শিরোনাম: |
রসালো লিচুর দেশে
|
এখন চলছে লিচুর সময়। পথে-প্রান্তরে প্রায় সবখানেই এখন লিচুর দেখা মেলে। তবে তা নিয়ে আসা। একদম টসটসে গাছ থেকে পারা লিচু নয়। তাই রসালো ভাবটাও অনেকটা কম। সুতরাং রসালো লিচু খেতে চাইলে চলে আসুন লিচুর দেশে। বোধকরি সবাই রসালো মিষ্টি লিচু খেতে ভালোবাসেন। শহরের ৩ টাকা পিস লিচু খেয়ে কি আশ মেটে! তাছাড়া প্রিয় ফলটি কীভাবে চাষ হয়, কেমন হয় এর গাছ। বিশাল বাগানে অগুনতি লিচু চাক্ষুষ দেখার সাধও তো হয়। তাই আর দেরি না করে চলে যান সরাসরি লিচু বাগানে। বাংলাদেশের দিনাজপুর, ঈশ্বরদী ও এর আশপাশের জেলায় লিচু চাষ হয়। আর ঢাকার কাছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে লিচুর আবাদ হয়ে থাকে। আজ রইল এগুলো নিয়েই বিশেষ ফিচার। জানাচ্ছেন -মো. তাওহীদ
দিনাজপুর লিচুর জন্য বরাবরই খ্যাতি দিনাজপুরের। এখানকার লিচুর আকার যেমন বড়, স্বাদও চমত্কার। দিনাজপুর জেলার সবখানেই লিচুর চাষ হয়। তবে জেলা সদরের মাশিমপুর লিচুর জন্য সবচেয়ে চমত্কার জায়গা। এ এলাকার লিচু গাছগুলো বয়সেও প্রবীণ। দিনাজপুর শহর থেকে রামসাগরের দিকে চলে যাওয়া সড়কটি ধরে সামনের দিকে কিছুক্ষণ চলার পরেই মাশিমপুর। এই রাস্তার দুইপাশে প্রচুর লিচু গাছ দেখতে পাবেন। আর রাস্তা ছেড়ে কোনো গ্রামে ঢুকে পড়লে তো কথাই নেই। লিচুর ভুবনে হারিয়ে যাবেন আপনি। বাড়ির আঙ্গিনাতেই লিচু গাছ বেশি। তাই লিচু গাছ দেখার পাশাপাশি পাবেন আতিথেয়তা! কীভাবে যাবেন ট্রেনে যেতে চাইলে কমলাপুর রেলওয়ে থেকে টিকিট কেটে ফেলুন। সপ্তাহে মঙ্গলবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ১০টায় একতা এক্সপ্রেস, বুধবার ছাড়া প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে দ্রুতযান এক্সপ্রেস যায় দিনাজপুর। দিনাজপুর থেকে বুধবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে দ্রুতযান এক্সপ্রেস এবং সোমবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯টা ২০ মিনিটে একতা এক্সপ্রেস আন্তঃনগর ট্রেন ছেড়ে যায় ঢাকার উদ্দেশ্যে। বাসে যেতে চাইলে ঢাকার কল্যাণপুর ও গাবতলী থেকে নাবিল পরিবহনের এসি বাসে যেতে পারেন দিনাজপুর। এছাড়া এ পথে নাবিল পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, এস আর ট্রাভেলস, কেয়া পরিবহন, এসএ পরিবহন, শ্যামলী পরিবহনের নন এসি বাসও চলাচল করে। কোথায় থাকবেন দিনাজপুর শহরে থাকার জন্য ভালো মানের হোটেল হচ্ছে পর্যটন মোটেল। এছাড়াও শহরের মালদহ পট্টিতে আছে হোটেল ডায়মন্ড, নিমতলায় হোটেল আল রশিদ, হোটেল নবীন, হোটেল রেহানা রয়েছে। থাকতে পারেন সেখানেও। ঈশ্বরদী পাবনার ঈশ্বরদীতে প্রতি বছর লিচুর ফলন হয়। এখানে লিচু চাষের প্রধান এলাকাগুলো হল জয়নগর, মিরকামারী, চরমিরকামারী, মানিকনগর, ছলিমপুর, সাহাপুর, ভাড়ইমারী, জগন্নাথপুর, বক্তারপুর, বড়ইচড়া, শিমুলচড়া ইত্যাদি। তবে ঘুরে