শিরোনাম: |
লক্ষ্যহীনভাবেই চলছে ২০ দলীয় জোট
|
এম.উমর ফারুক : পরিকল্পনা আর লক্ষ্যহীনভাবেই এগুচ্ছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের কার্যক্রম। জাতীয় রাজনীতির কোনো সঙ্কটকালে কিংবা বিএনপি চেয়ারপার্সনের সংবাদ সম্মেলনের আগে নামকাওয়াস্তে এই জোটের শীর্ষ নেতাদের সাথে বৈঠক করেন জোট প্রধান। আবার কোনো কোনো সময়ে তাও এড়িয়ে যায় জোটের নেতৃত্বদানকারী বিএনপি। যার কারণে ক্ষুব্ধ ও হতাশ এই জোটের শরীক নেতৃবৃন্দ।
জোটের কয়েকজন শীর্ষ নেতা বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত জোট গঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করতে পারি নাই। তাই আমরাও জানি না আমাদের কাজের পরিধি। বিএনপি আমাদেরকে শুধু ব্যবহারের রাজনীতিই করছে। তারা বলেন, আমাদের প্রতিপক্ষ ১৪ দলীয় মহাজোট আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য অনেকটা ঢাকঢোল পিটিয়ে মাঠে নেমে পড়েছে। আর আমরা রয়েছি অন্ধকারে। যদি দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে শেষ মূহুর্তের সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনী যুদ্ধে অবতারণ করতেই হয় তাহলে আমাদের কি প্রস্ততি রয়েছে তা আমরাও জানি না। জোটের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, আমাদেরকে শুধু জোটের অলঙ্কার হিসেবেই রাখা হয়েছে। মাঝে মধ্যে গুলশান কার্যালয়ে রং চা খাওয়ার জন্য ডাকা হয়। আর আমরাও যাই। সকল সিদ্ধান্ত আগে থেকেই চূড়ান্ত করা থাকে। আমাদের শুধু তথ্যটুকু জানিয়ে বিদায় করা হয়। আর আমরাও মাথা নীচু করে চলে আসি। তিনি বলেন, বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। এই দলে অনেক থিংক ট্যাঙ্ক আছে। তারা সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন। কিন্তু রাজনীতিতে আলোচনা করা একটি ভালো গুন। আমরা সেই আলোচনাকে আরো গভীরে নিয়ে যাবার চেষ্টা করতে পারি। কিন্তু এই জোটে কখনো তা হয় না। আরেকজন শীর্ষ নেতা জানান, বিএনপির এই মোড়ল গিরি স্বভাবের কারণে ইতোমধ্যে অনেক শরীক দল বের হয়ে গেছে। আর অনেকে বের হয়ে যাওয়ার সূযোগ খুঁজছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী নির্বাচনের আগে জোট ভাঙ্গার অনেক চেষ্টা করা হয়েছিলো। অনেক লোভনীয় অফারও দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু খালেদা জিয়ার আশ্বাসে আমরা জোট ভাঙতে দেইনি। এটাই আমাদের রাজনৈতিক জীবনের একটা ভূল সিদ্ধান্ত ছিলো। কিন্তু এ ধরনের ভূল আমরা সবসময় করবো তার গ্যারান্টি নাই। জোটের অস্থিরতা বিষয়ে জোটের শরীক রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ বলেন, মূলত বিএনপি-জামায়াতের জোটে এখন প্রধান দুই দলের মধ্যেই টানপোড়েন চলছে। বিএনপি আন্তর্জাতিক বলয়ের সমর্থন আদায়ের জন্য ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে অনেকটা দুরত্ব বজায় রেখে কৌশল নির্ধারণ করছে। এর সঙ্গে অন্যান্য দলগুলোকেও তারা সাইডলাইনে রেখে দিয়েছে। এমনকি নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ পর্যন্ত কমিয়ে আনে দলটি। বিশেষ করে দশম জাতীয় নির্বাচনের পর থেকেই বিএনপি এমন বিমাতাসুলভ আচরণ করছে। আর এর যোগ্য জবাব দিতে সময়ের অপেক্ষায় আছেন অনেক শরীক রাজনৈতিক দল। জোটের ইসলামী দলগুলোর একজন শীর্ষ নেতা বলেন, বিএনপির সাথে ইতিমধ্যে দেশের সকল ইসলামী দলের দূরত্ব তৈরী হয়েছে। যার কারণে এর আগে কয়েকটি ইসলামী দল বের হয়ে গেছে। অন্যরাও যেকোনো সময়ে বের হয়ে যাবে। এর মধ্যে খেলাফতে ইসলাম আর জমিয়তে উলামা দলের নেতৃবৃন্দ বিএনপির উপর চরম নাখোশ। তিনি বলেন, সমপ্রতি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হেফাজতে ইসলামসহ আলেমদের সাথে বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে শেখ হাসিনার চরম বিরোধীতাকারী আলেমগনও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রধানমন্ত্রীর ব্যবহার আর রাজনৈতিক আলোচনায় মুগ্ধ হয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনসহ দলটির শীর্ষ নেতাদের মুন্ডুপাত করছেন। জোটের শরীক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সহি সালামতে আছি, আরামে আছি। জোটের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের জোটে অনেক দলের নিবন্ধন নাই। আবার সকলের সাংগঠনিক অবস্থানও এক নয়। দলীয়ভাবে আমরা আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্ততি নিচ্ছি। তবে জোটগতভাবে পরিকল্পনা করে নির্বাচনী প্রস্ততি নিলে ভালো হতো। আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ১৪দলীয় জোট ইতিমধ্যে অনেকদূর এগিয়েছে। আমরাই পিছিয়ে আছি। জোটের অবস্থান নিয়ে তিনি বলেন, সমপ্রতি কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আমরা জোটগতভাবে জয়লাভ করেছি। ওই নির্বাচনে আমরা শরীক রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে গাটের পয়সা খরচ করে নির্বাচনী প্রচারনা চালিয়েছি, সময় ব্যায় করেছি। আর নির্বাচনে জয়লাভ করে বিএনপির প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু খালেদা জিয়াকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর সময়ে আমাদের কথা ভূলে গেছেন। ওই অনুষ্ঠানে ২০ দলীয় জোট নেতৃত্বকে নিমন্ত্রণ করলে তা সুন্দর, শালীন প্রেরণাদায়ক ও প্রাণবন্ত হতো। বিষয়টি আমাদের হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে। আমারা নিশ্চয় রাজনৈতিক শিষ্টাচার আশা করতে পারি। তিনি আরো বলেন, রাজনীতি হলো কৌশলের খেলা। দাবার চাল। জিদ নয় কৌশল দিয়েই রাজনীতি মোকাবেলা করতে হয়। আর এ কৌশলের খেলায় বিএনপি অত্যন্ত অপরিপক্ক, কাঁচা, ক্ষেত্র বিশেষে দুগ্ধপৌষ্য শিশু। আর যে কোন সংকটে তো বিএনপির অবস্থা আরো করুণ। সহজ বিষয়কে জটিল করে তালগোল পাকিয়ে একেবারে লেজেগোবরে করতে সিদ্ধহস্ত বিএনপি। এ ক্ষেত্রে বিএনপির জুড়ি মেলা ভার। আর ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তহীনতা বিএনপির অন্যতম ভূষণ। সকালের কাজ মধ্যরাতে করা বিএনপির ঐতিহ্য, অহংকার। তারপরও বিএনপি আমাদের একমাত্র অবলম্বন। দেশের মানুষের ও আশা আকাঙ্খার প্রতীক এ দল। জিদ ও আবেগ দিয়ে নয়, কৌশলেই এ ফ্যাসিবাদী সরকারকে মোকাবেলা করতে হবে। ১৯৯৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগকে সরকার থেকে হঠাতে জাতীয় পার্টি, জামায়াতের তখনকার আমির গোলাম আযম এবং ইসলামী ঐক্যজোটের তখনকার চেয়ারম্যান শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হককে সঙ্গে নিয়ে চারদলীয় জোট গঠনের ঘোষণা দেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা চারদলীয় জোট কলেবরে বেড়ে ১৮ দলীয় যে জোট হলে ইসলামী ঐক্যজোটও সঙ্গে থাকে। বিএনপি ও ইসলামী ঐক্যজোট ছাড়া সে সময় জোটের বাকি শরিকরা ছিল জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিশ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), কল্যাণ পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), ইসলামিক পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ, ন্যাপ ভাসানী, মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, পিপলস লীগ ও ডেমোক্রেটিক লীগ ও লেবার পার্টি। পরে পর্যায়ক্রমে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ও সাম্যবাদী দল এই জোটে যোগ দিলে তা ২০ দলীয় জোটে পরিণত হয়। শওকত হোসেন নিলুর নেতৃত্বে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) জোট থেকে বেরিয়ে গেলেও দলের নেতা ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নেতৃত্বে একটি অংশ ওই নামেই ২০ দলে থেকে যায়। আবার আবদুল লতিফ নেজামী ২০ দল ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার পরও ইসলামী ঐক্যজোটের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মাওলানা আবদুর রকিবের নেতৃত্বে আলাদা কমিটি করে বিএনপি জোটে থাকেন। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, জোটের একটি দলও কমেনি। |