শিরোনাম: |
অনলাইন ব্যবসায়ও এগিয়ে নারীরা
|
বাংলাদেশের নারীরাও বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। রাজনীতি, সাংবাদিকতা, আইন পেশা ও সামাজিক কর্মকাণ্ডসহ নানা অঙ্গনে এ দেশের নারীরা আজ মডেল। সম্প্রতি অনলাইন ব্যবসা-বাণিজ্যেও নারীদের অগ্রণী ভূমিকা লক্ষণীয় ।
জানা গেছে, দেশের অসংখ্য নারী ইতোমধ্যে অনলাইন ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে অন্যান্য সাধারণ ব্যবসার ন্যায় এ ব্যবসাতেও সফলতা লাভ করছে। যদিও অনলাইন ব্যবসা বা ই-কমার্সের ধারণাটি আমাদের দেশে খুব একটা বেশি দিনের নয়। তারপরেও যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে অনলাইনের মাধ্যমে কেনাকাটার প্রতি জনগণের ঝোঁক দিনে দিনে বাড়ছে। আর এ বিষয়টিকে একটি ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখছেন অনলাইন ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্তরা। তারা বলছেন, দেশে অনলাইনে ব্যবসা-বাণিজ্য চালু হওয়ার ফলে অনেক ক্ষেত্রেই এখন আর জনগণকে কষ্ট করতে হচ্ছে না। সময় ব্যয় করে যানজট ঠেলে এবং যানবাহনের ভাড়া দিয়ে মার্কেটে জিনিসপত্রও কিনতে যেতে হচ্ছে না। বরং জনগণ বা ক্রেতা এখন ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে তার পছন্দের জিনিস অর্ডার করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কিনতে পারছেন। এ ক্ষেত্রে বিল পরিশোধে ঝামেলাও অনলাইনের মাধ্যমেই ঘরে বসে করতে পারছেন। অনলাইন ব্যবসা সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন জানান, তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে জীবন-জীবিকার জন্য নারীদের এখন অন্যের ওপর নিভর্রশীল হওয়ার কোনোই কারণ নেই। চাইলে নারীরা ঘরে বসেই ব্যবসা- বাণিজ্য চালিয়ে যেতে পারেন। অনলাইন ব্যবসা-বাণিজ্য মানুষের জীবনকে স্বাচ্ছন্দ্যময় ও সহজ করে তুলছে বিধায় নারীরা এ সেক্টরে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। বিপণি অনলাইন মার্কেটিংয়ের পরিচালক হারুন অর রসিদ বলেন, দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি, ধৈর্য, সঠিক পরিকল্পনা আর মেধা থাকলে এখন নারীরা ঘরে বসেই অনলাইন ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে সহজেই সুপ্রতিষ্ঠিত হতে পারেন। এমনকি হতে পারেন সফল উদ্যেক্তাও। দেশের অসংখ্য নারী অনলাইন ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সফলতা লাভ করছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। অনলাইন ব্যবসার প্রতি নারীদের আগ্রহী হয়ে ওঠার কারণ প্রসঙ্গে বিপণি অনলাইন মার্কেটিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মইন উদ্দিন জানান, নারীরা সব সময় ঝামেলা মুক্ত এবং স্বাধীন কাজ করতে ভালোবাসেন। নিয়ম মেনে চাকরি করাটা আমার মনে হয় নারীরা দাসত্বের একরকম ভার্সন বলে মনে করেন। সে কারণে অনলাইন ব্যবসায় নারীদের পদচারণা বেশিই লক্ষণীয়। অনলাইন ব্যবসার ভবিষ্যত্সহ নানা দিক চিন্তা-ভাবনা করে শেষপর্যন্ত শারমিন আক্তার অনলাইন ব্যবসার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং ফেসবুকের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ঐধঢ়ঢ়ুসড়স ইউ’- নামক অনলাইন শপ। তার সাথে কথা প্রসঙ্গে জানা গেছে, তিনি তার এই অনলাইন শপের জন্য নানা ধরনের