শিরোনাম: |
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ই-ভোটিং ব্যবস্থা চালু করতে চান প্রধানমন্ত্রী
|
বর্তমান প্রতিবেদক : সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বর্তমানে বিরাজমান সব বিধি-বিধানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ই-ভোটিং ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশন গঠনে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্টদের এখন থেকেই কাজ শুরু করার নির্দেশও দেন তিনি।
গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সংরক্ষিত আসনের সদস্য নূর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জনমানুষের ভোটাধিকার অধিকতর সুনিশ্চিত করার স্বার্থে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই ‘ই-ভোটিং’ এর প্রবর্তন করার পরিকল্পনাও বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে বলে মত দেন প্রধানমন্ত্রী। নির্বাচন কমিশন গঠন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেন। সংবিধানের আলোকে রাষ্ট্রপতি যেমন উপযুক্ত বিবেচনা করেন, সেই প্রক্রিয়ায় তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ সম্পন্ন করেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান সাংবিধানিক পদের অধিকারীদের সমন্বয়ে গঠিত সার্চ কমিটির মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনার নিয়োগ প্রথা চালু করেন। এবারও বাছাই কমিটির মতামত ও সুপারিশের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার নিজ প্রজ্ঞায়, স্বীয় বিবেচনায় ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করেছেন। রাষ্ট্রপতির সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সুগভীর প্রজ্ঞা ও সুবিবেচনার প্রতি আমাদের পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। ইসি গঠনে আইন করার বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই পরবর্তীতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের লক্ষ্যে একটি উপযুক্ত আইন প্রণয়ন করা হোক। সংবিধানের নির্দেশনার আলোকে এখন থেকেই সেই উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনারদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ নতুন ইসি (গতকাল) শপথ গ্রহণ করেছেন। তাদের সবাইকে আমি অভিনন্দন জানাই। পুনর্গঠিত নির্বাচন কমিশন ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নির্বাচন কমিশনার হিসেবে একজন নারীকে নিয়োগ দেয়ায় আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটসের স্থায়ী পর্যবেক্ষক হলো বাংলাদেশ: স্বতন্ত্র সদস্য মো. আবদুল মতিনের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সক্রিয় কূটনৈতিক উদ্যোগের ফলশ্রুতিতে এ বছরের শুরুতে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম পুরনো বহুমুখী আঞ্চলিক সংস্থা ‘অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটসে’র (ওএএস) স্থায়ী পর্যবেক্ষকের মর্যাদা লাভ করেছে। ১৯৪৮ সালে গঠিত এই আঞ্চলিক সংস্থাটিতে উত্তর-দক্ষিণ-মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলের মোট ৩৫টি দেশের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওএএস’র স্থায়ী পর্যবেক্ষক হিসেবে অন্তর্ভুক্তি ‘ওএএস’ যুক্ত দেশসমূহের সঙ্গে বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অধিকতর সম্পৃক্ততা এবং সহযোগিতার দ্বার উন্মোচন করবে। একইসঙ্গে বিভিন্ন বহুপাক্ষিক বিষয়সমূহ যেমন- গণতন্ত্র, সন্ত্রাস নির্মূল, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার, বিনিয়োগ, বাণিজ্য, টেকসহ উন্নয়ন, শান্তি ও নিরাপত্তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের সঙ্গে বাংলাদেশ আরও নিবিড়ভাবে কাজ করতে পারবে। তিনি বলেন, জাতিসংঘের অনেক সদস্য রাষ্ট্রই এ সংস্থাটির সক্রিয় সদস্য এবং পর্যবেক্ষক হওয়ায় জাতিসংঘের প্লাটফর্মের বাইরে সদস্য রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে সম্পর্ক সুদৃঢ়করণের ক্ষেত্রে বিকল্প প্লাটফর্ম হিসেবে এই সংস্থাটিতে যোগদান ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। একইসঙ্গে