শিরোনাম: |
শেষ জানা যায়নি
|
তানজীনা ইয়াসমিন : জগতে যত অস্বস্তিকর গন্ধ আছে তার মধ্যে ফিনাইল এক অদ্ভুত টাইপ। একে দুর্গন্ধ বলা যায় না, আবার সুগন্ধও না।
কেমন গা গুলিয়ে আসা মন খারাপ করে দেয়া ঘ্রাণ। যে ঘ্রাণ নাকে এলেই মস্তিষ্কের নিউরন খবর জানায়, সে এখন দাঁড়িয়ে আছে ঢাকা শহরের কোনো সরকারি হাসপাতালে। অদূরে কোনো পরিচ্ছন্নতাকর্মী মোটা দড়ির ওয়াইপার টেনে মেঝে মুছে যাচ্ছে। হাসপাতালের বাইরে ডানে বামে সস্তা পণ্যের হাট আর রিকশা, সিএনজির মহাসমাবেশ। আর হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে এগোলেই নার্স, ওয়ার্ড বয়, আয়া সব ভাবলেশহীনভাবে হেঁটে চলে যাচ্ছে। সারাক্ষণ এই মরলো, এই বাঁচলোর মধ্যে থাকতে থাকতে জম্বি সবাই। সবসময় রোগি আসছে। কাঁচিগেট আটকে গেট কিপার ‘ভিজিটিং আওয়ার হয় নাই’ বলে কাকে ঢোকাবে কাকে ঢোকাবে না- এই বিষয়ক সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেখাচ্ছে। আর কাঁচিগেট গলে কোনোমতে ঢুকতে পারলে রোগীর অ্যাটেনডেন্সদের যার যার রোগীর কাছে গিয়ে মুখ চোখ করে বিরস বদনে বসে থাকা। এখানে বসে থেকে তন্ময়ের একমাত্র পজিটিভ আত্মোপলব্ধি হলো, ভাগ্যিস সে মেডিকেলে ভর্তি হয়নি। নিজের সব কিছু নিয়েই তার অসন্তোষ, শুধু এই একটা সিদ্ধান্ত যে ঠিক ছিল তা স্টেথেস্কোপ গলায় ঝোলানো ভিজিটিং ডাক্তাররা যখন আসেন তখনই তার তীব্রভাবে মনে হয়। তার প্রাণের বন্ধু রোমেল যখন রংপুর মেডিকেলে চলে গেল, বাবার সে কি হুঙ্কার। কেন তন্ময় রোমেলের সঙ্গে একই সঙ্গে পড়ে, ওঠাবসা করে মেডিকেলে লিখিত পরীক্ষাতেও চান্স পেল না? কেন সে রোমেলের পা-ধোয়া পানি খাবে না- এই মর্মে কারণ দর্শাও! বাংলা সিনেমার যত ডায়লগ আছে সব একদিনে রিপিট হয়ে গিয়েছিল বাসায়! ‘ভেবেছিলাম তুই আমার স্বপ্ন পূরণ করবি, দুঃখ ঘোঁচাবি- এই করবি- ওই করবি! আর তুই কি-না!’ বাবার তাকে নিয়ে এত এত স্বপ্ন ছিল ভাগ্যিস সে আগে টের পায়নি। না হলে স্বপ্নের ভারে সে টাইটানিকের মতো ডুবেই যেত, পড়াশোনা লাটে উঠতো। ‘অন্তত রিটেনে তো চান্স পাইতি! তাইলেই তো অমুক চাচাকে না হইলে তমুক ভাইকে বলে ভাইভাতে সুন্দর ম্যানেজ করতে পারতাম।’ তার বাবার যে এমন বিগশট পরিচিত লোকজন আছে তা তাদের কার্টুন মার্কা তালিপট্টি জীবনে কোনোদিন টের পায়নি কেন? এটা নিয়ে বিরাট আফসোস মনে হয়েছিল। যাক তাকে ডাক্তার বানানোর বাবার ইচ্ছাটা সে বরাবরই জানতো। স্কুলে ‘জীবনের লক্ষ্য’ রচনায় ডাক্তার ছাড়া কিছুই লেখার সাহস হয়নি তার। লিখলে তার ১ ফিট দৈর্ঘ্যের হলুদ কাঠের একমাত্র রুলার তার পিঠেই ভাঙা হতো। বাবা তো আর স্টিলের রুলার কিনে দিতেন না। আর রোমেল যতই তাকে বাঁচাতে চাক, হায়ার ম্যাথ ক্লাসে নবারুন স্যার স্কেল আনেনি অজুহাতে পিটিয়ে তামা তামা করার সুবর্ণ সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া করতেন না। মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার কোচিংয়ের সময়ের সে বুঝে গেছে তাকে দিয়ে এ হবে না। তার চেয়ে সে ঢাকা ইউনিভার্সিটির জন্য ফাইট দেবে। ভালো বিষয় পেয়ে গেলে ভালো মাইনের টিউশনিও পাবে, বিসিএস বা ব্যাংকিংয়েও তার হয়ে যাবে। বাবাকে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করে বেহুদা গালি খাবার রিস্ক নেয়নি। কিন্তু নিজের সিদ্ধান্ত নিতে পারার এবং তাতে অনড় থাকার দৃঢ়তা তার ছিল। তার সামনে মাস্টার্স ফাইনাল, বায়ো-কেমিস্ট্রিতে। বিসিএসে রিটেন ভালো হয়েছে, ব্যাংকিংয়ের সিনিয়র অফিসারের এক্সামটাও। এখন দেখার বিষয়- বাবার সেই বিগবস আত্মীয়দের কাউকে বলে বিসিএসের ভাইভা বোর্ডের পুলসেরাত পার করা যায় কি-না। আজ তার টিউশনির জায়গায় রাত হয়ে গেছে। আজ বেতন দেবার কথা ছিল। বরাবরের মতোই কিছুদিন দেরি করবেন বলতে আসলে তন্ময়ের হতাশার রিভিশন ছাড়া আর নতুন কিছু হয়নি। কিন্তু মা এসে বেতনের কথা না বলে যখন ছাত্রের পরীক্ষা আছে বলে যেন একটু বেশি করে পড়িয়ে যাওয়ার আবদার করলেন, তখন আশার আলো জ্বলে উঠেছিল যে এবার সময়মতো বেতনটা দেবেন বলে হয়তো একটু বাড়তি উসুল করতে চাইছেন। কিন্তু পড়া শেষে রাত ১০টায় মা এসে বলে গেলেন, ‘আচ্ছা, আজকে আর লাগবে না।’ যেন বেতন বলে কোনো বিষয়ই কোনোদিন ছিল না! এত রাতে হলের ডাইনিং বন্ধ হয়ে যাবে। মেডিকেলে পৌঁছে দ্রুত পা চালিয়ে জেনারেল ওয়ার্ডে বাবার বেডের কাছাকাছি পৌঁছে দেখে বাবা রাতের খাবার খেয়ে ফেলেছেন। অপরেশনের পর থেকে বাবা তেমন খেতে পারছেন না। তাই তন্ময় বাবা খাবার পর বাকিটুকু খেয়ে নেয়। আজ সেটাও ভাগ্যে নেই। তার খুশি হওয়া উচিত যে বাবা আজ সবটা ভাত খাবার মতো শারীরিক সামর্থ্য বা রুচি ফিরে পেয়েছেন, কিন্তু তার নিজের নাড়িভুড়ি জ্বলে যাচ্ছে। মানুষ নিজের চেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন কারো জন্য হয় কি-না এসব সময়েই বোধহয় একহাত পরীক্ষা হয়ে যায়। এসব মুহূর্তে স্রষ্টার ঈমানের পরীক্ষা তার কাছে অত্যন্ত নির্মম মনে হয়। স্বামী বিবেকানন্দের লাইনটা খুব নিজের মনে হয়, ‘যে ভগবান এখানে আমাকে অন্ন দিতে পারেন না তিনি যে আমাকে স্বর্গে অনন্ত সুখে রাখবেন- ইহা আমি বিশ্বাস করি না।’ বাবা ঘুমাচ্ছেন। পকেটে মাত্র ১০ টাকা। তন্ময় আবার বের হলো। সকালের বাস ভাড়া বাঁচিয়ে কলা-রুটি খেয়ে আপাতত রাতটা পার করতে হবে। সকালে কারো কাছ থেকে ধার করে বেতন পাওয়া পর্যন্ত চলতে হবে। কিন্তু ভদ্রমহিলা কখনোই নির্দিষ্ট দিন বলেন না, যে অমুক দিন দেব বা দুইদিন পরে পাবেন। সবসময়ই প্রফেশনাল বিষণ্ন মুখে ‘একটু দেরি হচ্ছে’! এই ‘একটু’র সংজ্ঞা কী? কেন অবস্থাপন্ন ঘরের মানুষরাও তাদের ওপর নির্ভর করে আছে এমন দুর্বল কাউকে খামাখা ভুগিয়ে বিকৃত সুখ পায়? পাউরুটি-কলার মতো বিস্বাদ খাবারও ভালো লাগছে। দ্রুত খেতে গিয়ে গলা আটকে গেল, পানির জগটা টেনে ঢকঢক করে ঢালতে গিয়ে সাইড টেবিলটায় রাখা ওষুধগুলো ছড়িয়ে গেল। তুলতে গিয়ে নজরে এলো মেঝেতে পাশের বেডের বুড়া চাচা কফ ফেলে রেখেছেন। ঘৃণায় গা গুলিয়ে গেল তন্ময়ের। তাকে রাতে এখানেই একটা চাদর পেতে শুতে হয়। সুইপার এত রাতে মেঝে পরিষ্কার করবে না। এমনিই বিড়াল, তেলাপোকার আনাগোনা আছেই। - কিরে কখন আসছিস? এত রাত করিস! বাবার ঘুম ভেঙে গেছে। - ছাত্রের পরীক্ষা, বেশি সময় দিতে হয়েছে। তন্ময় বাবার দিকে না ফিরেই নিরাসক্ত জবাব দিল। - ও। বেতন দিছে আজকে? পাউরুটিও এখন বিস্বাদ লাগছে। জবাব দিতে ভালো লাগছে না। বাবা কিছুক্ষণ জবাবের অপেক্ষায় থেকে ফের বলল। - আজকে ডাক্তার বলছে দ্রুত ডিসচার্জ দিয়ে দেবে। বেড লাগবে। আইসিইউর রোগীদের শিফট করতে হবে ওয়ার্ডে। বেডের ক্রাইসিস। আর আমার এখন আর এখানে থেকে লাভ নাই। বাড়ি গিয়ে বিশ্রাম নিতে বলছে। তন্ময় আবারও নিশ্চুপ। কী জবাব হতে পারে? ডিসচার্জ তো আর টাকা ছাড়া দেবে না। আল্লাহ মালুম কত লম্বা বিল ধরিয়ে দেবে। বাবা টাকা যে জোগাড় রেখেছিলেন, তা দিয়ে হবার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ। হার্টে রিং পড়ানো হয়েছে যা আগে ধারণা করা যায়নি। - কিছু বলিস না কেন? এই রাতে পাউরুটি খাচ্ছিস! ছাত্রের বাসায় খাওয়া দেয় না? তন্ময়ের হাসি পেল। - দেয়। রঙ চা, নোনতা বিস্কুট। পাপা বিস্কুট, ২ টাকার কয়েনের সমান, গুণে গুণে ৭টা। লাকি সেভেন! এতে মনে হয় ছেলের রেজাল্ট ভালো হবে! - এত রাতে চারটা ভাত না খাওয়ায় ছাড়তে পারলো? - খুব ভালো পারলো! আমি কি মেহমান নাকি? ছাত্র পড়ানোর বেতন দেয় না? - আরে এইটা একটা কথা! আমাদের গ্রামের ফকিরের বাসায় গেলেও তো এক খাবলা গুড়-মুড়ি খাইতে দেয়। - এইজন্যই তো সে ফকির, আর এরা বড়লোক। বাবা ঘুমাও তো তুমি। এসব অর্থহীন কথা বলে কোনো ফায়দা নাই।- টাকার কি উপায় হবে ভাবতেছি। যা আনছি তাতে তো মনে হয় হবে না। - না হলে বলব যে, আমাদের কাছে টাকা নাই, বাপ-ছেলেকে বাইন্ধে রাইখে দেন। ব্যাস। হয় এখানে রেখে দেবে, নয় থানায়। থাকা-খাওয়ার চিন্তা নাই। - তোর কি মাথা খারাপ হইছে নাকি? থানায় থাকব। - এমনি বললাম। ঘুমাও ঘুমাও, আর কোন কথা না। তন্ময়ের আবার চোখ গেল মেঝের দিকে। ওয়াক থু! রিপনের কাছে কিছু টাকা ধার অন্তত পাওয়া গেছে। বেচারার নিজেরও টিউশনির বেতন, সেটাই দিল। হাসপাতালে দ্রুত ফিরতে হবে আজকে। বাবার জন্য কোনোদিন ফলও নেয়া হয় না। বেচারা অপারেশনের রোগী। বেডের কাছাকাছি থমকে গেল। ধোপদুরস্ত তসরের পাঞ্জাবি পড়া বয়স্ক কেউ বসে আছেন বাবার বেডে। কাছে গিয়ে টের পেল ভদ্রলোক খুবই সম্ভ্রান্ত কেউ। গোল্ডেন রিমের চশমা, আপাদমস্তক আভিজাত্যের ছাপ। পোশাকের গুণে নয়, এই বুড়ো মানুষটাকে লুঙ্গি পড়িয়ে দিলেও তার আভিজাত্য চাপা পড়বে না। - আরে দেখ এইটা কে আসছে? আমার কলেজ জীবনের বন্ধু! বাবার চোখেমুখে শিশুর আনন্দ। ছেলেবেলার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলে সবাই ছেলেবেলায় ফিরে যায়। ভদ্রলোক অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব। এক আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। বাবাকে দেখেই চিনতে পেরেছেন। খুব আন্তরিকভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব জিজ্ঞেস করলেন। বাবা কিছু লুকাতে চাচ্ছিলেন। বাবা বরাবর প্রথম সারির ছাত্র ছিলেন। আজ বাবা কোথায় আর তার বন্ধুরা সব কোথায়! দুঃখের গল্প করা যায়। ‘আমার কেউ নেই, কেউ বোঝে না’ টাইপ দুঃখ বিলাসিতা করে মানুষের ভালোবাসা নিংড়াতেও ভালো লাগে। কিন্তু ব্যর্থতার গল্প করতে কারোই ভালো লাগে না। তন্ময় সরে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। করুণা নিতে ভালো লাগছে না। কিছুক্ষণ পর কাঁধে কারো হাত টের পেল। তিনি এসে দাঁড়িয়েছেন। - তোমার বিসিএসের ভাইভার ডেট পড়লে আমাকে জানাবে। আর না হলেও অন্য কোথাও ব্যবস্থা একটা করতেই পারবো। আমার ফোন নম্বর রাখো। অবশ্যই জানাবে। আর হ্যাঁ, হাসপাতালের বিলের টাকার কোন সমস্যা নাই তো? তন্ময়ের খুব খারাপ লাগছে। বাংলাদেশে অবসর নেবার পর কেউই আর কিছু থাকে না। হাতি শুলেও বিড়ালের চেয়ে উঁচু হয়, কিন্তু মানুষ তার পজিশনে না থাকলে কাদায় পড়া হাতির