শিরোনাম: |
চৌহালীতে ডিজিটাল কৃষি পদ্ধতিতে বৈপ্লবিক সাফল্য
|
চৌহালী (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা : সিরাজগঞ্জের যমুনার চরাঞ্চল অধ্যুষিত চৌহালী উপজেলায় কৃষিতে গত এক বছরে বৈপ্লবিক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। কৃষকদের মধ্যে ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবহার, সরকারি সব সুযোগ সুবিধা শতভাগ নিশ্চিতকরণ ও নিয়মিত তদারকির কারণে এখন চৌহালী উপজেলা কৃষিতে মডেল।
জানা যায়, যমুনার বুকে জেগে উঠা বহু চর নিয়ে এ উপজেলা গঠিত। এখানে বর্ষা মৌসুমে নৌকা আর শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হাঁটা রাস্তাই একমাত্র ভরসা। যমুনার ভাঙনে অধিকাংশ পাকা সড়ক বিলীনের পর যেগুলো রয়েছে সেগুলোও আবার ব্যবহার অনুপযোগী। কৃষিকাজ এ অঞ্চলের মানুষের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হলেও স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে এ অঞ্চলে কৃষিতে তেমন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। যমুনা বিধ্বস্ত এ উপজেলায় পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা এখানে বেশি সময় থাকতে চান না। যোগদানের পরই জোর তদবিরের মাধ্যমে দ্রুত চলে যান অন্যত্র। যার ফলে উপজেলার সব স্থানে সেবাদানের সুযোগ হয় না। তবে গত বছর থেকে এ চিত্র পাল্টে গেছে। কৃষি অফিস থেকে শুরু করে কৃষকের মাঠ সব জায়গায় তার বৈপ্লবিক সাফল্য লক্ষ্য করা যায়। চৌহালী ডিগ্রি কলেজের অফিসটিকে আধুনিকিকরণ করা হয়েছে। ভাঙ্গা টেবিল-চেয়ার বদলে দিয়ে অফিসে একটি সুন্দর ডিজিটাল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। বড় পর্দার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা, অফিসে কর্মরত স্টাফদের যথাসময়ে উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ ও ব্লক পর্যায়ে কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের (এসএএও) কৃষকের মাঠে নিয়মিত করার ব্যাপারে উত্সাহ প্রদান ইত্যাদি বিষয়ে চৌহালী উপজেলা কৃষি অফিসার শাহাদত্ হোসাইন সিদ্দিকী নিজে তদারকি করছেন। প্রায় শতভাগ এসএএও কর্মস্থলে অবস্থান করে কৃষকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এখন সবাই সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে উপজেলা কৃষি অফিসার উদ্ভাবিত কৃষকের ডিজিটাল ঠিকানা মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে সেবা দিচ্ছেন। ডিজিটাল কৃষিসেবা চালু হওয়ায় সেবা দাতা ও গ্রহীতার মাঝে ব্যাপক আগ্রহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে ফসলের মাঠের চিত্রও পাল্টে গেছে। বন্যার কারণে খরিফ-২ কৃষি মৌসুমে উপজেলায় তেমন কোনো ফসল আবাদ হয় না। পুরো উপজেলা জুড়ে বন্যার পানি লক্ষ্য করা যায়। বিলম্বজনিত বন্যা ও বৃষ্টির কারণে পরবর্তী মৌসুমের ফসল চাষেও দেরি হয়। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য বন্যা শেষে ব্যক্তিগত অর্থায়নে প্রায় আড়াই হাজার কৃষকের মাঝে লাউ, শিমসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি বীজ বিতরণ করেন। প্রায় প্রতিটি কৃষকের বাড়িতে মাটির পাত্রে, ভাঙ্গা চাড়ি, ভাঙ্গা বালতি ইত্যাদিতে লাউ-শিমের বীজ বপন করেন। বৃষ্টির সময় কৃষক পাত্রটি ঘরে উঠিয়ে রাখেন এবং অন্য সময় বাহিরে রাখেন। এ কারণে এবছর চরাঞ্চলের কৃষকরা প্রায় কোটি টাকার শীতকালীন সবজি বিক্রি করেছেন। গত বছরে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কৃষকের মাঝে পুনর্বাসন ও প্রণদনা কর্মসূচির আওতায় মাষকলাই, সরিষা, গম, চিনাবাদাম, বিটি বেগুন, তিল ও মুগের বীজ বিতরণ করা হয়েছে। পূর্বে যেখানে ২০ থেকে ২৫টি প্রদর্শনী স্থাপিত হতো, সেখানে গত বছর প্রায় আড়াইশ প্রদর্শনী স্থাপন করা হয়েছে। ফলে উপজেলায় কৃষকের মাঝে উন্নত প্রযুক্তি বাস্তবায়নে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। চলতি রবি মৌসুমে প্রায় ৭৪ হেক্টর জমিতে আদর্শ বীজতলা করা হয়েছে যেখানে গত বছর ১২ হেক্টর ছিল। প্রায় ১৬০ জন কৃষক ২০ বিঘা জমিতে পলিথিন বীজতলা করেছেন যেখানে গত বছর মাত্র ৪ বিঘা ছিল। চলতি রবি মৌসুমে আবাদকৃত ২২৫০ হেক্টর সরিষার মধ্যে ৫০০ হেক্টরেও অধিক জমিতে বারি সরিষা-১৪ চাষ করা হয়েছে, গত বছর যার পরিমাণ ছিল মাত্র ২০০ হেক্টর। চলতি রবি মৌসুমে বোরো ধানে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাত্রা উল্লেখ করার মতো। এ বছর প্রায় ৭০ থেকে ৮০% জমিতে লাইনে ধান রোপণ করা হয়েছে যেখানে গত বছর মাত্র ৪৩% ছিল। মৌসুমের শুরুতেই তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নেয়ায় এ সাফল্য এসেছে। এছাড়া মাইকিং ও হাটে-বাজারে ঢোল পিটিয়ে, গ্রুপ মিটিং করেছেন, এসএএও ও ন্যাশনাল সার্ভিসের জনবলকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়েছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কৃষকের সঙ্গে থেকে কাজ করার কারণে এই সফলতা এসেছে। উপজেলায় বিনা চাষে রসুন, জিংক সমৃদ্ধ ধানের জাত ও ভুট্টার আবাদের প্রচলন ঘটাতে শুরু হয়েছে। মধ্যজোতপাড়া গ্রামে কেঁচো সার উত্পাদনে বিষয়টি নজর কাড়ার মতো। |