শিরোনাম: |
ইসির সংলাপে প্রস্তুত বিএনপি
|
এম. উমর ফারুক : আগামী নিবার্চন নিয়ে চলছে নানা মেরুকরণ। এই ইস্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গন অনেকটা উত্তপ্ত। শেখ হাসিনার অধীনে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার ও আওয়ামী লীগ। এর বিরোধিতা করে নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে বিএনপি। এ সঙ্কট নিরসনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। মধ্য জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে এ সংলাপ। আসন্ন সংলাপে অংশ নিতে বিএনপি প্রস্তুত রয়েছে বলে দলটির বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশের যে রাজনৈতিক সঙ্কট শুরু হয়েছে, তা নিরসনের জন্য যে উদ্যোগ নেয়া হবে তাতে অংশগ্রহণ করবে বিএনপি। এ দেশের গণমানুষের দল বিএনপি। দেশের স্বার্থে ইসির উদ্যোগে অবশ্যই সাড়া দেবে বিএনপি। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে আগামী নির্বাচনের চিন্তা করলে তা কোনোদিন সফল হবে না। সহায়ক সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন দেয়ার পরিবেশ এ সরকাকেই তৈরি করতে হবে। জানা গেছে, আসন্ন ইসির সংলাপে অংশ নিয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে বেশ কিছু প্রস্তাব লিখিতভাবে তুলে ধরবে বিএনপি। এসব প্রস্তাব তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এর পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন যাতে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে পারে, সেজন্য নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরবেন তারা। ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে, আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশের নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম, পর্যবেক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মধ্য জুলাই থেকে সংলাপ শুরু করবে কমিশন। সংলাপে সীমানা পুননির্ধারণ, আইন সংস্কার, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নতুন নিবন্ধন, ভোটকেন্দ্রে ইসির সমতা বাড়ানো ও সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি নিয়ে আলোচনা হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইসির সঙ্গে এ সংলাপে যোগ দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সংলাপে বিএনপি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিএনপি ইসিকে একটি প্রস্তাবনা দেবে। এই প্রস্তাবনা তৈরির কাজ করছে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম এবং এ ব্যাপারে অভিজ্ঞদের পরামর্শ নেয়া হচ্ছে। জানা গেছে, সংলাপে নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করতে গণপ্রতিনিধিত্ব আইনের (আরপিও) পাঁচটি ধারা সংশোধনের প্রস্তাব করবে বিএনপি। এছাড়া নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করতে কমিশনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতকরণ, কমিশনের আর্থিক স্বাধীনতা, দলীয় মনোভাবাপন্ন নির্বাচনী কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে তাদের অপসারণ, নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার পর থেকে নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ পর্যন্ত সরকারের স্বরাষ্ট্র, অর্থ, তথ্য, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার, শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা, পররাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখা এবং নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ প্রভৃতি বিষয় থাকবে প্রস্তাবনায়। পাশাপাশি ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও নতুন ভোটার তালিকা নিবন্ধীকরণযোগ্য সব নাগরিক, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, কারাবন্দি ও নানা মামলায় যুক্ত ব্যক্তি এবং নেতাকর্মীদের ভোটার করার বিষয়ে প্রস্তাব থাকবে। এছাড়া নির্বাচনকালীন সময়ে প্রতিরক্ষাবাহিনী মোতায়েন ও তাদের ম্যাজিস্টেরিয়াল মতামত প্রদানের দাবি জানানো হবে। প্রস্তাবনায় রাজনৈতিক দলের প্রকাশ্যে আনুগত্য পোষণকারী কোনো প্রতিষ্ঠানকে পর্যবেক্ষক না করার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরা হবে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার ন্যূনতম এক মাস আগে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা বা ব্যক্তিকে তালিকাভুক্ত করা, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার সাত দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের তালিকাভুক্ত জাতীয় ও স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার নাম ও পরিচয় এবং তাদের মনোনীত পর্যবেকদের নাম ও তালিকা প্রকাশের সুপারিশ করা হবে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ন্যূনতম সাত দিন আগে আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিদেশি পর্যবেক্ষক সংস্থা এবং বিদেশি রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়োজিত পর্যবেক্ষকদের নাম ও তালিকা প্রকাশ করতে বলবে বিএনপি। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ইসির সংলাপে বিএনপি প্রস্তাবনা দেবে। সেই প্রস্তাবনার কাজ প্রায় শেষ। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সেই প্রস্তাবনা দেখে চূড়ান্ত করবেন। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে সরকার কোনো নীল নকশা করার চেষ্টা করলে তা প্রতিহত করা হবে। শেখ হাসিনার অধীনে নয়, নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন দিতে হবে। আর সেই নির্বাচনের জন্য দেশের মানুষ অপেক্ষা করছে। |