মঙ্গলবার ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ৮ পৌষ ১৪৩১
চাকরির ইন্টারভিউ টেক্কা দেয়ার কৌশল
Published : Friday, 3 March, 2017 at 6:00 AM, Count : 946

চাকরি পাওয়ার জন্য ইন্টারভিউ দিতেই হয় সবাইকে। তবে পেশাগত বিষয়ে আপনার আগ্রহ ও দক্ষতা দেখার জন্য যেমন একটি ইন্টারভিউ নেয়া হয়, তেমনি আপনার সম্পর্কে অন্য বিষয়গুলো জেনে নেয়ার জন্য একটি এইচআর (হিউম্যান রিসোর্স) ইন্টারভিউও নেয়া হয়ে থাকে। এই ইন্টারভিউয়ে কী ধরনের প্রশ্ন করা হয় এবং সেগুলোর উত্তর কেমন হতে পারে, বেশিরভাগ ক্যারিয়ার বিশেষজ্ঞ মনে করেন, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতরে তিন-চার জনের সামনে নিজের বিষয়ভিত্তিক কঠিন সব প্রশ্নের উত্তর দেয়া মানেই নিয়োগপত্র হাতে পাওয়ার একটা সহজ উপায় হতে পারে। অথবা কোনো মিডিয়া হাউস বা অন্য কোনো বেসরকারি দফতরের ইন্টারভিউয়ে কয়েকটা সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলেই আপনি চাকরিটা পেয়ে যাবেন। কিন্তু বাস্তবে কি আদৌ সেটা সম্ভব? এর উত্তর হবে, না। কারণ, প্রায় প্রত্যেকটি নামিদামি কোম্পানিতেই রয়েছে ‘এইচআর’ (হিউম্যান রিসোর্স) বা মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগ। একজন কর্মীর চাকরি সুরক্ষার পুরো দায়িত্বই বর্তায় এই বিভাগের ওপর। তাই কর্মী নিয়োগের সময়েও এই বিভাগটি একটি ইন্টারভিউ নেয়, যাকে বলা হয় ‘এইচআর ইন্টারভিউ’। প্রথমেই বলে রাখি, এই ইন্টারভিউয়ের প্রশ্ন কিন্তু একেবারেই আলাদা ধরনের, যার সঙ্গে খুব স্বাভাবিকভাবেই আপনাদের নিজের বিষয়ের কোনো মিল থাকবে না। এই ইন্টারভিউয়ে ভালো করা চাকরিপ্রাপ্তির চাকরির অন্যতম একটি পূর্বশর্ত। এই ইন্টারভিউয়ের কিছু সাধারণ প্রশ্ন এবং তার উত্তরের ধরণ তুলে ধরা হলো এই লেখায়।
নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন (টেল আস সামথিং অ্যাবাউট ইয়োরসেলফ বা ডেসক্রাইব ইয়োরসেলফ)
এই প্রশ্নটির উত্তরে প্রত্যেকেই যে ভুলটা করে থাকে সেটা হলো কোথায় সে পড়াশোনা করেছে, কী খেতে বা পড়তে ভালোবাসে, ইত্যাদি তথ্য দিয়ে সময় নষ্ট করে। আসলে, আপনার নিজের সম্পর্কে বলা মানে আপনার পছন্দ বা অপছন্দের বিষয় সম্পর্কে নয়, বরং আপনি কী ধরনের জব প্রোফাইল পছন্দ করেন (তবে অবশ্যই যে পদের জন্য ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছেন, সেটাকে প্রাধান্য দিতে হবে আপনাকে), বা কী বিষয় নিয়ে আপনি পড়াশোনা করেছেন, যে প্রোফাইলে কাজ করার জন্য আপনি আবেদন করেছেন, কেন আপনি সেই প্রোফাইলের জন্য উপযুক্ত সেসবই হলো এই প্রশ্নের যথাযোগ্য উত্তর। সহজ ভাষায়, ইন্টারভিউয়ার বা প্রশ্নকর্তা যা কিনতে চাইছেন, আপনাকে তাই-ই বিক্রি করতে হবে। ইন্টারভিউ দেয়ার সময় চেষ্টা করবেন ইন্টারভিউয়ার যেন আপনার সঙ্গে সমানভাবে অংশগ্রহণ করেন সেটা নিশ্চিত করতে। তাতে তার পছন্দ-অপছন্দ, প্রয়োজন সম্পর্কে আপনার একটা ধারণা তৈরি হয়ে যাবে।
এই ফিল্ড সম্পর্কে কি আপনার কোনো ধারণা আছে? (ডু ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া অ্যাবাউট আওয়ার ফিল্ড?)
যদি আপনার সত্যিই স্পষ্ট ধারণা থাকে, তাহলে সরাসরিভাবে তা জানিয়ে দিন। আর না থাকলে খুব ভদ্রভাবে বলুন, আপনি যা জানেন সবটাই অন্যের কাছ থেকে শোনা এবং আপনি বিস্তারিতভাবে এই ফিল্ড সম্বন্ধে জানতে আগ্রহী। তবে এমন যেন না হয় যে, আপনি আদৌ ওই ফিল্ড সম্পর্কে জানেন না, অথচ অতি চালাকি করে বলে দিলেন, ধারণা আছে, তাহলে কিন্তু বিপদে পড়বেন আপনি। কারণ, পরের প্রশ্নটা অবধারিতভাবে হবে, ‘কী জানেন?’ ব্যস, আপনার যাবতীয় জারিজুরি শেষ। তাই মনে রাখুন, অতি চালাকের গলায় দড়ি।
আপনার সবচেয়ে শক্তিশালী এবং দুর্বল দিকগুলো কী? (হোয়াট আর ইওর গ্রেটেস্ট স্ট্রেন্থ অ্যান্ড উইকনেস?)