দেখার জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গা ছলিমপুর আর মিরকামারী। মহাসড়কের পাশের এই গ্রামগুলোর সবজায়গাতেই লিচু বাগান। ঈশ্বরদীর এসব এলাকার তিন হাজারেরও বেশি হেক্টর জামিতে বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষ হয়। আপনি কোন বাগানে যেতে চান সেটা ঠিক করে অটো ভাড়া নিন। অটোড্রাইভারই আপনাকে বাগান ঘুরিয়ে দেখাবে। লিচু বাগানে ঢুকতে পারবেন তবে অনুমতি নিতে হবে আর লিচু ছেড়া যাবে না। কীভাবে যাবেন ঢাকা বাসে ট্রেনে উভয় উপায়ে ঈশ্বরদী যাওয়া যায়। ঢাকার কল্যাণপুর, গাবতলী থেকে ঈশ্বরদী এক্সপ্রেস, পাবনা এক্সপ্রেস ও সনি এক্সপ্রেসে প্রতিদিন ছেড়ে যায় ঈশ্বরদীর উদ্দেশ্যে। ট্রেনে যেতে চাইলে ঈশ্বরদীর জন্য আছে ২টি ট্রেন। সুন্দরবন এক্সপ্রেস এবং চিত্রা এক্সপ্রেস। বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ছাড়ে সুন্দরবন এক্সপ্রেস। সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় ছাড়ে চিত্রা এক্সপ্রেস। কোথায় থাকবেন ঈশ্বরদীতে রেলওয়ে জংশনের পাশে আছে হোটেল ফয়সাল, ঈশ্বরদী ও উত্তরা। এসব হোটেলে ২৫০ থেকে ১ হাজার ২শ’ টাকায় থাকা যায়। এছাড়া থাকতে পারেন পাকশী রিসোর্টে। তবে খরচ একটু বেশি হবে। সোনারগাঁও ঢাকার খুব কাছে সোনারগাঁও। এখানে তিনশোর ও বেশি বাগানে লিচুর চাষ হয়। সোনারগাঁও উপজেলা সদর এবং আশপাশের প্রায় ১০টি ইউনিয়ন জুড়ে দেখতে পাবেন এই লিচুর বাগান। সোনারগাঁও যাদুঘরের দিকে যেতে সড়কের দুই দিকে দেখা পাবেন অনেক বাগানের। অবশ্যই অনুমতি নিয়ে ঢুকবেন। মজা হলো, অনুমতি নিয়ে লিচুও খেতে পারবেন এখানে। তবে কিনে খেতে হবে। সোনারগাঁওয়ের লিচু বাগানগুলোর প্রধান প্রজাতি হলো কদমি ও বোম্বাই জাতের লিচু। তবে অন্যান্য প্রজাতির লিচুর চাষও হচ্ছে। যেমন- চায়না থ্রি, মোজাফফরপুরী, এলাচি ও বাদামি ইত্যাদি। এর মধ্যে কদমি প্রজাতির লিচু সবচেয়ে আগে পাকে। সোনারগাঁওয়ের যে এলাকাগুলোতে লিচুর চাষ হয় সেগুলো হলো- ভরত, পানাম, টিপরদী, খাসনগর, মনারবাগ, চিলারবাগ, দৈলরবাগ, কৃষ্ণপুরা, গোবিন্দপুর, দত্তপাড়া, বাগমুছা, অর্জুন্দী, হাতকোপা, গোয়ালদী, হরিষপুর, ভট্টপুর, গাবতলী, হারিয়া, বৈদ্যেরবাজার, তাজপুর, সাদীপুর, ইছাপাড়া, দুলালপুর, বারদী, সেনপাড়া ইত্যাদি। কীভাবে যাবেন ঢাকার গুলিস্তান থেকে সোনারগাঁওগামী বাসে চলে যাবেন সোনারগাঁও। সেখানে নেমে যে কোনো বাহনে ঘুরে দেখতে পারেন বাগানগুলো। এই ভ্রমণে দেখবেন বিশাল বিশাল গাছে ঝুলে আছে অসংখ্য লিচু। এক একেকটা গাছ বিশাল জায়গাজুড়ে রাজত্ব করছে একাই। অনেক ডাল লিচুর ভারে নুয়ে পড়ে। লিচু বাগান ২৪ ঘণ্টা পাহারা দিতে হয়। দিনে পশু-পাখি আর মানুষের কাছ থেকে রক্ষা করতে হয় বাগান আর রাতে বাঁদুরের কাছ থেকে। অনেকে তাই গাছের ওপর বিশাল পলিথিন দিয়ে রাখে। লিচু পাকে খুব তাড়াতাড়ি। তাই লিচুর মৌসুমও হয় ক্ষণস্থায়ী। |