বুধবার ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০ পৌষ ১৪৩১
সুস্থতাই হোক জীবনের সঙ্গী
Published : Sunday, 12 February, 2017 at 6:00 AM, Count : 951

শর্করা এবং অন্যান্য খাদ্য
- উপাদানের অনুপাত                  
আমাদের খাওয়া-দাওয়ার একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে শর্করা জাতীয় খাবার বিশেষ করে ভাত। কার্বোহাইড্রেট বা শর্করাকে বলা হয় শরীরের জ্বালানি। আমরা যে পরিমাণে শর্করা গ্রহণ করি সেই অনুপাতে শারীরিক পরিশ্রম করি না। ফলে অতিরিক্ত শর্করা শরীরে ফ্যাট হিসেবে জমা হতে থাকে, যা মোটা হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। অনেকেই মনে করে থাকেন, ফ্যাট জাতীয় খাবার বাদ দিলে শরীরে আর ফ্যাট জমা হবে না। কিন্তু শরীরে মেদ জমার প্রধান কারণ হলো শরীরে প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ। অতিরিক্ত শর্করা গ্রহণ টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেকাংশে বৃদ্ধি করে থাকে। শর্করা জাতীয় খাবার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমরা স্বাস্থ্যগত অবস্থার বেশ উন্নতি করতে পারি। এর একটা সহজ উপায় হলো প্লেটে অনুপাত মতো খাদ্য নেয়া। খাবারের প্লেটে ভাত নেয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে ভাত যাতে অর্ধেক প্লেটের বেশি না হয়। বাকি অর্ধেক প্লেট আমিষ এবং অন্যান্য তরকারি দিয়ে পূর্ণ করতে হবে। সকালের নাস্তা এবং দুপুরের খাবারের চেয়ে রাতের খাবারে অবশ্যই কম পরিমাণে শর্করা গ্রহণ করতে হবে।

- সঠিক সময়ে খাদ্য গ্রহণ                  
খাদ্য গ্রহণের সময় ও পরিমাণ সম্পর্কে একটা প্রবাদ প্রচলিত আছে- ‘সকালে খাও রাজার মতো, দুপুরে খাও রাজপুত্রের মতো আর রাতে খাও ভিখারির মতো!’ খুবই ভালো উপদেশ! কিন্তু বেশিরভাগ মানুষের খাওয়া-দাওয়ার অভ্যাস এর ঠিক উল্টো। সকালে অফিসের জন্য তাড়াহুড়া করতে গিয়ে আমরা অনেকেই ঠিকমতো নাস্তা না করেই বের হয়ে যাই। দিনের শুরুতে শরীরের এনার্জির জন্য সকালের নাস্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফলে দিনের অনেকটা সময় আমরা এনার্জি সঙ্কটে ভুগে থাকি। দুপুরের খাবার দাবার অনেকেই যত্ন নিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে খেলেও আমরা সবচেয়ে বেশি পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ করে থাকি রাতে। আর খাওয়া শেষ করেই নাক ডেকে ঘুম! ফলে রাতের খাবারে যেই ক্যালরিটুকু আমরা গ্রহণ করি তা আর খরচ করা হয়ে উঠে না। ফলাফল-বাড়তি মেদ, অতিরিক্ত ওজন ইত্যাদি। আসুন ‘রাজকীয় ব্রেকফাস্টের’ অভ্যাস তৈরি করি, রাতে ৮টার ভেতর হালকা করে ডিনার শেষ করে ফেলি, সুস্থ থাকি।

- ডায়েট প্ল্যান তৈরি করা                  
আমরা চাইলেই প্রতিদিন আমাদের কত ক্যালরি খরচ হয় তার একটা তালিকা তৈরি করে ফেলতে পারি। ক্যালরি ক্যালকুলেটর এখন অনলাইনেই পাওয়া যায়। উচ্চতা, ওজন এবং শারীরিক পরিশ্রমের বিবরণ ইনপুট দিলেই আপনার প্রতিদিনের ক্যালরি খরচ সহজেই জানতে পারবেন। এটার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিদিনের ক্যালরি এবং পুষ্টিগুণের বিচারে কোন বেলা কি খাদ্য গ্রহণ করতে হবে তার একটা তালিকা তৈরি করে ফেলা যায়। ডায়েট প্ল্যান করলে খাবারের পুষ্টিগুণ এবং ক্যালরি গ্রহণ সহজেই হিসেবে রাখা যায়। এটা নিয়ে বাড়তি টেনশন থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব হয়।

- মিষ্টি এবং চিনি                  
আমাদের অনেকেরই মিষ্টি জাতীয় খাবারের প্রতি বাড়তি আকর্ষণ আছে। চিনি শরীরে প্রবেশ করার পর তা হজম করার জন্য ইনসুলিন নির্গত হয়। রক্তে যতক্ষণ ইনসুলিনের মাত্রা বেশি থাকে ততক্ষণ শরীরে জমে থাকা মেদ ভাঙে না। এছাড়াও দীর্ঘদিন অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাদ্য গ্রহণের ফলে শরীরে ইনসুলিন সঠিকভাবে কাজ করে না। এটা ডায়াবেটিসের অন্যতম প্রধান কারণ। অতিরিক্ত শর্করা জাতীয় খাবারও শরীরে একইভাবে কাজ করে। কারণ শর্করা হজম হয়ে তা শরীরের ব্যবহারের জন্য চিনিতে রূপান্তরিত হয়। তাই মিষ্টি জাতীয় জিনিস পরিমিত মাত্রায় খেতে হবে। চা-কফির সঙ্গে অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করলে এই ব্যাপারে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

