শিরোনাম: |
বাস্তবতা ও অসংগতির শৈল্পিক রূপই হচ্ছে সাঈদ সুফির ‘বাস্তবতা ও আমি’ কাব্যগ্রন্থ
|
মোতাহার হোসেন : প্রতিটি মানুষের জন্মগত, বংশগত কিছু কিছু বৈশিষ্ট থাকে। আবার কোনো কোনো মানুষ তার বংশগত বৈশিষ্টের বাইরে নিজ কর্মগুণে, প্রচেষ্টার ফলে কিছু কিছু স্বাতন্ত্র বৈশিষ্ট বা প্রতিভার অধিকারী হয়। তেমনি একজন মানুষ কবি সাঈদ সুফি। তিনি তার বংশগত, পেশাগত বৈশিষ্টের বাইরে এসে মানুষের প্রতি, কবিতার প্রতি, সাহিত্যের প্রতি সর্বোপরি প্রকৃতির প্রতি তার নিরন্তর, অনাবিল ভালোবাসার স্বাক্ষর রেখেছেন। সম্প্রতি তার রচিত ‘বাস্তবতা ও আমি’ শিরোনামে একটি মৌলিক কাব্যগ্রন্থ তথা কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। সমাজ, সংসার, ঊনিশো একাত্তুর সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ, বায়ান্নের ভাষা আন্দোলনসহ সমাজ উন্নয়নে, মানবতার প্রতি একজন মানুষের দরদ, আন্তরকিতা, টান থাকা চাই। সেই বিবেচনায় তিনিও তেমন প্রকৃতির একজন মানুষ। তার সাহিত্য সাধনা অনেক দিনের হলেও গ্রহ্নিত আকারে এই বাইটিও তারা প্রথম কাব্যগ্রন্থ। এই বইটি উত্সর্গ করেছেন ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ঢাকে মহানস মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী তার বড় ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাক সেন্টুসহ সব মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তি কামিদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধায়।
কবি সাঈদ সুফির ‘বাস্তবতা ও আমি কাব্যগ্রন্থে একশটি কবিতা স্থান পেয়েছে। কবিতাগুলোর নামকরণের সঙ্গে কাব্যগ্রন্থের নামকরণ স্বার্থকতা এবং যৌক্তিকতা রয়েছে। এটি তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ হলেও মোটামুটি এর মুদ্রণ, বাইন্ডিং, অলঙ্করণ প্রভৃতিতে যথেষ্ট পরিণত ও রুচির পরিচয় রয়েছে বইয়ের পরতে পরতে। বইয়ের শুরুতে বাস্তবতা ও আমি কবিতায় সমাজ বাস্তবতারন পরিচয় ফুটে উঠেছে সুন্দরভাবে। কবিতার প্রথম চরণে তিনি লিখেছেন ‘বিচিত্র মানুষ চিত্রকলায় ভরপুর, নীতি নৈতিকতা/চলে যাচ্ছে অকেন অকেজন দূর!/অন্যায়-অবিচার করছে অকাতরে,/ মানুষ মানুষকে ভর করে। এতে কাব্য গ্রহ্নের নামের স্বার্থকা যেমনি রয়েছে তেমনি সামাজের বাস্তবচিত্র ফুটে উঠেছে। ঠিক তার পরের চরণে আছে, ঘটছে নৈতিকতার চরম অবক্ষয় সমাজে/চারিদিকে চলছে ব্যবসায়ী সংস্কৃতি/রণাজনৈতিক অস্থিরতা এতে সহজেই অনুমেয় বর্তমান সমাজের মানুষের চরিত্র, মানষিকতা প্রভৃতি। ফেসবুক আমার ভালো লাগে না শীর্ষক কবিতার দ্বিতীয় প্যারায় লিখেছেন ‘বন্ধু সব ভাসা ভাসা/নয় তাদের মন খোলাসা। ফেসবুকে যায় না চেনা/কে কি চায়, কে কি চায় না! কি চিন্তা কি ভাবনা, সবই যেন/ধোঁয়াসা, নিরাশার আশা সত্যি প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষকে চেনা বা মানুষের স্বভাব, চরিত্র, চিন্তাভাবনা কিছুই বোযা যায় না। তার হতাশা কবিতায় বলেছেন, .... জীবনের অর্থ খোঁজার নেই অবকাশ! ঝাঁলো রোদ, বৃষ্টি খরা এ নিয়ে যাদের জীবন গড়া, চারদিকে আকাশ চুম্বি অট্টালিকা! এটি সমাজের নিম্ন শ্রেণির শহরের বস্তিতে বসবাসকারীদের নিয়ে তার হতাশারণ চিত্র হলেও বাস্তবতার সঙ্গে মিল রয়েছে। ‘একদিন’ কবিতায় তিনি লিখেছেন, একদিন এই সুন্দর মায়াময় পৃথিবী/ থেকে চলে যেতে হবে, থাকব না কেউ। বন্ধু ভাইবোন আত্মীয়স্বজন/মা-বাবা সবাই যায় চলে। এটি সত্যি একদিন সবাইকেই এই মায়াময় ভুবন ছেড়ে চলে যেতে হবে। তবে তার আগে প্রতিটি মানুষকে সামাজের জন্য, মানুষের জন্য কিছু করা বা কিছু রেখে গেলে তবে সেই জন্মই স্বার্থক। বিস্মৃিত মন শীর্ষক কবিতায় এভাবে মানুষের কীর্তির কথা তুলে ধরেছেন তিনি। ...... কেন এমন হয়? গুণীজন বলে সৃজনশীল/কোনো কাজে শত বাধা আসে! বাধা অতিক্রম করে যারা রয়/ কীর্তিমান তারই হয়.. এটি যথার্থ। কবি স্মরণে কবিতায় প্রায় অনুরূপ কভার প্রতিধ্বনিত হয়েছে। তার অবারিত মন কবিতায় কবি দৃষ্টি প্রসারিত হয়েছে চাঁদের উজ্জ্বল রাতের প্রতিহ। এরকম অবস্থায় ভালোবাসার, ভালো লাগার প্রিয় মানুষের সঙ্গে চাঁদনী রাতে ঘুরতে যাওয়ার আন্দনই আলাদা। তার জাগ্রত বিবেক কবিতার শেষ প্যারায় বলেছেন, ‘মা হবে রত্নগর্ভা/দেশ পাবে নির্ভীক সুনাগরিক/করবে দেশ ও দশের সেবা/বয়ে আনবে দেশের গর্ব/ দূর করবে যত অনাঙ্ক্ষিত দুষ্মকর্ম/করবে পালন কল্যাণকর মানব কতাির নামকরণের স্বার্থকতাই এখানে। তার অনুভূতি যথার্থই। এ গ্রন্থের ১২৫ ১২৫ পৃষ্ঠায় ‘নদীরে তুই ফিরে আয়’ কবিতার শেষাংশে ঠিকই বলেছে যে... লোভী গোষ্ঠীর প্রতারণা, তোমার ঠিকানা বেদখল/তোমরার বুক চিরে মরু রেখোয় এখন শুধুই ক্রন্দন বয়ে যায়/ হায়রে আমার নদী তোমায় ভালোবাসতাম যদি.../নদীরে তুই ফিরে আয়, ফিরে আয় এটি কবির শুধু কল্পনা নয় বাস্তবেই দেশের নদ নদীগুলো দখলে, দূষণে, আগ্রাসনে ক্রমাগত হারিয়ে যাচ্ছে। নদীর স্রোত, গতিপথ সবই বদলে যাচ্ছে। চর জাগছে নদীর বুকে, নদীর তীরে গড়ে উঠছে অট্টালিকা। তার কাব্যগ্রন্থের শেষ কবিতা ‘সুপ্রভাত’ এ লিখেছেন, শুভসকাল বন্ধুগণ! সারাদিন কাটুক ভালো সবার/সেবায় নিবেদিত হোক প্রাণ...। তিনি মূলত কবি হলেও সমাজ বাস্তবতা, সমাজের অসংগতি, বৈষম্য, দারিদ্রতা, অশিক্ষার চিত্র যেমনি তুলে ধরেছেন কল্পনায়, বাস্তবতায় তেমনি বাস্তব জগের সঙ্গে বাস্তবতার সঙ্গে অত্যন্ত বিশ্বস্থতায় রচিত এ কাব্য গ্রন্থের ধারাবাহিকতায় আগামী দিনে আরও ভালো ভালো প্রকাশনার প্রত্যাশা থাকলো কবির কাছে। সম্পূর্ণ অপসেটে মুদ্রিত ১৩৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২০০ টাকা। বইটির প্রকাশক: এসএম দোহা। প্রকাশ করেছেন মেলা প্রকাশনী। লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট |