শিরোনাম: |
হবিগঞ্জ ও হাকালুকির ১৬ হাজার হেক্টর বোরো জমি পানির নিচে
|
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : হবিগঞ্জের ৭ উপজেলার ১০ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমির ফসল বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। কুশিয়ারা, কালনী, রত্না ও খোয়াই নদীর বাঁধ উপচে হাওরে পানি প্রবেশ করায় এসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায়ই ৮ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। বুধবার বেলা ২টা পর্যন্ত আজমিরীগঞ্জ পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ১৮১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত টানা বর্ষণের কারণে খোয়াই নদীর পানিও বাড়ছে। বুধবার দুপুর ১টায় খোয়াই নদীতে বাংলাদেশ-ভারত সীমন্তবর্তী বাল্লা পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। এদিকে বিসৃ্তর্ণ ফসলি জমি আগাম বানের পানিতে প্লাবিত হওয়ায় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অনেক স্থানে কৃষকরা নদীর পানি আটকাতে স্বেচ্ছায় বাঁধ মেরামতে কাজ করে যাচ্ছেন।
বুধবার দুপুর পর্যন্ত জেলার ১০ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমির ফসল বানের পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এর মাঝে সবচেয়ে বেশি নিমজ্জিত হয়েছে বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ ও লাখাই উপজেলায়। বানিয়াচংয়ে রত্না এবং আজমিরীগঞ্জে কালনী ও কুশিয়ারা নদীর বাঁধ ও রাস্তা উপচে হাওরে পানি প্রবেশ করছে। লাখাইয়ে খোয়াই নদীর পানিতে ফসল নিমজ্জিত হচ্ছে। তবে এখনও পর্যন্ত কোথাও সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। পানি উন্নয় বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এমএল সৈকত জানান, আজমিরীগঞ্জ পয়েন্টে বুধবার বেলা ২টায় কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ১৮১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। খোয়াই নদীর পানি বাল্লা সীমান্তে ৪৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ পানি সন্ধ্যা নাগাদ জেলা শহর পর্যন্ত আসবে। তবে কোথাও কোনো নদীর বাঁধ ভাঙেনি। বাঁধ উপচে পানি হাওরে প্রবেশ করছে। যে স্থানগুলোতে পানি উপচে হাওরে ঢুকছে সেগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পের বাইরে। তিনি বলেন, তবুও আমরা ফসল রক্ষায় সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দিনরাত আমরা স্থানীয়দের নিয়ে কাজ করছি। আবহাওয়া যদি আর খারাপ না হয় তবে আশাকরি খুব বেশি ফসল নষ্ট হবে না। তিনি জানান, জেলায় মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ রয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার হেক্টর জমি। কিন্তু আমাদের রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পের আওতায় আছে ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমি। আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং ও লাখাই উপজেলায় নিম্নাঞ্চলের যে জমিগুলো প্লাবিত হয়েছে সেগুলো এ প্রকল্পের আওতার বাইরে। বুধবার দুপুর পর্যন্ত জেলায় মোট ১০ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমির ফসল বানের পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এর মাঝে বানিয়াচং উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এখানে ৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমির ফসল ইতোমধ্যে পানির নিচে চলে গেছে। আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় ১ হাজার ৭৫৫ হেক্টর, লাখাই উপজেলায় ১ হাজার ৪২৫ হেক্টর, সদর উপজেলায় ৬৪০, নবীগঞ্জে ৬২০, বাহুবলে ৭৫ ও চুনারুঘাটে ৭০ হেক্টর জমির ফসল বানের পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। শুধু গত ২৪ ঘণ্টায়ই ৮ হাজার হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান মণ্ডল জানান, চুনারুঘাট ছাড়া অন্যান্য উপজেলায় উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও নদীর পানি হাওরে প্রবেশ করে ফসল তলিয়ে গেছে। শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা জানান, টানা ৬ দিনের ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে হাকালুকি হাওরের প্রায় ২৫ হাজার হেক্টরের বোরো ধানের ১৫ হাজার হেক্টর তলিয়ে গেছে। আর বৃষ্টিপাত না হলেও হাওরে দ্রুত পানি বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে বাকি বোরো ধান তলিয়ে যাবে। এতে হাওর তীরে এবার তীব্র খাদ্য সঙ্কট দেখা দেবে। হাকালুকি হাওরের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া, বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলা অঞ্চল এবং সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা অঞ্চলের ছোট বড় ২৩৭টি বিলের ২৫ হাজার হেক্টরে এবার বোরো ধান আবাদ করা হয়। অনুকুল আবহাওয়ার কারণে ধানে তেমন রোগ বালাই দেখা না দেয়ায় ফলনও ভালো হয়। ধানের শীষ বের হওয়ার পর গত বুধবার থেকে ভারি বর্ষণ ও থেমে থেমে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে হাওরে বন্যার পানি টুইটুম্বুর। ইতোমধ্যে হাওর ও হাওর তীরের সবকটি উপজেলার ৮৫ ভাগ বোরো ধান তলিয়ে গেছে। আর বৃষ্টি না হলেও যে হারে হাওরের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে বোরো ধান কাটার আর কোন সম্ভাবনা নেই। সরেজমিনে হাকালুকি হাওরের ধলিয়া, চকিয়া, চাতলা, জল্লা, বুইয়াজুরি, কৈয়ারকোনা, বালিজুরি ও ঘেড়ুয়া বিল ঘুরে দেখা যায়, বিলের তীর ঘেঁষে সামান্য কিছু বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। হাওরপাড়ের কৃষক ফরিদ আলী, সুলেমান মিয়া, আকল মিয়া, হারিছ আলী, ফজলু মিয়া, রাসেল আহমদ প্রমুখ জানান, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানিতে চোখের সামনে তাদের কষ্টের ফসলের হচ্ছে সলিল সমাধি। এবার বোরো ধান না পেলে হাওর তীরে দুর্ভিক্ষ হতে পারে। আর মাত্র ১০-১৫ দিনের মধ্যে ফসল কাটা শুরু হতো। ভুকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির জানান, তার ইউনিয়নের ৯০ ভাগ মানুষই বোরো চাষের ওপর নির্ভরশীল। ধার-দেনা করে অনেক কৃষকই বোরো ধানের চাষাবাদ করেছেন। গত ৬ দিনের লাগাতার বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টির কারণে তার ইউনিয়নের হাকালুকির হাওর এলাকার সব ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। |