শিরোনাম: |
কারিগরি শিক্ষায় অগ্রাধিকার প্রসঙ্গে
|
প্রকৌশলী আলী ইদরীস : বিশ্বের যেসব দেশ কারিগরি শিক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে সেসব দেশ তত বেশি অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হয়েছে। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়নের কর্মধারা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দেশের সকল শ্রেণির শিক্ষিত জনগোষ্ঠি সমন্বিত অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখলেও এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে কারিগরি শিক্ষা বিশেষ করে মধ্যমস্তরের কারিগরি শিক্ষা। অর্থাত্ অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয়টি সরাসরি কারিগরি ও দক্ষ জনশক্তি ব্যবহারের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনগোষ্ঠির সম্পক্ততার হারের ওপর গড় বাত্সরিক মাথাপিছু আয় নিবিড়ভাবে নির্ভরশীল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেমন অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপান, জার্মান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন কারিগরি শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করায় আজ তারা উন্নত বিশ্বের কাতারে অবস্থান নিশ্চিত করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আত্মঘাতি শিক্ষা ব্যবস্থার কারণেই আমাদের সম্ভাবনাময় তরুণ সমাজ অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এ থেকে তরুণ সমাজকে বাঁচাতে হলে উপরোক্ত দেশসমূহের মতো আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে দক্ষ জনগোষ্ঠির সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। নিচের সারণি-১ লক্ষ করলে আমরা সহজেই বুঝতে পারবো বাংলাদেশ এখনো তিমির অন্ধকারেই রয়ে গেছে। সারণি-১ ঃ কয়েকটি দেশে অন্যান্য শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষার হার দেশ অন্যান্য শিক্ষায় শিক্ষিতের হার কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিতের হার জার্মান ২৭% ৭৩% জাপান ৪৪% ৬৬% সিঙ্গাপুর ৩৫% ৬৫% অস্ট্রেলিয়া ৪০% ৬০% চীন ৪৫% ৫৫% দক্ষিণ কোরিয়া ৫০% ৫০% মালয়েশিয়া ৫৪% ৪৬% বাংলাদেশ ৮৬% ১৪% কথায় ও কাজে অমিল : ৭০ দশকে মালয়েশিয়ার শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তি শিক্ষার জন্য ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে এসে ভর্তি হতেন। আর এখন আমাদেরকেই মালয়েশিয়ায় যেতে হয় তাদের দেশের প্রযুক্তি জানার জন্য। শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজিয়ে কারিগরি শিক্ষার হার বৃদ্ধি করার কারণেই তারা আজ উন্নত বিশ্বের কাতারে। আমাদের দেশে ১৯৫৫ সালে তত্কালীন ইস্ট পাকিস্তান পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট (বর্তমানে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট) প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে মধ্যমস্তরের প্রকৌশলী তথা ডিপ্লোমা প্রকৌশলী তৈরির স্বতন্ত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়। দীর্ঘ ৬২ বছরে সরকারি ৪৯টি এবং বেসরকারি পর্যায়ে প্রায় ৪ শতাধিক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপিত হয়েছে। এর পাশাপাশি প্রতি জেলায় স্থাপিত সরকারি বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দক্ষ জনবল তৈরিতে ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে কারিগরি শিক্ষার হার প্রায় ১৪ শতাংশ। সরকার এ হার ২০২০ সালের মধ্যে ২০%, ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০% এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ৫০%-এ উন্নীত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এটা খুবই আশাব্যঞ্জক হলেও কারিগরি শিক্ষা এখনো