শিরোনাম: |
শীতের তীব্রতায় জীবনযাত্রা ব্যাহত দুর্ভোগে শ্রমজীবী মানুষ
|
বর্তমান ডেস্ক : শৈত্যপ্রবাহের প্রকোপে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গরম কাপড়ের অভাবজনিত কারণে শীতার্ত মানুষরা খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। গত কয়েকেদিনের প্রবল শৈত্যপ্রবাহে উত্তরাঞ্চলে সন্ধ্যার পর থেকে সকাল পর্যন্ত ঘনকুয়াশায় জেঁকে বসেছে শীতের তীব্রতা। শৈত্যপ্রবাহের কারণে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর: দিনাজপুর: দিনাজপুরে তাপমাত্রা নেমে সর্বনিম্ন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। শনিবার দিনাজপুরে চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উত্তরের হিমেল হাওয়া ও কনকনে শীতের কারণে মানুষসহ গবাদি-পাখি পর্যন্ত কাবু হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে শ্রমজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষগুলো পড়েছে চরম বিপাকে। দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া দফতরের পর্যবেক্ষক আজাদুর হক মণ্ডল জানান, গত শুক্রবার ছিল ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া গত ১ জানুয়ারি সোমবার থেকে ৪ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাপমাত্রা ৯ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। প্রচণ্ড শীতের কারণে শিশু, বৃদ্ধসহ নানা বয়সী মানুষ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ফলে দিনাজপুর এম আবদু রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে লোকজন কাজকর্ম করে দ্রুত বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। একেবারে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। রাতের বেলায় ঘনকুশায় যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। সকালের দিকেও রাস্তায় যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে পথ চলাচল করতে দেখা গেছে। এদিকে হাড় কাঁপানো শীতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষ। বিশেষ করে শ্রমজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষগুলো বেশি বিপাকে পড়েছেন। তীব্র শীতের কারণে কাজ করতে না পারায় পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপদে পড়েছেন এসব মানুষ। শহরের রেলস্টেশনসহ বস্তি এলাকায় অবস্থানরত ছিন্নমূল মানুষকে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা গেছে। এদিকে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম। গাইবান্ধা: কয়েকদিন ধরেই সন্ধ্যায় পর থেকে সকাল পর্যন্ত ঘনকুয়াশা ও পশ্চিমা হিমেল বাতাসে কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে। চরাঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় এখানকার মানুষ পড়েছে বিপাকে। সকাল ও রাতে খড়কুটো জ্বালিয়ে এবং গায়ে ছেঁড়া কাঁথা ও কম্বল দিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। সরকারিভাবে কম্বল বিতরণ অব্যাহত থাকলেও তা প্রয়োজনীয় চাহিদার চেয়ে অনেক কম। ফলে বৃদ্ধ-শিশুরা শৈত্য প্রবাহের প্রকোপে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। জেলা সদর হাসপাতালগুলোতে ঠাণ্ডাজনিত রোগে শিশুরা আক্রান্ত হয়ে চিকিত্সা নিতে আসছে। সন্ধ্যার পর হতেই হাটবাজারগুলো জনশূন্য হয়ে পড়ছে। হাটবাজার ঘুরে দেখা যায়, শৈত্যপ্রবাহের প্রকোপ বাড়ায় অনেকে নতুন করে লেপ-তোষক কিনতে শহরের বিভিন্ন স্থানে ভিড় জমাচ্ছেন। এ কারণে লেপ-তোষকের কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলের ১৫ ইউনিয়নে শীত জেঁকে বসায় সেখানকার মানুষজন সন্ধ্যার পর বাহিরে থাকতে পারছে না। কামারজানী আবদুস সামাদ বলেন, শীত শুরুর সঙ্গে সঙ্গে চরাঞ্চলের শীতের তীব্রতা বাড়ছে। দিনদিন শীতের তীব্রতা আরও বাড়লে স্ত্রী, সন্তান ও গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হবে। নিম্ন আয়ের মানুষ শহরের