শিরোনাম: |
অগ্নিকন্যা মতিয়া চৌধুরী
|
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীর ভূমিকা অনস্বীকার্য এটা সর্বজন স্বীকৃত। তাই সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার ২০২১ সালের রূপকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নারী ও শিশুদের উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তবে তার আগেই অনেক নারীরা তাদের সক্ষমতায় এগিয়ে গেছে অনেক দূর। সে কারণে আজ চারুলতায় রইল সেসব নারীর জীবনগাঁথা। যাদের গল্প বা জীবনী নতুন প্রজন্মকে আলোক পথ দেখাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। বিস্তারিত জানাচ্ছেন-অনিন্দ্য তাওহীদ
মোটা ভাত কাপড়ের জীবন বাংলার অগ্নিকন্যার। এখনও বদলাননি একটুও। মোটা কাপড় পরেন। চলাফেরা সাদামাটা। নেই সাজগোজ। সরকারি গাড়ি কিংবা অফিসে এসি থাকলেও ব্যবহার করেন না। সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী হলেও চলার পথে পুলিশ প্রটেকশনের গাড়ি নেয়ার প্রয়োজন মনে করেন না। আলোচিত এ ব্যক্তিত্ব হলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী। রাষ্ট্রীয় কাজের ব্যস্ততার মাঝেও নিজেই বাজার-সদাই করেন। কারওয়ানবাজার থেকে সংসারের জন্য চাল, ডাল, শাকসবজি, মাছ ও মাংস কেনেন দরদাম করে। খাদ্য তালিকায় কোনো আভিজাত্যের ছোঁয়া লাগেনি। বরাবরের মতো মোটা চালের ভাত, শাকসবজি, ভর্তা আর তরি-তরকারিই আছে এখনও। ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীরা একদিন ভালোবেসে তাকে ডাকতো অগ্নিকন্যা বলে। সেই নেত্রী ক্ষমতাধর হওয়ার পরও সাধারণ জীবনযাপন করছেন। কোনো লোভ-লালসা তাকে তার আদর্শ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। সেই রাজপথের নেত্রী ক্ষমতাসীন হয়েও সদাসতর্ক। সম্প্রতি তিনি গণমাধ্যমের কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করে রেখেছেন। সাক্ষাত্কার দিচ্ছেন না। অনেকের কৌতূহল, নীরব কেন বেগম মতিয়া চৌধুরী? সরকারের গুরু দায়িত্ব তার কাঁধে। সাপ্তাহিক ছুটি কিংবা সরকারি বন্ধের দিন ছাড়া ঘুম থেকে ওঠেন ভোরে। সকাল ৮টার মধ্যে নাশতা পর্ব শেষ করেন। সোয়া ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকার লোকজন ও দলীয় নেতা-কর্মীদের সাক্ষাত্ দেন। এরপর সাড়ে ৯টার মধ্যে রাষ্ট্রীয় কিংবা দলীয় কর্মসূচি না থাকলে সচিবালয়ের নিজ দফতরে পৌঁছান। বিকাল ৫টা পর্যন্ত টানা আট ঘণ্টা অফিস করলেও সরকারি অর্থে কোনো খাবার গ্রহণ করেন না। ঘটনাবহুল রাজনৈতিক জীবন তার। রয়েছে নানা দুর্বিষহ স্মৃতি। একবার-দুইবার নয়, ১৫ বার জেলে গেছেন। বছরের পর বছর আত্মগোপনে কাটিয়েছেন। কিন্তু মাথা নত করেননি। আর্থিক সমৃদ্ধির প্রলোভন দেখানো হয়েছে। তবুও নিজের অবস্থান থেকে একচুলও নড়েননি। দুঃখ-কষ্টের দিন শেষ করে আজ তিনি ক্ষমতায়। সরকারের মুখ্য ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম। সেখানেও তার আদর্শ ও অবস্থান অবিচল। বেগম মতিয়া চৌধুরীর নামটি তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরাও সম্মানের সঙ্গে উচ্চারণ করেন। তার জন্ম ১৯৪২ সালের ৩০ জুন। পিরোজপুরের নজিপুর উপজেলার মাহমুদকান্দায় তার পৈতৃক নিবাস। পিতা মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ছিলেন মাদারীপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। মা নুরজাহান বেগম গৃহিণী। লেখাপড়ায় হাতেখড়ি মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের এক গৃহশিক্ষকের কাছে। বাবার চাকরির সুবাদে মতিয়া চৌধুরীর শৈশব কেটেছে মাদারীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও জামালপুর শহরে। ১৯৫৮ সালে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী কামরুন্নেসা গার্লস কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে ম্যাট্রিক পাস করেন। কলেজে ভর্তি হয়ে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯৬০ সালে তত্কালীন ইডেন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট ও ১৯৬২ সালে বিএসসি পাস করেন। ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৩ সালে ন্যাপের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে ন্যাপ ছেড়ে যোগ দেন আওয়ামী লীগে। ১৯৮৬ সালে দলের কৃষি সম্পাদকের পদ পান। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন হলে তিনি কৃষি, খাদ্য ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। ২০০২ সালে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৪ সালের ১৮ জুন পারিবারিকভাবেই খ্যাতিমান সাংবাদিক বজলুর রহমানের হাতে হাত রেখে নতুন জীবন শুরু করেন। ২০০৮ সালে স্বামীর মৃত্যু তাদের জীবনে বিচ্ছেদ ঘটায়। |