যাদার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা প্রয়োজন। স্লোগান বা দিবস আঙ্গিকে কর্মসূচির মধ্যে মানবিক মর্যাদাবোধকে আবদ্ধ করলে তা হবে আমাদের জন্য আত্মঘাতী এবং উন্নত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রধান অন্তরায়। অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে একদিকে মূল্যবান কৃষি জমি ধ্বংস হচ্ছে, অন্যদিকে নানাবিধ নাগরিক সমস্যা নগর জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলছে। বিশেষ করে অপরিকল্পিত উপায়ে রাস্তাঘাট নির্মাণের ফলে একদিকে যানজট বাড়ছে, অন্যদিকে প্রাকৃতিক জলাধার ভরাট করে বসতি গড়ে ওঠায় জলাবদ্ধতা এখন প্রতিটি নগরবাসীর জন্য অভিশাপ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আমরা আগ্রহভরে লক্ষ্য করছি, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ইচ্ছা থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মেয়ররা নগর উন্নয়নে ব্যাপক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছেন। সুদৃশ্য ফুটপাত ও সড়ক কিংবা আকর্ষণীয় ড্রেন নির্মাণ আধুনিক ঢাকা গড়ে তোলার প্রয়াসকে জনসম্মুখে সাদৃশ্য করছে। কিন্তু তারপরও জলাবদ্ধতার ব্যাধি নাগরিক জীবনে বিন্দুমাত্র স্বস্তি এনে দিতে পারে নাই। আমরা দুঃখজনকভাবে লক্ষ্য করছি আধা ঘণ্টার ভারি বৃষ্টিতে শুধু ঢাকার রাজপথ নয়, চট্টগ্রামসহ সব সিটি করপোরেশন এমনকি জেলা-উপজেলা পর্যায়ের শহরগুলোতে তীব্র জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এটিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলা যাবে না। এটা মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ। এই দুর্যোগের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার ঢাকার প্রাকৃতিক খাল ভরাট করে বক্স কালভার্ট নির্মাণকে ভর্ত্সনা করেছেন। তিনি বারবার খালসমূহের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে পানির স্বাভাবিক প্রবাহমান ধারা অব্যাহত রাখার নির্দেশনা দিচ্ছেন। এটি আইডিইবি বিগত কয়েক দশক ধরে বলে আসছে। কিন্তু যারা বাস্তবায়ন করবেন তারা এ ব্যাপারে ছিল সম্পূর্ণ উদাসীন। বরং দুঃখজনকভাবে লক্ষ্য করা গেছে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পর্যায়ের প্রভাবশালীরা আত্মঘাতী এ কাজটি অব্যাহতভাবে করে গেছেন। বৈশ্বিক জলবায়ুর যে বিরূপ প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে, আগামী দিনে অতিবৃষ্টির প্রবণতা আরও বাড়তে পারে এবং জলাবদ্ধতায় নাগরিক ভোগান্তি আরও ব্যাপক হবে। আমরা আগ্রহের সঙ্গে লক্ষ্য করছি প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়তায় অনেকগুলো খাল দখলের জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ঢাকাসহ সব নগরকে জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী খালসমূহের উদ্ধার কার্যক্রম জোরদার করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি পৃথক টাস্কফোর্স গঠন এবং এ কাজে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিয়োজিত করা যেতে পারে। তাহলে প্রত্যাশিত মাত্রার সুফল জাতি পাবে। লেখক : সাধারণ সম্পাদক-ইনিস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি)। |