বিভিন্ন ফুটপাতের দোকান থেকে শীতের গরম কাপড় সংগ্রহ করছেন। আবার অনেক বাড়িতে চলছে ছেঁড়া শাড়ি ও লুঙ্গি দিয়ে জোড়া তালির কাঁথা তৈরির কাজ। গাইবান্ধা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলিয়া ফেরদৌস জাহান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতির বৈরি প্রভাবে অসময়ে শৈত্যপ্রবাহের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। গত তিনদিনে শীতের প্রকোপ বেড়েছে এবং শীতার্ত মানুষের কষ্ট নিবারণে পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। লালমনিরহাট: সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলায় পৌষের শেষের দিকে শীত জেঁকে বসেছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শীতের দাপট বেড়েছে। সকাল থেকে বইছে উত্তরের ঠাণ্ডা বাতাস। বিভিন্ন স্থানে বইছে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ। তীব্র শীতের কারণে বৃহস্পতিবার পাটগ্রামে মীম নামে এক শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে শৈত্যপ্রবাহের কারণে জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত সহ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলে একটি তীব্র ও অন্যত্র ২ থেকে ৩টি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, ৩১ ডিসেম্বর ও এরপর রাজশাহীসহ দেশের দু-একটি এলাকায় বৃষ্টি হয়। তখন আকাশে মেঘ ছিল। সেই মেঘ চলে গেছে। এটা শীতের একটি কারণ। তথ্য অনুযায়ী ২ জানুয়ারি থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে ১৪-১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে শীত থাকবে। একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে কুয়াশার প্রকোপও বাড়বে। রংপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারিতে সারাদেশে শীতের পাশাপাশি একাধিক শৈত্যপ্রবাহ এবং মাঝারি থেকে ঘনকুয়াশা পড়তে পারে। এ সময় দেশের উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে একটি মাঝারি (৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) অথবা তীব্র (৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এবং অন্যত্র ২-৩টি মৃদু (৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। হিলি (দিনাজপুর): দিনাজপুরের হাকিমপুরে গত এক সপ্তাহ ধরে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। জরুরি কাজ ছাড়া বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না মানুষ। ছিন্নমূল মানুষেরা খড়-কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করছেন। বেশি দুর্ভোগে পড়েছে শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষেরা। জীবিকার সন্ধানে কাজে বের হয়ে বিপাকে পড়ছেন তারা। এ কারণে শীতজনিত রোগের প্রকোপও বেড়েছে। পৌর এলাকার পালপাড়া গ্রামের অমিত পাল, চণ্ডিপুর গ্রামের দিলীপ কুমার সাহা, মধ্য বাসুদেবপুর গ্রামের মনোয়ারা বেগম, আবদুর রহিম জানান, শীতের কারণে দিন-রাতে কোনো সময়েই গরম কাপড় ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। অল্প সময়ে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সজীবুল করিম জানান, সরকারিভাবে ২ হাজার কম্বল পাওয়া গেছে। নীলফামারী: শুক্রবার রাত থেকে শুরু হওয়া ঘনকুয়াশার সঙ্গে উত্তরের হিমেল বাতাস আর কনকনে শীতে জবুথুবু হয়ে পড়েছে এখানকার লোকজন। আর এই কনকনে শীতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষ। তীব্র শীতের কারণে খেটে খাওয়া মানুষজন কাজে যেতে না পেরে নিদারুণ কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। শৈত্যপ্রবাহ আর ঘনকুয়াশার কারণে গতকাল শনিবার সারাদিনে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। দিনের বেলাতেও কুয়াশার কারণে ভারী যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। রাস্তাঘাটে লোকজন চলাচল কমে গেছে। প্রয়োজন ছাড়া লোকজন ঘরের বাহিরে বের হচ্ছে না। |