শিরোনাম: |
কালেক্টরেট ভবন এখন জাদুঘর
|
কালেক্টরেট ভবন। বরিশাল জেলার সদর উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশ প্রত্নতাত্বিক অধিদপ্তর কর্তৃক সংরক্ষিত নিম্ন-গাঙ্গের অববাহিকার নির্মিত ঔপনিবেশিক শাসনামলের প্রথম প্রশাসনিক ভবন।
এটি উপনিবেশিক শাসকামলের স্থাপত্য ঐতিহ্যের একটি স্মারক নিদর্শন হিসেব সংরক্ষিত এই ভবনটি বাংলাদেশে নির্মিত ইতিহাসের প্রথম প্রসাশনিক ভবন। বর্তমানে এটি জাদুঘর। এখানে উপস্থাপন করা হয়েছে কালেক্টরেট ভবনের ইতিহাস, স্থাপত্যিক সংক্ষিপ্ত বিবরণ, নির্মাণ উপকরণ ও বিভিন্ন ধরনের নিদর্শন। প্রততাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে কালেক্টর ভবনের পুরাতন সকল আসবাবপত্র, পাথরের মূর্তি, পোড়ামাটির ফলক, কারুকার্যখচিত ইট, উত্কীর্ণ নানা লিপি, পুরনো মুদ্রা , বিভিন্ন ধরনে তৈজসপত্রসহ নিয়ে প্রায় ২ শতাধিক নানা নিদর্শন এবং উপাদান। জানা যায়,ঝালকাঠীর জেলার নলছিটি উপজেলার অর্ন্তগত “বারৈকরণ” সুলতানী এবং মুঘল আমলের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। ব্রিটিশ কোম্পানি আমলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দাপ্তরিক এবং এখানে প্রশাসনিক কার্যালয় প্রতিষ্ঠিত হবার পরে এই স্থানটির গুরুত্ব আরো অনেকগুন বৃদ্ধি পেতে থাকে। স্থানটির অবস্থান, এখানের ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ, কৃষক বিদ্রোহ এবং প্রতিকূল যোগাযোগ ব্যবস্থার ফলে তখন সদর দপ্তরটি স্থানান্তরের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল। সম্ভবত স্থানটির নিরাপদ ভৌগোলিক অবস্থান, কলকাতা থেকে ঢাকা আসার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত বলে সদর দপ্তর বারৈকরণ হতে বাকেরগঞ্জ এ স্থানান্তরে আগ্রহী হয়ে ওঠে। তত্কালীন ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানী দেওয়ানী লাভ করার পর লর্ড ক্লাইভ ১৭৭১ সালে বাকেরগঞ্জে এক দরবার অনুষ্ঠানে এই সিদ্ধান্তের কথা জানায়। ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে স্যামুয়েল মিডলটন সুন্দরবন কমিশনারের দায়িত্ব পাওয়ার পরেই এই সদর দপ্তরটি বারৈকরণ হতে বাকেরগঞ্জে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহন করে সিভিল কোর্ট, সহকারী কালেক্টরেটের কার্যালয়ে বাকেরগঞ্জে স্থানান্তরিত করা হয়। ১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দে তত্কালীন ইংরেজ গর্ভণর জেনারেল জনশোর ৭নং রেগুলেশন এ সুন্দরবন কমিশনারের পদ বিলুপ্ত করার পরে বাকেরগঞ্জকে একটি আলাদা জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সুন্দরবন এর কমিশনার স্যামুয়েল মিডলটন বাকেরগঞ্জে আগাবাকেরের গোলাবাড়ীতে নির্মিত প্রথম প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। যদিও দাপ্তরিক ভবনগুলোর অস্তিত্ব তখন কালের গর্ভে বিলীণ হয়ে গিয়েছিল। ক্রমবর্ধমান এই প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক সকল কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে এই দপ্তরও স্থানান্তরের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল। ১৮২১ সালের দিকে কালেক্টরেট ভবন নামের এই ভবনটি দ্বিতল ভবনে নির্মিত। ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে বাকেরগঞ্জ একটি পূর্ণাঙ্গ জেলা হিসেবে কালেক্টরেটের মর্যাদা লাভ করার পরে এখানে প্রথম কালেক্টর নিযুক্ত হয়েছিলেন উইলিয়াম হান্টার। শতাব্দীর পুরনো এই জরাজীর্ণ এই ভবনটি আজ বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘর-এ রূপ নিয়েছে। ১৯৭৯ সালের দিকে পি.ডব্লিউ.ডি বরিশাল এর এই পুরোনো কালেক্টরেট ভবনকে ব্যবহার অনুপযোগী ঘোষণা ও ১৯৮৪ সালের দিকে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। ২০০৪ সালে বাংলাদেশ সরকার এই ভবনটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ঘোষণা করে গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ২০০৫ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাছে পুরাতন কালেক্টরেট ভবন হস্তান্তর করা হয়। ২০০৫ সালে এই ভবন সংস্কার করে বিভাগীয় জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়। ২০০৬ সালে কালেক্টর ভবনের সংস্কার শেষ হয় এবং বিভাগীয় জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়। ২০০৭ সালের শেষ দিকে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। কালের সাক্ষী হয়ে আজও কথা বলছে এই ভবনটি। তাই সুযোগ হলে দেখে আসুন বাংলার ইতিহাসে প্রথম প্রশাসনিক ভবন। |