যে কোনো ইন্টারভিউ দেয়ার আগেই কিন্তু এই প্রশ্নটির উত্তরের জন্য আপনার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সেরে রাখতে হবে। সম্প্রতি আপনি গঠনমূলক কী কী কাজ করছেন, তার একটা লিস্ট করে রাখবেন এবং সময়মতো সেগুলো বলে দিবেন। আগেই বলেছি, প্রথমেই আপনাকে ইন্টারভিউয়ারের মানসিকতা ও চাহিদা সম্পর্কে অবহিত হতে হবে। আর সেটা হয়ে থাকলে এই প্রশ্নটার উত্তরও খুব সহজেই আপনি বলতে পারবেন। আপনার কয়েকটি ‘স্ট্রেন্থ’ বা জোরালো দিকের মধ্যে আসতে পারে ইন্টেলিজেন্স (বুদ্ধিমত্তা), অনেস্টি বা ইন্টগ্রিটি (সততা), করপোরেট কালচার সম্বন্ধে পরিচিত থাকা, সকলের সঙ্গে মেশার দক্ষতা, সেন্স অব হিউমার, গুড কমিউনিকেশন স্কিল, যে কোনো কাজে সিরিয়াসনেস, ডেডিকেশন প্রভৃতি। একটু মাথা খাটালে দেখবে এরকম হাজারটা গুণে আপনি গুণবান। তবে এই সব শব্দগুলোর সঙ্গে আপনি অথবা আপনার অ্যাপিয়ারেন্স আদৌ মিলে যায় কি না, সেটা বুঝে নিয়ে তবেই এসব গুণের কথা বলবেন। কারণ, হয়তো আপনি নিজেকে সত্ বললেন, কিন্তু আপনার সততার কোনো উদাহরণ দিতে পারলেন না। এতে কিন্তু আপনি মিথ্যেবাদী প্রমাণিত হতে পারেন। অতএব ভেবেচিন্তে উত্তর দিন। আবার দুর্বলতার ক্ষেত্রে সেগুলোকেই তুলে ধরুন যা ইন্টারভিউয়ের চাকরির জন্য প্রতিবন্ধক নয়। বেশি ব্যাখ্যায় যাবেন না। কারণ স্ট্রেন্থ বা উইকনেস এমন দুটো শব্দ যে, একজনের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি তার স্ট্রেন্থ, সেটিই অন্য কারও ক্ষেত্রে উইকনেস হয়ে যেতে পারে।
এই কোম্পানিতে কেন কাজ করতে চাইছেন? এর পেছনে কোনো বিশেষ কারণ আছে কি? (হোয়াই ডু ইউ ওয়ান্ট টু ওয়ার্ক ইন আওয়ার কোম্পানি?)
আপনাকে প্রথমেই যেটা করতে হবে সেটা হলো, ওই কোম্পানির কাজ ও রেপুটেশন সম্পর্কে একটা ছোটখাটো রিসার্চ সেরে রাখা।
আপনার নিজের প্রোফাইল সম্পর্কেও আপনাকে আগেভাবে বিস্তারিত তথ্য জোগাড় করে রাখতে হবে। আর আগে থেকেই যদি এসব প্রস্তুতি সেরে রাখেন, তাহলে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটা আপনার কাছে কোনো ব্যাপারই নয়। কোম্পানি সম্বন্ধে জানার জন্য ওই কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদন, করপোরেট নিউজলেটার, বিজ্ঞাপন, কোম্পানিবিষয়ক বিভিন্ন লেখা আগে থেকেই পড়ে রাখা প্রয়োজন।
পাঁচ বছর পরে নিজেকে আপনি কোন জায়গায় দেখতে চান? (হোয়্যার ডু ইউ সি ইওরসেল্ফ ফাইভ ইয়ারস ফ্রম নাও?)
এই প্রশ্নটির অর্থই হলো, ইন্টারভিউয়ার জানতে চাইছেন আপনি আদৌ ওই কোম্পানিতে বেশিদিন কাজ করতে ইচ্ছুক কি না! অতএব বুঝতেই পারছেন, পরিস্থিতি অনুযায়ী আপনাকে উত্তর দিতে হবে। আপনার বলা উচিত যে, আপনি যে প্রোফাইলের জন্য মনোনীত হচ্ছেন, তা মন দিয়ে করবেন। আর ভালোভাবে কাজ করলে সাফল্য আসবেই। তবে ইন্টারভিউয়ারের এমন যেন মনে না হয় যে, আপনার কোনো উচ্চাশা নেই। এছাড়াও আপনি বলতেই পারেন যে, একজন সফল কর্মী হিসেবেই নিজেকে দেখতে চান। এই ‘সফল’ কথাটার কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। তাই এই ধরনের কথা বলেও আপনার উল্টো দিকের মানুষটিকে সন্তুষ্ট করতে পারেন।
সম্প্রতি কোন ভালো বইটি পড়েছেন? (হোয়াট গুড বুকস হ্যাভ ইউ রেড লেটলি?) যে কোনো ধরনের চাকরির ইন্টারভিউয়েই এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে পারেন। আসলে কাজের পাশাপাশি অন্য কোনো বিষয়ে আপনার আগ্রহ আছে কিনা, সেটা জানতেই এমন প্রশ্ন করা। বই পড়ার অভ্যাস থাকলে ভালো, না থাকলেও আপনার পছন্দের অন্য কোনো বিষয়ের কথা জানিয়ে দিন এ সময়।
- সামনে জীবন ডেস্ক



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft