রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ট্রাম্পের পুতিন প্রেমে ছেদ আসাদ দমনে যুদ্ধের হুঙ্কার
Published : Thursday, 6 April, 2017 at 6:00 AM, Count : 716

বর্তমান ডেস্ক : প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘনিষ্ট সহযোগী, তার প্রধান কৌশলগত উপদেষ্টা স্টিভ ব্যাননকে জাতীয় সিকিউরিটি কাউন্সিল বা নিরাপত্তা সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের কাউন্সিল থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। জেনারেল মাইকেল ফ্লিনকে রাশিয়া কেলেঙ্কারির পর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার পর, এটাই সবচে বড় পরিবর্তন। স্টিভ ব্যননকে বিবেচনা করা হয়, বর্তমান প্রসাশনের সবচে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে। এমনকি অনেক জায়গায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বদলে সেই আসলে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন বলে গণ্য করা হয়েছে এতদিন। তাকে সরিয়ে দিয়ে ট্রাম্প প্রসাশন তার রাশিয়া নীতিতে কোন পরিবর্তন আনতে যাচ্ছেন কি-না, সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না।
তবে মধ্যপ্রাচ্যে আসাদ ‘মন্দের ভালো’ বলে এতদিন ডোনাল্ড ট্রাম্পের যে মূল্যায়ন ছিল, সেটা যে পরিবর্তন হয়েছে তা নিজেই জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সিরিয়ার ইদলিবে কেমিক্যাল উইপেন্স বা রাশায়নিক অস্ত্র প্রয়োগে প্রায় ১শ’ জনকে হত্যার ঘটনায় সারা বিশ্বেই ক্ষোভ আর নিন্দার ঝড় বইছে। এই ঘটনা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদ ঘটিয়েছে বলে নিশ্চিত যুক্তরাষ্ট্র। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদ প্রশ্নে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ধারণা ভেঙে গেছে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগে শিশুদের মৃত্যু তার ধৈর্যের সব রকম রেড লাইন, সব সহ্যসীমা ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। হোয়াইট হাউস সফররত জর্দানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন তিনি মানতেই পারছেন না, বাচ্চাদের কিভাবে মারা হয়েছে, যেটা দেখে যুক্তরাষ্ট্র একা চোখ বন্ধ করে বসে থাকতে পারে না। ‘যখন আপনি রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করে শিশুদের হত্যা করেন। ঐশরিক ফুটফুটে বাচ্চাদের হত্যা করেন, তখন সহ্যের লাল সীমা কেন, অনেক সীমাই অতিক্রম হয়ে যায়। আমার ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে’- হোয়াইট হাউসের সংবাদ ব্রিফিং এ বলছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
এদিকে জাতিসংঘে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদকে অপসারণ আর কেমিক্যাল অস্ত্রপ্রয়োগে গণহত্যা পরিচালনার অপরাধে শাস্তির মুখোমুখি করতে একটি নিরাপত্তা পরিষদে একটি রেজুলেশন পাশে ভেটো দিয়েছে রাশিয়া। সেখানকার আলোচনায় সিরিয়া আর রাশিয়ার প্রতিনিধি অস্ত্র প্রয়োগে হত্যার বিষয়ে ভিন্ন বক্তব্য উপস্থাপন করলে, জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি হত্যার বর্বর ছবি দেখে জানিয়েছন, যদি জাতিসংঘ কোনো ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র একাই ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। ‘দেখুন এই ছবি গুলো। কত নিষ্ঠুর। এই ছবির একটাই অর্থ, আসাদ সরকার আর রাশিয়ার কাছে মানবিকতা বলে কিছুই নেই। তারা আসলে শান্তি প্রতিষ্টা করতে চায় না। এই ছবির পরও যদি জাতিসংঘ চুপ করে বসে থাকে, তাহলে আমরা চুপ করে বসে থাকব না’- জাতিসংঘের আলোচনা বলছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত নর্থ ক্যারোলাইনা রাজ্যের সাবেক গভর্নর রাষ্ট্রদূত নিকিহ্যালি। এই নিয়ে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কোন দিকে মোড় নেবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে, আগামী সপ্তাহে রাশিয়ার রাজধানী মস্কো যাচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেস্ক তিলারসন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ট বলে পরিচিত তিলারসনকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, যে সিরিয়াকে দমনে রাশিয়াই যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বাধা। সেখানে এ নিয়ে কোন আলোচনা হবে কি-না জিজ্ঞাসা করলে তিলারসন জানান, ‘আসাদ সরকার যে সীমা লঙ্ঘন করেছে সেটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে, রাশিয়া আসাদ প্রশ্নে এখন ভিন্নভাবে ভাববে।’ এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তিলারসনের এই হালকাভাবে প্রতিক্রিয়া প্রকাশে ক্ষেপেছেন রিপাবিলকান সিনেটর মার্ক রুবিও। এর আগে আসাদ প্রশ্নে তিলারসন আর ট্রাম্প প্রসাশনের নমনীয় নীতির কারণেই আসাদ সরকার এমনটি করার সাহস পেয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন রুবিও। সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগে মৃত্যুর ছবি নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার সময় রুবিও বলেন, আপনি আসাদের মতো নরঘাতককে মৃদু ভত্সনা করে বলবেন, যে সে মন্দের ভালো লোক, তাহলে ত মানুষ খুনের বৈধতা দেয়ারই নামান্তর। একদিন আগে সিরিয়ার আসাদ সরকারের বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা শহর ইদলিব-এ মরনঘাতি রাসায়নিক গ্যাস প্রয়োগে প্রথম দিনেই ২০ শিশু সহ ৫৮ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। পরে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১শ’ এ। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বিভত্স এই দৃশ্য সামাজিক গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভ আর ঘৃণা বাড়ে বিশ্বজুড়ে। এর আগে এমন রাসায়নিক গ্যাস প্রয়োগে হত্যার অভিযোগেই সিরিয়ার আল আসাদকে ক্ষমতা থেকে অপসারণে আক্রমণ শুরু করেছিল ওবামা প্রসাশন। দীর্ঘ ৬ বছর ধরে চলা যুদ্ধে পরিসমাপ্তি আসেনি। বিদ্রোহীদের সঙ্গে সঙ্গে সেখানে আইএসের ডালপালা বিস্তার ঘটেছে। বলা চলে যুক্তরাষ্ট্র রণে ভঙ্গ দিয়েই আসাদবিরোধী যুদ্ধ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আগ্রাসি মনোভাবের কারণে। সেই নীতি পছন্দ করে প্রকাশ্যেই বিবৃতি আর বক্তৃতা দিয়ে আসছিলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এবারই প্রথম শোনা গেল ভিন্ন কথা। তাহলে কি আরেকটি যুদ্ধের দামামা শুরু করলো সিরিয়ার এই রাসায়নিক হামলা। পরিস্থিতি সেদিকেই মোড় নিচ্ছে বলে আপাতত অনুমান।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft