শিরোনাম: |
নেতৃত্ব কোন্দলে বিপর্যস্ত ঢাকা মহানগর বিএনপি
* পদ প্রত্যাশি মৌসুমী নেতারা সক্রিয়
* আবারও ত্যাগীরা বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা
|
এম.উমর ফারুক : বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকান্ডের কেন্দ্র বিন্দু হচ্ছে ঢাকা মহানগর বিএনপি। রাজনৈতিক কর্মসূচি কিংবা আন্দোলনে এই কমিটিকেই নেতৃত্বভার তুলে নিতে হয়। কিন্তু ভুল নেতৃত্ব আর কোন্দলে বিপর্যস্ত ঢাকা মহানগর বিএনপি সবকিছুতেই চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। দির্ঘদিন ধরে সাংগঠনিক কার্যক্রম না থাকায় এখন এর অস্তিত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে নেতাকর্মীদের। বিবৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে দলটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন এই সাংগঠনিক কাঠামোটি। তবে দল পূনর্গঠনের অংশ হিসেবে এই কমিটিকেও ঢেলে সাজানো হবে এমন সিদ্ধান্তে নেতাকর্মীরা অনেকটা আশান্বিত হয়েছিলেন। তবে নেতৃত্ব বাছাইয়ে যাদের নাম আলোচনায় আসছে তাতে চরম হতাশ হয়ে পড়ছেন মহানগরের নেতাকর্মীরা।
সুত্রমতে, সরকারবিরোধী বিগত দুইটি আন্দোলনে সারাদেশে নেতাকর্মীরা কিছুটা সক্রিয় ভুমিকা পালন করলেও ঢাকা মহানগর নিরুত্তাপ ছিল। এর মধ্যে সাদেক হোসেন খোকা-আব্দুস সালামের নেতৃত্বাধীন কমিটিকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য একটি অংশ ছিল তত্পর। দলের ওই অংশটির প্রতিবন্ধকতায় ওই নেতৃত্ব অনেকটা ব্যর্থ হলেও পরবর্তি মির্জা আব্বাস-হাবিব উন নবি খান সোহেলের কমিটি ছিল অন্ধকারে। মির্জা আব্বাসের প্রকাশ্য বিরোধীতার কারনে সোহেল নিজ উদ্যোগে মহানগর বিএনপিকে রাজপথে নিয়ে আসতে পারেননি বলেও অভিযোগ রয়েছে নেতাকর্মীদের। মহানগর বিএনপির এমন চরম ব্যর্থতার কারনে সারাদেশের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ।বিএনপির ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে এর বহিপ্রকাশও করেছেন তারা। দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারকে রহমানও এই কমিটির ওপর চুড়ান্ত বিরক্ত বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, নেতাকর্মীরা দলকে শক্তিশালী করার জন্য ঢাকা মহানগর বিএনপিকে ঢেলে সাজানোর দাবি জানিয়ে আসছে দির্ঘদিন ধরে। এর অংশ হিসেবে খুব শীর্ঘ্রই এই সংগঠনের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে দলের নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, মহানগর বিএনপিকে দুই ভাগে বিভক্ত করে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। আর দলের নতুন কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু করার পর থেকেই বিভিন্ন মৌসুমী নেতা পদ পদবী প্রত্যাশায় সরব হয়ে উঠেছেন বলেও জানা গেছে। তাদের লবিং-তদ্বীর আর মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের কারনে কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন সংগঠনটির নিবেদিত নেতৃবৃন্দ। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তরে হঠাত্ করেই আবির্ভূত হয়েছেন ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কমিশনার আহসানউল্লাহ হাসান। মহানগরের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন. বিগত আন্দোলনের অনেক আগে থেকেই আহসানউল্লাহ হাসান পরিবারসহ মালয়েশিয়া স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছেন। সেখানে তিনি পুরোদুস্তর ব্যাবসায়ী। আর দির্ঘদিন ধরে প্রবাস জীবনযাপন করার কারনে তার নিজ এলাকাতেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন তিনি। এ কারনে তার নিয়ন্ত্রিত নেতাকর্মীরা হতাশগ্রস্ত হয়ে এক বছর আগে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। কিন্তু শুধুমাত্র টাকার প্রভাবে পদ-পদবী বাগিয়ে নিতে তিনি এখন রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে সূত্র জানায়। এমনকি তিনি মহানগর উত্তরের সভাপতি অথবা সাধারন সম্পাদক পদের জন্য টাকার মিশন নিয়ে দলের একটি চিহ্নিত সিন্ডিকেটকে প্রভাবিত করেছেন বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে। সূত্রটি আরো জানায়, মামলা জটিলতার কারনে মালয়েশিয়া প্রবাসী আরেক