শিরোনাম: |
সাপাহারে পুনর্ভবা নদী এখন মরা খাল
|
সাপাহার (নওগাঁ) সংবাদদাতা : নওগাঁর সাপাহার উপজেলায় চৈত্র মাস আসতে না আসতেই সীমান্তবর্তী এককালের খরস্রোতা পুনর্ভবা নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে।
নদীটি ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর ও মালদহ জেলার মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বামন গোলা ও তপন থানার বটতলী এবং লক্ষ্মী নারায়ণ গ্রামের কোল ঘেঁষে বাংলাদেশের সাপাহার উপজেলার পাতাড়ী, হাঁড়িপাল, আদাতলা, কলমুডাঙ্গা ও পোরশা উপজেলার দুয়ারপাল উপজেলা সদর নিতপুরের কোল ঘেঁষে গোমস্তাপুর হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মহানন্দা নদীতে মিলিত হয়েছে। এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান এককালে ১২ মাসই বহমান ছিল এই পুনর্ভবা নদী। বৃটিশ ও পাকিস্তান শাসনামলে এলাকার সব রাস্তাঘাটগুলো অবহেলিত অবস্থায় থাকায় সে সময় এ নদীই ছিল বিভিন্ন শহরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র পথ। নদীর বুক চিরে ছোট বড় হরেক রকম নৌকা দিয়ে মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াত করে থাকত। এমন কি নদীতে বিয়ের বর যাত্রীদের নৌকার বহরও চোখে পড়ত। সেসময় এ নদীতে চলত মালবোঝাই ছোট বড় নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার। নৌকায় করে মানুষ তাদের উত্পাদিত ফসল ধান, গমসহ বিভিন্ন পণ্য বহন করত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রহনপুর হাটে। অনেকেই বিভিন্ন কাজে এ পথে নৌকাযোগে রহনপুরে গিয়ে ট্রেনযোগে রাজশাহী, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে গিয়ে থাকত। সে সময় পাতাড়ীর কাবলীর ঘাটসহ বিভিন্ন ঘাটে ঘাটে নৌকা ভিড়ত। অতীতে এলাকায় কোনো গভীর, অগভীর নলকূপ না থাকায় ঠাঠা বরেন্দ্র এলাকায় এ নদীর পানি সেচ কাজে ব্যবহার করে এলাকার মানুষ শত শত একর জমিতে বিভিন্ন জাতের ফসল উত্পাদন করত। বর্তমানে দেশের শহর বন্দরসহ গ্রামাঞ্চলের প্রায় সর্বত্রই উন্নয়নের ছোঁয়াসহ নদীর উজানে ভারতীয় অংশে ভারত সরকারের বাঁধ নির্মাণের ফলে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় কালের আবর্তনে হারিয়ে গেছে নদীর শাসনব্যবস্থা, নদীও হারিয়ে ফেলেছে তার নাব্যতা। এখন অতি সহজে মানুষ বাস, ট্রাকযোগে স্বল্প সময়ে পৌঁছে যাচ্ছে তাদের গন্তব্যে। সহজেই তারা তাদের বিভিন্ন মালামাল পরিবহন করতে পারছে। এখন নদীপথের প্রয়োজন অনেকটাই ফুরিয়ে যাওয়ার ফলে সীমান্ত এলাকার এই পুনর্ভবা নদীটি হারিয়ে ফেলেছে তার অতীত ইতিহাস। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানির তোড় ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নদীটি তার পুনর্যৌবন ফিরে পেলেও চৈত্র মাস আসতে না আসতেই নদীটি মরা খালে পরিণত হয়ে বুক ভরা বালি নিয়ে শুধুই স্মৃতি হয়ে থাকে। খরা মৌসুমে হঠাত্ কেউ দেখলে মনেই হবে না এটি একটি নদী। বর্তমানে সীমান্ত ঘেঁষা পুনর্ভবা এই নদীটি ড্রেজিং করে নাব্যতাকে ফিরিয়ে আনলে নদীটি ফিরে পেত তার পুনর্যৌবন, সে সঙ্গে কৃষি কাজে ব্যবহার হতো তার পানি। উপকৃত হতো নদীপাড়ের হাজার হাজার লোকজন। বর্তমান সরকার সীমান্তবর্তী এ অঞ্চলের জনসাধারণের কষ্টের কথা চিন্ত করে এই নদীর বুকে কলমুডাঙ্গা ও হাঁপানিয়া ঘাটে দুটি ব্রিজ নির্মাণ করেছে। নদীটির উত্তরে দেশের অভ্যন্তরে উত্পত্তিস্থল উত্তর পাতাড়ী গ্রাম হতে দক্ষিণে প্রায় ২ কিলোমিটার দেশের অভ্যন্তরে নদীর পূর্বপাড়ে বাঁধ নির্মাণের প্রক্রিয়ার কাজ চলছে। এলাকাবাসী নদীটি সংস্কারের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন। |