শিরোনাম: |
ফিশারি বদলে দিয়েছে জীবনচিত্র
|
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, কঠোর পরিশ্রম মানুষকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়। তেমনি এক সফল মানুষ মোসাব্বির আল মাসুদ। ১৯৮৪ সালে মাত্র ৩০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে খামার ব্যবসা শুরু করে আজ তিনি বৃহত্তর সিলেটের রোল মডেল। শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইল হাওর সংলগ্ন নোয়াগাঁও গ্রামে তিনি তিল তিল করে আল মাসুদ ফিসারি অ্যান্ড ডেইরি খামার গড়ে তুলেছেন। ৬০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত প্রকল্প এলাকার আমিষ ও প্রোটিনের কিয়দাংশ জোগান দিচ্ছে। প্রকল্পের মাধ্যমে মোসাব্বির আল মাসুদ নিজে যেমনি আর্থিকভাবে স্বাবলম্ভী হয়েছেন তেমনি এলাকার শতাধিক দরিদ্র বেকারের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রকল্পটি আরও বর্ধিতকরণের কাজ চলছে, যা অব্যাহত রয়েছে। সেটি সম্পন্ন হলে প্রকল্পে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
প্রাকৃতির সৌন্দর্যমণ্ডিত হাইল হাওর পাড়ের নোয়াগাঁও গ্রামে অবস্থিত ‘আল মাসুদ ফিসারী অ্যান্ড ডেইরি’-তে মাছ চাষের জন্য রয়েছে ৩৩টি বিশালাকার পুকুর, ১০০টি শঙ্কর প্রজাতির গরুর খামার, ২টি দেশীয় ও ৪টি লাল জাতের মুরগির খামারে রয়েছে ১৪ হাজার মোরগ, রয়েছে বায়োগ্যাস প্লান্ট, সবজির খামার। বৃহত্তর সিলেটে একমাত্র এ প্রকল্পেই পুকুরে হচ্ছে দেশীয় পাবদা মাছের চাষ। এছাড়া দেশীয় মাগুর, গুলাইয়াও চাষ হচ্ছে। পুকুরে মাছের খাদ্য তৈরি হচ্ছে প্রকল্পেই। মোরগের বিষ্টা, গোবর, খৈল, ভূষি, অচোগুড়া, লবন মিশিয়ে প্রকল্পের কর্মচারীরাই মাছের খাবার তৈরি করছেন। এ প্রকল্পে প্রতি বছর গড়ে ৫ কোটি টাকার মাছ বিক্রি হচ্ছে। মুরগির খামারে প্রতিদিন গড়ে ৭ হাজার ডিম হচ্ছে। প্রতিটি ডিমেন বর্তমান বাজার মূল্য ৮ টাকা করে মোট প্রতিদিন ৫৬ হাজার টাকার ডিম বিক্রি হচ্ছে। ১০০টি শঙ্কর প্রজাতির গরু থেকে প্রতিদিন দুধ পাওয়া যায় ১৪০ লিটার। এ দুধ থেকে ছানা, ক্রিম ও ঘি তৈরি করা হচ্ছে। আরও ৩০০টি গরুর সেড তৈরির কাজ চলছে। কয়েকদিনের মধ্যেই আরও ৪০০টি গরুর বৃহত্ খামার গড়ে তোলা হবে। প্রকল্পের পুকুরের চারপাশে রয়েছে সহস্রাধিক তেজপাতা গাছ। রয়েছে আম্রফালি আম, রূপালী আম, পেপে, দেশীয় কুল, বাউকুল, আপেলকুল গাছ। ‘আল মাসুদ ফিসারি অ্যান্ড ডেইরির স্বত্ব্বাধীকারী আলহাজ মোসাব্বির আল মাসুদ জানান, ১৯৮৪ সালে মাত্র ৩০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে তিনি প্রোলট্রি মুরগির খামার গড়ে তুলেন। কঠোর পরিশ্রম, সফল হবার জন্য প্রচণ্ড জেদ তাকে ধীরে ধীরে ইস্পাত লক্ষ্যে পৌঁছতে সাহায্য করেছে। প্রথম দিকে দিনের বেলা খামারের মোরগের পরিচর্চা ও রাতের বেশিরভাগ সময় পাহাড়া তিনি নিজেই দিয়েছেন। যখন কয়েক ব্যাচে সফলতা আসে তখন এক কর্মচারী নিয়োগ দেন। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে খামারের পরিধি। ২০১১ সালে ৩ নং শ্রীমঙ্গল ইউনিয়নের হাইল হাওর পাদদেশে নোয়াগাঁও গ্রামে কিছু জমি ক্রয় করে গড়ে তুলেন ফিসারী। গত পাঁচ বছরে তিনি কঠোর পরিশ্রম ও সততার মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের সফল ফিসারির রোল মডেলে পরিণত হন। তিনি অভিযোগ করেন, তার ডেইরি ফার্মে ১০০টি শঙ্কর প্রজাতির গরুও চিকিত্সা ও পরামর্শের জন্য কয়েকবার উপজেলা ভ্যাটেনারি সার্জনের সঙ্গে দেখা করে তার খামার পরিদর্শনপূর্বক পরামর্শ প্রদানের আবেদন জানালে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে অধ্যাবদি কোন পরামর্শক তার খামারে আসেননি। তবে তিনি খামারের শঙ্কর প্রজাতির গরু ও মুরগের সুচিকিত্সা নিশ্চিত করতে একজন প্রাণী চিকিত্সককে মাসিক বেতন ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছেন। |