স্থায়ী পর্যবেক্ষক হওয়ার কারণে বাংলাদেশ সংস্থাটির সব আলোচনা ও গুরুত্বপূর্ণ সভায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। শেখ হাসিনাকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর ধন্যবাদ: রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণবাহী মালয়েশিয়ার জাহাজটি ইয়াঙ্গুনে বিরূপ অভিজ্ঞতার পর বাংলাদেশে এসে চট্টগ্রাম বন্দরে ভেড়ার খবরে বাংলাদেশ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নজিব রাজাক। মঙ্গলবার ফেইসবুকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন তিনি। পরে ওই স্ট্যাটাস নিয়ে মালয়েশিয়ার পত্রিকায় প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। স্ট্যাটাসে নাজিব রাজাক লিখেছেন, রোহিঙ্গাদের জন্য দুই হাজার টন পণ্য নিয়ে নটিক্যাল আলিয়া বাংলাদেশে পৌঁছেছে। মালয়েশিয়ার স্বেচ্ছাসেবী ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন। ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশকে এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে, যিনি এর শুভসঙ্কেত দিলেন। জানা গেছে, গোলযোগপূর্ণ রাখাইন রাজ্যে নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গাদের জন্য খাবার ও জরুরি ত্রাণ নিয়ে এ মাসের শুরুর দিকে মালয়েশিয়ার জাহাজ নটিক্যাল আলিয়া মালয়েশিয়া থেকে রওনা হয়ে গত ৯ ফেব্রুয়ারি ইয়াঙ্গুনে পৌঁছালে বিক্ষোভের মুখে পড়ে। পরে ৫০০ টন খাবার ও ওষুধসহ বিভিন্ন সামগ্রী ইয়াঙ্গুনে সরবরাহের পর বাকি পণ্য নিয়ে জাহাজটি বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হয় এবং গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছায়। প্রসঙ্গত, গত অক্টোবরে মিয়ানমারের তিনটি সীমান্ত পোস্টে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’ হামলায় দেশটির ৯ সীমান্ত পুলিশের মৃত্যুর পর রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত জেলাগুলোতে শুরু হয় সেনাবাহিনীর দমন অভিযান। নিপীড়নের মুখে পালাতে থাকা রোহিঙ্গাদের ঢল নামে বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত চার মাসে প্রায় ৬৯ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। আর মালয়েশিয়া সরকার নিবন্ধিত ১ লাখ ৪৯ হাজার ৪৭৪ শরণার্থীর দেখভাল করছে, যাদের মধ্যে ৫৫ হাজার ৫৬৫ জনই রোহিঙ্গা মুসলমান। বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারের নকশা অনুমোদন: রাজশাহীতে নির্মিতব্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটারের স্থাপত্য নকশা ও মডেলের অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার সকালে রাজধানীতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই অনুমোদন দেয়া হয় বলে সাংবাদিকদের জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। রাজশাহীতে এই নভোথিয়েটার নির্মাণের অনুমোদন দেয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর নকশার বিষয়ে কিছু পরামর্শ দেন। এর আগে বাংলাদেশ স্থাপত্য অধিদফতরের প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির এ স্থাপত্য নকশা ও মডেল উপস্থাপন করেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর সামনে ঢাকাস্থ আজিমপুর গার্লস স্কুল ও কলেজের প্রস্তাবিত ১০ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক কাম প্রশাসনিক ভবনের স্থাপত্য নকশাও উপস্থাপন করা হয়। বাংলাদেশ স্থাপত্য পরিদফতরের প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির এই স্থাপত্য নকশা উপস্থাপন করেন এবং প্রধানমন্ত্রীকে এই ভবনের বিস্তারিত পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত করেন। এ সময় শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আজিমপুর গার্লস স্কুল ও কলেজ কম্পাউন্ডে একটি খেলার মাঠ ও প্রয়োজনীয় স্থান রাখার পরামর্শ দেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব সুরাইয়া বেগম, শিক্ষা সচিব এমপি সোহরাব হোসেন ও আজিমপুর গার্লস স্কুল ও কলেজের প্রিন্সিপাল হাসিবুর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন। |