অবহেলিত। সাধারণ শিক্ষার প্রতি যেভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়, এ শিক্ষার বেলায় তা করা হয় না। ফলে এসএসসি উত্তীর্ণ প্রায় সকল শিক্ষার্থীই সাধারণ শিক্ষাকেই বেছে নেয়। এর কারণ সরকারি পরিকল্পনাতে ত্রুটি। নিচের সারণি-২ লক্ষ করলে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে সারণি-২ : ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে এসএসসি উত্তীর্ণদের সংখ্যা সাল এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর সংখ্য আসন সংখ্যা সাধারণ শিক্ষা ঃ এইচএসসি কারিগরি শিক্ষা ঃ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ২০১৫ ১২ লাখ ৮২ হাজার ৬১৮ জন কম-বেশি ১৯ লাখ থেকে ২৫ লাখ (ক) সরকারি পলিটেকনিক ৪৮ হাজার থেকে ৫০ হাজার (খ) বেসরকারি পলিটেকনিক : ৭০ হাজার থেকে ৯০ হাজার মোট : কম-বেশি ১ লাখ ১৮ হাজার থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার ২০১৬ ১৪ লাখ ৫২ হাজার ৬০৫ জন ২০১৭ ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৭২২ জন উপরের ছক থেকে লক্ষণীয় যে, ২০১৭ সালে আমাদের দেশে ১৪ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী এসএসসি পাস করেছে। একাদশ শ্রেণিতে সাধারণ শিক্ষায় আসন রয়েছে কম-বেশি ১৯ লাখ থেকে ২৫ লাখ। পাসকৃত সব ছাত্রই যদি সাধারণ শিক্ষায় ভর্তি হয়, তারপরও ৪ লাখ থেকে ১১ লাখ আসন খালি থাকবে। তাহলে কারিগরি শিক্ষার ১ লাখ ১৮ হাজার থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার (কম-বেশি) আসন পূর্ণ হবে কিভাবে? কারিগরি শিক্ষায় ৫০% ভর্তি বাধ্যতামূলক করতে হবে, যেহেতু কারিগরি শিক্ষা গ্রহণে এখনও আমাদের দেশে আগ্রহ কম, সেহেতু সাধারণ ও কারিগরি শিক্ষা গ্রহণের অনুপাত নির্ধারণ হওয়া প্রয়োজন। অবশ্যই সাধারণ শিক্ষার চেয়ে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণের অনুপাত বেশি হতে হবে। নইলে সরকারের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হবে না। সরকারি নির্দেশনা জারির মাধ্যমে এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের শতকরা ৫০ ভাগকে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ বাধ্যতামূলক করতে হবে। সেক্ষেত্রে একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষা গ্রহণের আসন কমিয়ে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণের আসন বৃদ্ধি করতে হবে। কারণ দক্ষতাবিহীন সনদভিত্তিক শিক্ষা ব্যক্তি, পরিবার ও জাতির জন্য বোঝা। কারিগরি শিক্ষাকেই মূলধারা করতে হবে। এজন্য বর্তমানের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে সাধারণ ও কারিগরি শিক্ষার অনুপাত নির্ধারণপূর্বক শিক্ষার পূর্বাভাস (ঊফঁপধঃরড়হধষ ঋড়ত্বপধংঃ) নিম্নরূপ হওয়া উচিত— সারণি-৩ : সাধারণ ও কারিগরি শিক্ষার পূর্বাভাস: সাল সাধারণ শিক্ষা কারিগরি শিক্ষা ২০২০ ৮০% ২০% ২০২৫ ৭০% ৩০% ২০৩০ ৬০% ৪০% ২০৩৫ ৫০% ৫০% ২০৪০ ৪০% ৬০% উপরোক্ত লক্ষ্য অর্জন করতে পারলে ২০৩০ সালে যখন আমাদের তরুণ জনগোষ্ঠি মোট জনসংখ্যার দুই তৃতীয়াংশ হবে, সে সর্বোচ্চ কর্মক্ষম জনসম্পদকে কাজে লাগিয়ে ২০৪০ সালে আমরা উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছাতে পারবো। শিক্ষিত স্নাতক বেকার বেশি : কারিগরি শিক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ অপেক্ষাকৃত বেশি। তাই তাদের মধ্যে বেকারত্বের হারও সবচেয়ে কম। ২০১৩ সালের শ্রমশক্তি জরিপের তথ্যানুযায়ী নিচের সারণিতে বিষয়টি স্পষ্ট হবে- সারণি-৪ ঃ শিক্ষিত বেকার বা শিক্ষিত কর্মহীন মানুষের হার : এসএসসি উত্তীর্ণ ৭ শতাংশ এইচএসসি উত্তীর্ণ ১৩.৬ শতাংশ স্নাতক ও স্নাতক উত্তর শিক্ষিত ব্যক্তি ১৬.৪ শতাংশ অর্থাত্ শ্রমশক্তি জরিপের (২০১৩ সাল) তথ্য অনুযায়ী এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে বেকারত্বের হার সাড়ে ৭ শতাংশ, এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে এ হার ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ। কিন্তু স্নাতক ও স্নাতক-পরবর্তী পর্যায়ে শিক্ষিত ব্যক্তিদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ। অর্থাত্ যার শিক্ষার ডিগ্রি যত বড়, তার বেকার থাকার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি স্নাতকের নিচ পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন এমন ব্যক্তিদের মধ্যে বেকারত্বের হার কয়েক বছর ধরে কমে যাচ্ছে। ২০১৩ সালের শ্রমশক্তি জরিপেই দেখা গেছে, ২০১০ থেকে ২০১৩ - এই তিন বছরে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করা তরুণ-তরুণীদের বেকারত্বের হার কমেছে। কিন্তু একই সময়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিদের মধ্যে বেকারত্বের হার সাড়ে ৬ শতাংশ বেড়েছে। ২০১০ সালে এ হার ছিল ৯ দশমিক ৯ শতাংশ, আর ২০১৩ সালে হয়েছে ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ। এ পরিসংখ্যানই বলে দেয় কর্মমুখী শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়া এখন সময়ের দাবি। উপরের জরিপ থেকে স্পষ্ট হয় যে, শিক্ষিত যুবসমাজের বেকারত্বের হার কমাতে হলে কিংবা তা যেন আর বাড়তে না পারে সে ব্যবস্থা করতে হলে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমিয়ে কারিগরি শিক্ষার প্রতি তাদের আরও বেশি আকৃষ্ট করতে হবে। সাধারণ ও কারিগরি শিক্ষার অনুপাত নির্ধারণ না করে গতানুগতিক ধারা অব্যাহত থাকলে কারিগরি শিক্ষাকে শিক্ষার মূলধারায় পরিণত করা এবং বেকার সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে না। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ দেশে বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারণে প্রতি জেলায় একটি করে সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও প্রতিটি উপজেলায় একটি করে বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, টেক্সটাইল ও লেদার ইনস্টিটিউটসহ এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ শিক্ষানীতিতে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডকে অধিকতর শক্তিশালী করা ও প্রয়োজনীয় আর্থিক সংস্থান ও জনবল বৃদ্ধি, যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক-প্রশিক্ষক নিয়োগের অঙ্গীকার করা হলেও বাস্তব অগ্রগতি সামান্যই। প্রতি বিভাগে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড হওয়া দরকার : একটিমাত্র কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পক্ষে বিপুল সংখ্যক কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তত্ত্বাবধান করা সম্ভব নয়। দেশে ৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠা হলেও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সংখ্যা ১টিই রয়ে গেছে। অর্থাত্ কারিগরি শিক্ষা উপেক্ষিতই রয়ে গেছে। দেশে যদি ৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড দরকারি মনে হয়, তবে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড স্থাপন হওয়া উচিত অন্তত ১০টা। এ ধরনের কোন পরিকল্পনা দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। উপরন্তু পরিকল্পনাহীনতার কারণেই দেশে এখন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৯টি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত প্রায় ৭০০ সরকারি-বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স খোলা হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে প্রায় ১০০ হতে চলেছে। এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিবছর স্নাতক (পাস), স্নাতক (সম্মান) ও মাস্টার্স পর্যায়ে প্রায় ১০ লাখ শিক্ষার্থী ভর্তি হন। প্রতিবছর এসব