মতো। এই মানুষটাকে ভাইভার জন্য বা চাকরির জন্য বলা মানে তাকে এই বোধটাই আরেকবার জানান দেয়া। যা নিশ্চয়ই তিনি ইতোমধ্যে কয়েকবার টের পেয়েছেন। আর মাত্র ঘণ্টাখানেকের পরিচয়ে অর্থনৈতিক সাহায্যই বা কীভাবে নেয়া যায়? - চাচা লাগবে না। নিজেরা চেষ্টা করে দেখি একবার, না পারলে তো আপনি আছেনই। আর টাকার জোগার আছে। জানাবো চাচা কিছু লাগলে। দোয়া করবেন। মানুষটি আন্তরিকভাবেই মায়া দেখিয়েছেন, জানতে চেয়েছেন। আজকের দিনে এটা কে করে? তন্ময়ের মিথ্যার উদ্দেশ্য ভালো মানুষটাকে সমূহ গ্লানি থেকে মুক্তি দেয়া। - আচ্ছা, আমি তো খালি হাতে দেখে গেলাম, আবার আসবো। কবে ডিসচার্জ হচ্ছে জানাবে। আর এই টাকাটা রাখো, কিছু ফল, হরলিক্স কিনে এনো। তিনি বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। একদিন হয়তো সেও সচিব হবে, কেমন লাগবে তখন তাকে দেখতে? অবশ্যই এমন অভিজাত নয়। তার চেহারা আর ১০টা বাঙালির মত তামাটে, বিশেষত্বহীন, দ্রাবিড় চেহারা। তার লেবাসে হয়তো কিছু আপগ্রেডেশন হবে, তবুও। কেমন লাগবে তাকে আমলা হলে? পকেটে সামান্য ধারের টাকা, মাথায় বিপুল টাকার টেনশন, আর তার চেয়েও তুমুল অনিশ্চিত ভবিষ্যতের টেনশন মাথায় নিয়ে এইসব আকাশকুসুম দিবাস্বপ্ন দেখতে তার মনটা বেশ ফুড়ফুড়েই হয়ে আসে। গল্পের শেষটা কেমন হতে পারে? পাঠক মনই বেছে নিক- তন্ময় পরদিন টিউশনির টাকাটা পেয়ে গেল। আর বাবার বন্দোবস্ত করা টাকা মিলিয়ে হাসপাতালের বিল মিটে গেল। বাবাকে গ্রামের বাড়ি পৌঁছে দিয়ে ফিরে এসে কিছুদিন পর বিসিএস ভাইভা, তন্ময় উতরে গেল। অতঃপর তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকলো। সংসারে সুখ-শান্তি ফিরে এলো, সব দুঃখ গেল ঘুঁচে। অথবা, বাবার বিল আটকে গেল টাকার অভাবে। টিউশনির টাকাও পাওয়া যায়নি। অবসরপ্রাপ্ত সচিব সাহেবের হাতেগোনা টাকা থেকেই সাহায্য নিতে হলো, কারণ ঢাকায় তাদের আর তেমন কেউই নেই। বিসিএস ভাইভাতে কাউকে বলেনি তন্ময়, নিজেও উতরাতে পারেনি। মাস্টার্সের রেজাল্ট বেরিয়ে গেছে, কিন্তু চাকরির দেখা নেই। তাই হলও ছাড়তে পারছে না। নতুন ছেলেগুলোর হলের গেস্টরুম, ছাদে থাকা দেখে যে অপরাধবোধ হয় তাও ক্ষুধার কাছে খুব ভোঁতা অনুভূতি আজকাল। দিন-রাত টিউশনি, পেপার দেখা, চাকরির প্রস্তুতি। একটা কোথাও ঢুকে গেলে যতদিন বয়স আছে বিসিএস দিয়েই যাবে। একদিন সে সচিব হবে, গোল্ডেন রিমের চশমা আর তসরেরর পাঞ্জাবি পরবে। তখন নিশ্চয়ই তার চেহারায় কিছু আভিজাত্য আসবে। আসবে না? |