শাড়ি-কাপড়, পোশাক-পরিচ্ছদ, খেলনা, প্রসাধনী, আর্টিফিসিয়াল গহনাসহ নানা জিনিস মূল্য, ভ্যাট ও কাস্টমচার্জ অনলাইনের মাধ্যমে পরিশোধপূর্বক বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অর্ডার দিয়ে আনেন। এরপর তিনি ওইসব জিনিসপত্রের ছবি তার এ অনলাইন শপের ওয়ালে (প্রচ্ছদে) পোস্ট করেন। তারপর অনলাইনে দর্শক-ক্রেতারা তার অনলাইন শপ থেকে ছবি দেখে পছন্দের ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাছাই করেন। এরপর বাছাইকৃত জিনিসপত্র কেনার জন্য অনলাইনের মাধ্যমে অর্ডার করেন। অর্ডার অনুযায়ী তিনি ক্রেতাদের কাছে অর্ডারকৃত জিনিসপত্র দ্রুততম সময়ের মধ্যে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্তা করেন। অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে সমস্যা বা চ্যালেঞ্জের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যবসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বা বিষয় হচ্ছে ক্রেতার নিকট থেকে বিশ্বস্ততা অর্জন করা-যা অনেকটাই কঠিন। তবে একবার বিশ্বস্ততা অর্জন করলে পরবর্তীতে কোনো সমস্যা হয় না, তখন বাকি পথটা চলা সহজ ও মসৃণ হয়। অনলাইন শপ কাদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী এ প্রশ্নের জবাবে শারমিন আক্তার জানান, স্কুল-কলেজ, ঘর-সংসার, ছেলেমেয়ে নিয়ে নানা কাজে যারা ব্যস্ত থাকেন, কাজের চাপে যারা কেনাকাটার জন্য সময় পান না, যাদের পক্ষে কষ্ট করে মার্কেটে যাওয়া সম্ভব হয় না এবং সর্বোপরি ঘরে বসে সহজেই যারা পছন্দের জিনিসপত্র ক্রয় করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন মূলত: তাদের জন্য অনলাইন শপ বিশেষভাবে উপকারী। দেশের নারী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সাবিনা পারভীন অনলাইন ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে আমাদের সমাজের নারীদের সম্পৃক্তার বিষয়ে বলেন, যদিও অনলাইনের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য করার বিষয়টি জনগণের নিকট অনেকটাই নতুন, তারপরেও অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার ন্যায় অনলাইন জগতে ব্যবসা করার ক্ষেত্রেও আমাদের দেশের নারীরা কোনোভাবেই পিছিয়ে নেই। বরং সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে সমান তালে। তিনি আরো বলেন, আমাদের সমাজে ‘নারী’ শব্দটিকে ইতিপূর্বে যেভাবে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হতো এখন আর সেভাবে দেখা হয় না। অবস্থা বদলেছে, বদলাচ্ছে। আবার ‘নারী’ নামক মানুষটিকে ইতিপূর্বে যেভাবে অবজ্ঞা করা হতো, যেভাবে অবমূল্যায়ন করা হতো; এখন কিন্তু আর সেই অবস্থা নেই। পরিস্থিতি বদলে গেছে। দেশকে সামনে দিকে এগিয়ে নিতে এবং সমাজ পরিবর্তনে পুরষের পাশাপাশি নারীর ভূমিকা অপরিসীম এবং পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এসব ক্ষেত্রে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে সফল হচ্ছেন। সাবিনা পারভীন বলেন, একজন নারী একটু সচেতন হলে, পরিবার-পরিজন থেকে একটু সহযোগিতা-সহমর্মিতা পেলে ওই নারীও যে তার জীবনের মোড় ও ভাগ্যের চাকা ইতিবাচকভাবে ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম, তার প্রমাণ মেলে দেশে অনলাইন ব্যবসা-বাণিজ্যে নিযুক্ত হাজারো নারীর সম্পৃক্ত হয়ে সফল হওয়ার ঘটনার মধ্য দিয়ে। - বর্তমান ডেস্ক |