প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চ ডিগ্রি নিয়ে বেরিয়ে আসেন প্রায় ৭ লাখ। কিন্তু এত বিপুলসংখ্যক উচ্চশিক্ষিত লোকবলের চাহিদা আমাদের শ্রমবাজারে নেই। সে কারণে প্রতিবছর প্রায় ৩ লাখ উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণী বেকারের তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন। এ ধারা থেকে পরিত্রাণে আশু করণীয় : ১. স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষাকে সীমিত করে সনদনির্ভর দক্ষতাহীন শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা হ্রাস করা। ২. এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের কমপক্ষে ৫০ শতাংশকে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা। ৩. সাধারণ শিক্ষায় একাদশ শ্রেণির আসন সংখ্যা যৌক্তিক হারে সঙ্কুচিত করে কারিগরি শিক্ষার আসন বৃদ্ধি করা এবং কোনো আসন যাতে খালি না থাকে তা নিশ্চিত করা। ৪. শুধু পরিমাণগত নয়, গুণগত মানও নিশ্চিত করা। ৫. বেসরকারি পর্যায়ে নতুন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট অনুমোদনের ক্ষেত্রে মান ও ইতোমধ্যে অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া। ৬. প্রতিটি বিভাগে ১টি করে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড স্থাপন করা। ৭. শ্রম বাজারের চাহিদা নিরূপণ করে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো। উপসংহার : কর্মমুখী কর্মসংস্থান সম্প্রসারণের স্বার্থেই কারিগরি শিক্ষাকে মূলধারায় পরিণত করা প্রয়োজন। এর জন্য শিক্ষার এ ব্যবস্থার গুণগত পরিবর্তন ও উন্নয়ন দরকার। দেশে একের পর এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা প্রচুর অর্থ ব্যয় করে উচ্চতর ডিগ্রি নিচ্ছেন। কিন্তু নিশ্চিত হচ্ছে না তাদের কর্মসংস্থান। তাই কারিগরি শিক্ষার বিকাশ এবং সে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কর্মমুখী খাতে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি জরুরি হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশ এখন তরুণ জনগোষ্ঠীর দেশ। এ অঞ্চলের ৪৫টি দেশের জনসংখ্যাভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আমরা এক্ষেত্রে সবচেয়ে সুবিধাজনক স্থানে রয়েছি। শুধু তাই নয়, এ মুহূর্তে বাংলাদেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা (১৫-৫৯) মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশেরও বেশি। তাই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড (জনমিতি মুনাফা) বিবেচনায় বাংলাদেশ এখন অতুিক্রম করছে একটি সুবর্ণ সময়। আমরা এ সুযোগ ও সম্ভাবনার সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে প্রত্যাশিত উন্নত দেশে পরিণত হতে পারি। কিন্তু তরুণ-তরুণীদের প্রকৃত শিক্ষা ও কাজ দিতে না পারলে সে সম্ভাবনা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হবার আশঙ্কা সর্বাধিক। শ্রম বাজারে কর্মসংস্থানের হার বাড়াতে হলে কারিগরি শিক্ষাকেই প্রাধান্য দিতে হবে। কিন্তু সরকারের সঠিক নীতির অভাবে প্রায় ৪ শতাধিক বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অনুমোদিত আসনের প্রায় ৫০ শতাংশ আসন শূন্য থেকে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে কারিগরি বা কর্মমুখী শিক্ষায় ধাবিত করার কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। তাহলেই ২০৩০ সালের দুই-তৃতীয়াংশ কর্মক্ষম যুবসমাজকে আমরা দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করতে পারবো। আর এ দক্ষ যুবশক্তিই বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছে দেবে - বাস্তবায়িত হবে সরকারের ২০৪১ সালে সমৃদ্ধ ও উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছাবার স্বপ্ন। লেখক : কলামিস্ট ও নির্বাহী সম্পাদক, কারিগর। |