শিরোনাম: |
শ্রেণিকক্ষ সঙ্কটে খোলা আকাশের নিচে পাঠদান
|
দোহার-নবাবগঞ্জ (ঢাকা) সংবাদদাতা : ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার খানেপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষের অভাবে প্রায় ৭ থেকে ৮ বছর ধরে খোলা আকাশের নিচে লেখাপড়া করছে। বিদ্যালয়টির দশম শ্রেণির ক ও খ শাখার শ্রেণি কক্ষ দু’টোর অবস্থা অত্যন্ত করুণ। ভাঙাচুরা শ্রেণিকক্ষে ঝুঁকির মধ্যেই ক্লাস করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এছাড়া বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থীদের নেই কোনো বিজ্ঞানাগার। ফলে খোলা মাঠের মধ্যেই তাদের করতে হচ্ছে ব্যবহারিক ক্লাস। ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা জীবনের সূচনালগ্নেই প্রতিকুল পরিবেশের মুখোমুখি হওয়ায় স্কুলে গমনের প্রতি নিরুত্সাহিত হচ্ছেন বলে মনে করেন অভিভাবকরা।
বিদ্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৫ সালে খানেপুর গ্রামের আ. রহমান ভেনার কিশোর ছেলে তোতা মিয়া উপজেলার অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বান্দুরা হলিক্রস উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পেরে বিষ পানে আত্মহত্যা করে। এই ঘটনা এলাকার শিক্ষানুরাগী আনিস উদ্দিন আহমেদ মাস্টারের হূদয়কে ব্যাথিত করে। তিনি এলাকার সচেতন লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে খানেপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু করেন। মাত্র ৩ জন শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও দুুুই বছরের মধ্যে শিক্ষার্থী সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় দুইশতে। ১৯৮৪ সালে হঠাত্ নানা কারণে বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যালয়ের পাঠদান। নানা প্রতিকুলতা কাটিয়ে দুই বছর পর ১৯৮৬ সালে পুনরায় শুরু হয় শিক্ষা কার্যক্রম। এভাবে চলতে চলতে এখন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫ শতাধিকের মতো। ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ১০ শ্রেণি পর্যন্ত এর কার্যক্রম। ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি শ্রেণির রয়েছে দুটি করে শাখা। এছাড়া ৯ম ও ১০ শ্রেণির রয়েছে আলাদা তিনটি গ্রুপ। কিন্তু সেই তুলনায় নেই পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ। ১৯৯২ সালে কারিতাস একটি সেমিপাকা ভবন করে দেয়। ১৯৯৫ সালে তৈরি করা ৩ কক্ষ বিশিষ্ট মূল ভবনটি। যার দুই কক্ষ আবার ব্যবহার করা হয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য। ২০০১ সালে এমপিওভুক্ত হলেও করা হয়নি কোনো একাডেমিক ভবন। ২০১২ সালে ঢাকা জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ৩,৪৬,০০০ টাকা অনুদান দেয়া হয়। তখন জেলা পরিষদের অনুদান ও নিজেদের অর্থায়নে প্রায় সোয়া ৬ লাখ টাকা ব্যয় করে মূল ভবনের ওপরে টিনসেডের কয়েকটি কক্ষ করা হয়। এছাড়া পার্শ্ববর্তী একটি ভবনে দশম শ্রেণির ক্লাস করা হলেও ভবনটির অবস্থা অত্যান্ত নাজুক। যে কোনো সময় ভবনটি ভেঙে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। খোলা আকাশের নিচে প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থীকে স্কুল মাঠে পাঠদান করাচ্ছেন সহকারী শিক্ষক অনন্ত কুমার ব্যানার্জি। খোলা আকাশে নিচে ক্লাস করার কারণে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে পাঠদান করাতে পারছেন না। মাটিতে বসার কারণে পরনের জামা-কাপড়ে ধুলোবালি লেগে যাওয়ায় বিদ্যালয়ে আসতে চায় না শিক্ষার্থীরা। ফলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী আবার বিদ্যালয়ে আসাই ছেড়ে দিয়েছে। আবার অনেক অভিভাবক ভবন ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় তাদের ছেলেমেয়েকে স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। এ বিষয়ে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ বলেন, আমি অবগত আছি খানেপুর উচ্চ বিদ্যালয়টির ভবন সমস্যা রয়েছে। এতে তাদের শ্রেণি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। |