কমিশনার এম এ কাইয়ুম এখন নেতাকর্মী বিচ্ছিন্ন আর বিতর্কিত হাসান কমিশনারের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠেছেন। একই দেশে অবস্থান করার কারনে অনেকটা সহমর্মিতায় কাইয়ুম কমিশনার হাসানের জন্য তদ্বীর করছেন বলেও জানা গেছে। কাইয়ুম সভাপতি আর হাসানকে সাধারন সম্পাদক করে ঢাকা মহানগর উত্তরের কমিটি গঠনের জন্য দল পূনর্গঠনের সাথে সম্পৃক্ত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যন মোহাম্মদ শাজাহান এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলয়টি কাজ করছেন বলেও নেতাকর্মীদের অভিযোগ। নেতাকর্মীরা জানান, তাদেরকে দিয়ে কমিটি গঠন করা হলে সেটা হবে ভাইবার কমিটি। কারন তারা উভয়ে মালয়েশিয়া প্রবাসী হওয়ার কারনে দেশের নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগের একমাত্র উপায় ভাইবার। নেতাকর্মীরা জানান, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি কমিটি গঠনে অবিভক্ত মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুস সালামকে সভাপতি এবং সাবেক কমিশনার আনোয়ারুজ্জামন আনোয়ার, বজলুল বাসিত আঞ্জু সহ ত্যাগী আর জনপ্রিয় নেতাদের প্রাধান্য দেয়া হলে এই কমিটি পূনজ্জীবিত হয়ে উঠবে। এর মধ্যে আব্দুস সালাম দির্ঘদিন ধরে ঢাকা মহানগর বিএনপির সাথে সম্পৃক্ত থাকার কারনে ওয়ার্ড-ইউনিট কমিটির নেতাকর্মীদের পর্যন্ত তিনি চিনেন ও জানেন। তার এই অভিজ্ঞতা আর বিগত দিনে আন্দোলনে সম্পৃক্ত থেকে নির্যাতনের পরও দৃশ্যমান অবস্থায় নেতাকর্মীদের পাশে থেকে নিজের যোগ্যতার প্রমান রেখেছেন আনোয়ার কমিশনার। তাদের মতো আরো অনেক নেতৃবৃন্দ নিজেদের অবস্থান থেকে রাজনৈতিক কর্মসূচি সফল করতে সচেষ্ট ছিলেন এমন নেতাদেরকে দিয়ে কমিটি গঠনের জন্য দলের নীতিনির্ধারকবৃন্দ একাট্টা হলেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন গুলশান কার্যালয়ের প্রভাবসালী সিন্ডিকেট সহ দল পূনর্গঠনের সাথে জড়িত নেতৃবৃন্দ। এদিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিন বিএনপির কমিটিতে সভাপতি হিসেবে দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবি খান সোহেল অনেকটা নিশ্চিত। তিনি বর্তমান কমিটিরও সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন। কিন্তু এই কমিটির আহ্বায়ক এবং দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের অসহযোগিতার কারনে অনেকটা কোনঠাসা অবস্থায় ছিলেন তিনি। সাধারন সম্পাদক হিসেবে সাবেক কমিশনার হারুন উর রশিদ, নবীউল্লাহ নবি, ইউনুস মৃধা এবং ছাত্রদলের সাবেক সাধারন সম্পাদক হাবিব উর রশিদ হাবীবের নাম শোনা যাচ্ছে। সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারের নাম জোরালোভাবে উচ্চারিত হচ্ছে। পুরানো ঢাকার রাজনীতিকে চাঙ্গা রাখার জন্য ইসহাক সরকারের মতো উদিয়মান নেতৃত্বকেই বাছাই করা হচ্ছে বলে সূত্র জানায়। এছাড়াও যাত্রাবাড়ি এলাকার সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন আহমেদের পুত্র তানভীর আহমেদ রবীন রয়েছেন। তিনিও দির্ঘদিন ধরে মহানগর বিএনপিতে সক্রিয় রাজনীতি করছেন। মহানগর বিএনপির বিষয়ে ইসহাক সরকার বলেন, যে কোন আন্দোলনে পুরানো ঢাকাকে সম্পৃক্ত করতে না পারলে তা বিফলে যায়। এটা সত্য। তবে যেহেতু আমি ছাত্রদলের বর্তমান কমিটিতে রয়েছি সেহেতু আগামীতে আমি কমিটিতে সভাপতি পদের প্রত্যাশী। তবে সিনিয়র হওয়ার কারনে ওই পদে সম্ভব না হলে মহানগর বিএনপিতে কাজ করতে চাই। এক্ষেত্রে দলের অভিভাবক, আমাদের আস্থার প্রতীক খালেদা জিয়া আমাকে যেখানে চাইবেন আমি সেখানে কাজ করবো। মহানগর বিএনপি পুনর্গঠনের বিষয়ে সাবেক কমিশনার আনোয়ারুজ্জামন আনোয়ার বলেন, ঢাকা মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি গঠন প্রক্রিয়া অনেক আগে শুরু হয়েছে। ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি দলের হূদপিন্ড। সুতরাং দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তাদের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার সাথেই নতুন নেতৃত্ব বাছাই করবেন। এক্ষেত্রে কারো কোন সন্দেহ নাই। তবে বিগত দিনের আন্দোলনে যারা নির্যাতিত হয়েছেন তাদেরকে সামনে নিয়ে আসলে আগামীতে অন্যরাও উত্সাহিত হবেন বলে তিনি মনে করেন। |