- ফাস্টফুড                  
ব্যস্ততার কারণে আমাদের অনেক সময়ই বাইরে খাওয়া-দাওয়া করতে হয়। আর বাইরে খাওয়া বলতে অনেকেই বুঝে থাকেন ফাস্টফুড খাওয়াকে। ফাস্টফুড আইটেমগুলো বিভিন্ন দিক দিয়েই শরীরের অনেক ক্ষতি করে থাকে। বেশিরভাগ ফাস্টফুডেই অনেক বেশি চিনি এবং সোডিয়াম থাকে। এগুলোতে পুষ্টিগুণ বলতে কিছু না থাকলেও ক্যালরির দিক দিয়ে অনেক উচ্চ। ফলে নিয়মিত ফাস্টফুড গ্রহণে উচ্চরক্তচাপ, কোলেস্টেরল বৃদ্ধি, মোটা হয়ে যাওয়া, ডায়বেটিসসহ আরও অনেক ধরনের স্বাস্থ্যগত জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। বাইরে যদি খাওয়াই লাগে তাহলে বেশি তেলে ভাজা অথবা অতিরিক্ত চিনি জাতীয় জিনিস না খাওয়াই উত্তম। আর নাস্তা হিসেবে ফাস্টফুডের বদলে ফল/সবজি খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করা গেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে।

- কোমল পানীয়                  
কোল্ড ড্রিংক্স আমাদের অনেকেরই খুব প্রিয়। সারাদিনে কয়েক লিটার কোল্ড ড্রিংক্স পান করেন এমন লোকের অভাব নেই। আমাদের সবার প্রিয় কোমল পানীয় বিভিন্নভাবে আমাদের স্বাস্থ্যের গুরুতর ক্ষতি করছে। কোল্ড ড্রিংক্সে থাকা অতিরিক্ত চিনি এবং সোডিয়াম বিভিন্নভাবে আমাদের শরীরের ক্ষতি করে। কিডনি, হাড়ের ক্ষতি, হূদরোগ, ডায়াবেটিসসহ নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত ক্ষতির কারণ এই কোমল পানীয়। কোমল পানীয় গ্রহণ করা একদমই বাদ দিতে না পারলে এর পরিমাণ কমিয়ে দেয়া উচিত। কোমল পানীয়ের বদলে পানি পান করার অভ্যাস তৈরি করতে হবে।

- নিয়ম মেনে ডায়েট করুন                   
ডায়েটের ব্যাপারে সাধারণত আমাদের একটা ভুল ধারণা রয়েছে। আর সেটা হলো অনেকাংশেই খাওয়া-দাওয়া প্রায় বন্ধ করে দেয়া। তবে ওজন/মেদ-ভুড়ি বেড়ে না গেলে আমরা ডায়েট নিয়ে খুব একটা চিন্তা করি না। আমরা চিন্তা করি খাওয়া-দাওয়া একদম বন্ধ করে বসে থাকলেই আমাদের ওজন রাতারাতি কমে যাবে। অথচ আমরা জানিই না যে, খাদ্যগ্রহণের সময়, খাদ্য উপাদান, ক্যালরি গ্রহণ বনাম ক্যালরি খরচ ইত্যাদি অনেক বিষয়ে সঠিক ধারণা থাকা উচিত। এগুলো না থাকায় আমাদের ‘ডায়েট প্ল্যান’ ঠিকমতো কাজ করে না। সুস্থ থাকার জন্য ডায়েট করতে গিয়ে আমরা উল্টো হয়ে যাই অসুস্থ। সুতরাং সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য সঠিক নিয়মে খাদ্য গ্রহণ করাই ডায়েট।

- পর্যাপ্ত পানি পান করা                  
পানির অপর নাম জীবন। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রতিদিন অন্তত আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পান করা উচিত। পর্যাপ্ত পানি পান অনেকভাবেই শরীরের জন্য উপকারী। পর্যাপ্ত পানি পান করলে কিডনি, পরিপাকতন্ত্রসহ শরীরের ভেতরের অঙ্গ সতেজ থাকে। শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের হওয়া, হজমে সহায়তা করা, ওজন কমাতে সাহায্য করাসহ আরও অনেক উপকারী দিক আছে। পানি পান শুরু হোক ভোরবেলা থেকেই। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে দুই গ্লাস পানি পান করা উচিত। এছাড়া সারাদিন ঠিকভাবে পানি পান করা হচ্ছে কি-না তা খেয়াল রাখা উচিত। ব্যস্ততা জীবনের অপরিহার্য অংশ। কিন্তু তা অবশ্যই স্বাস্থ্যকে বাদ দিয়ে নয়। ব্যস্ত জীবনে নিজেদের স্বাস্থ্যের প্রতি একটু যত্নবান হলেই আমরা বেঁচে থাকতে পারি সুস্থ ও সুন্দরভাবে।

- স্বাস্থ্যকথন প্রতিবেদক



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft