শিরোনাম: |
টিভি নাটকে নানা জটিলতা রয়েছে - শিরিন বকুল
|
শেখ রাজিয়া সূলতানা : শিরিন বকুল। নাট্য সংগঠন থিয়েটারের হয়ে কাজ শুরু মঞ্চে। এরপর তিনি আরণ্যক এবং নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন। অভিনয়ের এ দীর্ঘ পথচলায় কখনো থেমে থাকতে দেখা যায়নি শিরিন বকুলকে। এখনও পর্দায় সরব এ অভিনেত্রী। তবে ঠিক এ মুহূর্তে ব্যস্ততা মঞ্চ নাটকের কাজ নিয়ে। ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত। মঞ্চ, টিভি নাটক ও চলচ্চিত্র-তিন মাধ্যমেই ব্যস্ত সময় পার করছেন। ১৯৮৭ সালের দিকে তার অভিনীত প্রথম নাটক বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচার হলেও অভিনয়ে শিরিনের হাতেখড়ি ১৯৮৬ সালে।
আগামী মাসেই আসছে শিরিন বকুলের নতুন নাটক। আর সেজন্যই চলছে প্রতিদিন মহড়া। এ প্রসঙ্গে জনপ্রিয় এ অভিনেত্রীর সঙ্গে আলাপকালে তখনই নিজের ব্যস্ততা ও বিভিন্ন সমসাময়িক বিষয়ে বলেছেন তিনি। মঞ্চে নতুন নাটকটি প্রসঙ্গে শিরিন বকুল বলেন, এটি আবদুল্লাহ আল মামুনের একটি নাটক। নাম ‘তৃতীয় পুরুষ’। দুপুর থেকে এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে। মাত্রই ফ্রি হলাম। যেহেতু আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে নাটকটি মঞ্চে আসতে যাচ্ছে তাই তোড়জোড় করে মহড়ার কাজ চলছে। এদিকে সম্প্রতি মঞ্চ নাটকের কাজে ১৫ দিনের একটি সফর দিয়ে এসেছেন শিরিন বকুল। থিয়েটার প্রাক্তনীর হয়ে সেখানে বেশ কয়েকটি শোতে অংশ নিয়েছেন তিনি। বিশেষত ভারতের কয়েকটি রাজ্যে একাধিক শো করেছেন। যে কারণে সম্প্রতি শেষ হওয়া অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি জনপ্রিয় অভিনেত্রী। যেখানে শিরিন বকুল দাঁড়িয়েছিলেন আইন ও কল্যান সম্পাদক পদে। এ মুহূর্তে টিভিপর্দার ব্যস্ততা বিষয়ে জানতে চাইলে এ অভিনেত্রী বলেন, এখন খুব বেশি কাজ তো করছি না। ‘সোনার হরিণ’ নামের একটি ধারাবাহিক খুব সম্ভবত প্রচার শেষ হয়েছে। এছাড়া ‘ইন ডিসিপ্লিন’ ও ‘নিউটনের তৃতীয় সূত্র’ এবং বিটিভির একটি নাটকে অভিনয় করছি। আর দীপ্ত টিভির হাবিব মাসুদের পরিচালনায় একটি ধারাবাহিকে কাজ করেছি। এখনো অন এয়ারে আসেনি। টিভি পর্দায় কাজ কম হলেও এখন মঞ্চের কাজ বেশিই করছি। নিয়মিত শো করছি। শিরিন বকুল যখন মিডিয়ায় এসেছেন, নাটকে অভিনয় শুরু করেছিলেন তখনকার ওই সময়কে বলা হতো ড্রইং রুম মিডিয়ার ‘সোনালী সময়’। কালের বিবর্তনে সে সময় চলে গেছে অতল গহ্বরে। এখন আর টিভিতে দর্শক দেশীয় নাটক দেখেন না। নানা জটিলতায় দেশীয় টিভি মিডিয়ার আজ করুণ দশা। টিভি নাটকের বর্তমান এ অবস্থা নিয়ে শিরিন বকুল বলেন, নতুন করে কিছু বলার নেই। হচ্ছে, হওয়ার জন্য হচ্ছে। চলার জন্য চলছে। অসংখ্য চ্যানেল সম্প্রচারে আসছে। সেসব টিভির স্ক্রিন পূর্ণ করার জন্য নাটক, অনুষ্ঠান দরকার তাই নির্মাণ হচ্ছে। সে সঙ্গে প্রচারেও আসছে। এভাবেই চলবে। এর মাঝেই খুব ভালো কিছু যে হচ্ছে তা না। আবার একেবারে খারাপ হচ্ছে সেটাও নয়। একটা চলমান প্রক্রিয়ার মধ্যেই চলেছে বলে আমি মনে করি। নতুনরা কাজ করছে। তারা অনেকে ভালো করছে। অনেকেই এসে বেশিদিন স্থায়ী হতে পারছে না। যারা কাজটিকে ভালোবেসে অভিনয়ে আসছে তারাই টিকে থাকবে। মানুষ টিভি নিয়ে খুব একটা ভাবেন না। এটা তো ইরেজ মিডিয়া। একটা নাটক প্রচার হলে মানুষ কি বেশি মনে রাখতে পারেন? পারেন না। চলচ্চিত্র কিংবা মঞ্চ নাটক হলে সেটা ভিন্ন ব্যাপার। কিন্তু টিভি নাটকে নানান জটিলতা রয়েছে। এটা বাণিজ্যিক একটা ব্যাপার। এজেন্সির হস্তক্ষেপ চলে এসেছে। চ্যানেলগুলো তাদের দিয়ে নাটক বানাচ্ছে। চ্যানেল মালিকরা এজেন্সির হাতেই সব দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছেন। যার ফলে নাটকের মান দিনকে দিন নিচের দিকে নামতে নামতে একবারেই নেমে গেছে। শুধু তাই নয়, এজেন্সির বাইরে যারা টুকটাক কাজ করছেন তারাও ভালো বাজেট পাচ্ছেন না। সবমিলিয়ে বলতে পারেন টিভি নাটকে এখন একটা এলোমেলো অবস্থা যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে কদিন আগেই এফটিপিওর ব্যানারে একটি বড় আন্দোলন হতে দেখা গেছে। যেখানে দেশীয় টিভি অঙ্গনের ১৩টি সংগঠন এক হয়েছে। সেখানে দেখা গিয়েছিল শিরিন বকুলকেও। শিরিন বকুল বলেন, এটা কোনো আন্দোলনই হয়নি। সে আন্দোলন যৌক্তিক ছিল না। যার যার অবস্থান থেকে তাকেই লড়তে হবে। এখন অভিনয় শিল্পীদের প্ল্যাটফর্ম হয়েছে। শিগগিরই তাদের একটা নীতিমালা আসবে। নাটকের জন্য যা যা করার তার একটা পরিকল্পনা করা হবে। তাই বলছি, আন্দোলন করতে হলো এত মানুষের দরকার পড়ে না। আমার নিজের নাটকই তো দর্শক দেখেন না। বিদেশি সিরিয়ার বন্ধ কিংবা ভারতীয় চ্যানেল বন্ধ করে কি লাভ বলুন। আগে বাজেট ভালো হতে হবে। ভালো গল্প বাছাই করতে হবে। শিল্পী নির্বাচনে নির্মাতার স্বাধীনতা থাকতে হবে। তবেই ভালো কিছু সম্ভব বলে আমার মনে হয়। |