শিরোনাম: |
আমার কিশোরী প্রসঙ্গ
|
সাইফ আলী : গায়ের কিশোরীও খুব স্মার্ট হয়। ইশারা-ইঙ্গিত ভালো বোঝে এবং জবাবও দেয় ওই ভাবেই। আমি তখন নবম শ্রেণিতে পড়ি। স্কুল ছুটিতে সুযোগ পেয়ে বেড়াতে গেলাম আমার জন্মস্থান, আমাদের সেই গায়ে। পরদিন বিকেল বেলা ঘুরতে ঘুরতে গেলাম পাশের বাড়িতে। ওই বাড়িতে একজন খিটখিটে মেজাজের মহিলা বাস করেন- তার ছোট-বড় পাঁচ কন্যা সঙ্গে নিয়ে। আমি ওই ভদ্র মহিলাকে কাকিমা বলে সম্বোধন করি। আমাকে কাকিমা কখনোই ভালো চোখে দেখতেন না। আমার সাথে কখনো ভালো ব্যবহার করেছেন বলে আমার মনে পড়ে না। ছেলেবেলা থেকেই আমার স্বভাবে ঘুনপোকা বাসা বেঁধেছিল; অর্থাত্ স্বভাব খুব একটা ভালো ছিলো না। কাকিমাও আমাকে ওইভাবেই জানতেন। কয়েক বছর ধরে তার কোন না কোন মেয়ে প্রতিবছরই ১২ অতিক্রম করে চলছে। নিজ গ্রাম বা ভিন্ন গায়ের উঠতি বয়সের রোমিওদের স্বভাবও ঠিক রাখতে পারছে না তারা- যখন কাকিমার বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। কাকিমা রোমিওদের চোখের চাহনি দেখলেই বুঝে ফেলতে পারেন তাদের উদ্দেশ্য বা অভিব্যক্তি। তিনি তার সুন্দরী মেয়েদের নিয়ে বিপদে বা ভীতসন্ত্রস্ত থাকেন না কখনোই। বরং ওই মেয়েদের দিকে যে ছেলে চোখ তুলে চাইলো তো সে ছারে-খারে। অর্থাত্ বিপদে থাকে পড়শী রোমিওরা। সেবার অন্তত ৫/৬ বছর পরে যাওয়া হয়েছিলো বাড়িতে আমার। ওই সময়ে, আমি যখন বেড়াতে গেলাম ওই বাড়িতে, কাকিমা আমার সাথে ভালো আচরণ করে আমাকে অবাক করে দিলেন। আমাকে প্রশ্ন করলেন। বললেন,
‘কেমন আছো অতিথি বাবু?’ ‘আপনি কেমন আছেন কাকিমা?’ ‘ভালো- বসো’। তার ভালো আচরণে আমি কতকটা বিস্মিতই হলাম না শুধু; ভাবলাম, কাকিমা বোধহয় ভেবেছেন যে, আমি ভালো হয়ে গেছি; কিংবা ছেলেবেলায় যে, আমি তার মেয়েকে প্রেমের চিঠি দিয়েছিলাম নিশ্চয় তিনি সেটা মনে রাখেননি। হঠাত্ করে বাড়ির ওপাশ থেকে ছুটে এলো ওই কিশোরী- যার কথা বলতে চাইছি। স্বভাব ইচ্ছে করলেও তো ভালো রাখা সম্ভব নয়। আমি তো ভালো মানসিকতা নিয়েই ওই বাড়িতে গেছি। কাকিমার মেয়েটি যে এতো অসাধারণ সুন্দরী, তাকে দেখে আমার ‘মানসিকতা’ শব্দটির কথাই মনে নেই, তো ভালো-মন্দের বিষয় তো পড়ে মরেই রইলো। বালিকাটি বয়সে আমার চাইতে এক বছরের বড়। সে জন্মেছেও আমার এক বছর আগে, ফের পড়েও আমার এক ক্লাস উপরে। আমি যখন আমাদের এই গায়েরই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি, সে তখন ওই একই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে। ওই সময় আমি তাকে একখানা প্রেমপত্র দিয়েছিলাম। প্রেমপত্রের উত্তর বুঝে পেয়েছিলাম- কাকিমার তাড়া খেয়ে। মেয়েটি আমার কাছাকাছি এসে বললো, ‘কেমন আছো অতিথি?’ গায়ের মেয়ে এতো স্মার্ট, এতো সুন্দরী হতে পারে! আমি আশ্চর্য! তাকে আমার খুব ভালো লেগে গেলো মুহূর্তেই। আমার তো আসলে কিশোরী দেখলেই প্রেমে পড়ি- সে পড়ুক বা না পড়ুক- আমি আমার চেষ্টা চালিয়ে যাই। তবে এখন ইচ্ছে করছে এই মুহূর্তেই তাকে আমি আমার এই বিশাল ভালোলাগার কথাটুকু বলে ফেলি। না বলতে পারার অক্ষমতাকে মেনে নিতেই পারছি না। মন ভেদ করে, বুক ফুটো হয়ে বারবার বেরিয়ে আসছে অনুভূতিটুকু। কাকিমা কাছাকাছি না থাকলে প্রতি সেকেন্ডে বলতাম হাজার বার। যে যাই বলুন, বা যে যতোই ভনিতা করুন না কেন, সুন্দরী মেয়েদের প্রতি দুর্বলতা চলে আশে খুব সহজ আর দ্রুততার সাথে। সবার বেলাতে যতোই হোক- আমার বেলাতে আরো বেশি বেশি। আমি সুন্দরী মেয়েদের প্রতি ভিষণ দুর্বল। তাদের সাথে প্রেম করার লোভ সামলাতে পারি না কোনভাবেই। কালো মেয়েদের ক্ষেত্রেও তাই। কালো মেয়ে মানে ভালো মেয়ে- তাইনা! বলুন কাকে থুয়ে কাকে ছাড়ি! লাখ টাকার প্রতি লোভ করি না; কিন্তু সুন্দরী কন্যা আমার প্রেয়সি- এটা ভাবতে আমি অপছন্দ করিইনা। স্বভাব আমার এটুকুই খারাপ। ‘এটুকুই’ বলতে যদি সবটুকু বোঝায় তাহলে সবটাই। আমি সুন্দরী মেয়েদের সচরাচর সাদাসিধেভাবে আমার ভালোলাগার কথা বলে ফেলি। তবে দুঃখের বিষয় হলো এটা যে, এ পর্যন্ত আমার জীবনে একটি প্রেমও স্বার্থক হয়ে ওঠেনি। আজ পর্যন্ত কোন মেয়ে আমাকে বললো না যে, তোমাকে আমার ভালোলাগে বা তোমাকে আমি ভালোবাসি। আমি বলেছি কতো জনাকে তার কোন নির্দিষ্টতা নেই। ওর নাম অনন্যা। ওর চঞ্চলতা দেখে আমি আরো বেসামাল হয়ে যাচ্ছি। আমার গলা শুকিয়ে আসছে। কিছু না বুঝেই বললাম, ‘আমায় একটু জল খাওয়াবে?’ সে বললো, ‘একটু জল, কেন অনেক কিছু নয়- এক্ষুনি দিচ্ছি।’ সে দৌড়ে ঘরে ঢুকে জল খাওয়ার জন্য একটি পাত্র নিয়ে আমার ডান দিকে থাকা টিউবঅয়েল চেপে জল ভরে আগে নিজে একটু খেয়ে বাকিটুকু আমার হাতে দিয়ে বললো, ‘খাও’। আমি আশ্চর্য হলাম। তার এটো জল আমাকে খেতে দিল, আবার আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে। আমি ওভাবেই দাঁড়িয়ে হা করে তার দিকে চেয়ে রইলাম। ‘খাও। নাকি জল পাল্টে দেব?’ সে ফের বললো। তার এ কথায় আমার তন্ময় ভাংলো। বললাম, ‘না না ঠিক আছে। আমি তো এই জলটুকুই চাইছি।’ ততোক্ষণে কাকিমা অন্য দিকে প্রস্থান করেছেন। আমি জলের পাত্র হাতে নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘আগামীকাল বিকেল চারটের দিকে. . .’ কথাটি টেনে নিয়ে সে তার বা হাত উঠিয়ে বললো, ‘ওই মাঠের মধ্যেখানে, যেখানে সারা মাঠজুড়ে মটরসুটির চাষ হয়েছে। আমাদের ওই জমিটা তো তুমি চেন, আমি মটরশাক তুলতে যাব- কাল বিকেল চারটেয়।’ ‘আমি ওকে আর কিছুই বললাম না। আমার কথা তো সেই বলছে; তবে তাকে আমি আর কী বলবো! আমি তাকে কী ফিটিং দেব- সেই তো আমাকে ফিটিং দিয়ে দিল। যাই হোক, খুব ভালো লাগলো। মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি! বলার পূর্বেই সে আমার মনের কথা বুঝে সেরেছে। মুহূর্ত মধ্যেই আমি তার মন জয় করে নিলাম এবং বোধকরি আমি তাকে পেয়েও গেলাম! কারো মন জয় করা এতো সহজ হলে তো এতোদিনে আমি শ’পাঁচেক মেয়ের মন জয় করে ফেলতাম। |